ঢাকা: জয়ের জন্য সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার দরকার ছিল ১৮৫ রান, স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার দরকার ছিল ৭ উইকেট। দুই দলের হাতে ছিল পুরো একদিন।
শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসে ১১৭ রানে অলআউট হওয়ার পর মনে হয়েছিল খুব সহজেই প্রথম টেস্ট নিজেদের দখলে রাখতে চলেছে অজিরা। তবে, স্টিভেন স্মিথের দল ২০৩ রানে অলআউট হয়ে গেলে ম্যাচে ফেরার সুযোগ পায় লঙ্কানরা।
আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্বাগতিকরা দ্বিতীয় ইনিংসে সবক’টি উইকেট হারিয়ে তোলে ৩৫৩ রান। ফলে, উপ-মহাদেশের উইকেটে খুব সহজেই যে জিততে পারছে না অজিরা সেটি আরেকবার প্রমাণ হয়। জিততে হলে সফরকারীদের দুর্দান্ত কিছু করেই জিততে হবে-এমন পরিসংখ্যান নিয়ে শেষ দিন মাঠে নামে অজিরা। এশিয়ার উইকেট অজিদের জন্য অভিশপ্ত বলে যে প্রবাদ, তা টপকে যেতে তাদের সামনে টার্গেট দাঁড়ায় ২৬৮ রান।
চতুর্থ দিন শেষে অজিরা তিন উইকেট হারিয়ে তোলে ৮৩ রান। উপ-মহাদেশে চতুর্থ ইনিংসে ২০০ রান তাড়া করে অস্ট্রেলিয়া জিতেছে মাত্র একবারই। ২০০৭ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে অজিদের ফতুল্লা টেস্টটিই শুধু ব্যতিক্রম হয়ে রইলো।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাল্লেকেলে টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ক্রিকেট বিশ্বের নজর কাড়েন ২১ বছর বয়সী কুশল মেন্ডিস। ১৭৬ রানের অসাধারণ ইনিংসে বেশ কয়েকটি রেকর্ডও গড়েন উদীয়মান এ ব্যাটসম্যান। এই মাঠে টেস্টে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের মালিক এখন মেন্ডিস। ছাড়িয়ে গেছেন ইউনিস খানকে। গত বছরের জুলাইয়ে পাল্লেকেলে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অপরাজিত ১৭১ রানের ইনিংস উপহার দেন পাকিস্তানের ব্যাটিং জিনিয়াস। অজিদের বিপক্ষে সর্বোচ্চ স্কোরারের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানেও উঠেছেন মেন্ডিস। হোবার্টে ২০০৭ সালে কুমার সাঙ্গাকারার ১৯২ রানের ঝলমলে ইনিংসটি এখনো অক্ষত! শুধু তাই নয়, সাঙ্গাকারার পর দ্বিতীয় লঙ্কান ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি অজিদের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে দেড়শ বা তার বেশি রান করেছেন।
ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ টেস্টে এসে প্রথম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরির দেখা পান মেন্ডিস। এটিও জায়গা করে নেয় রেকর্ড বুকের পরিসংখ্যানে। শ্রীলঙ্কার সবচেয় কম বয়সী (২১ বছর ১৭৭ দিন) ব্যাটসম্যান হিসেবে অজিদের বিপক্ষে টেস্ট শতক হাঁকিয়েছেন। আগের কীর্তিটি ছিল কালুভিথারানার (২২ বছর ২৬৭ দিন)।
মেন্ডিসময় দ্বিতীয় ইনিংসে শ্রীলঙ্কার হয়ে দিনেশ চান্দিমাল ৪২, ধনঞ্জয় ডি সিলভা ৩৬ আর রঙ্গনা হেরাথ ৩৫ রান করেন। অজিদের হয়ে মিচেল স্টার্ক চারটি উইকেট দখল করেন। এছাড়া, দুটি করে উইকেট পান হ্যাজেলউড এবং নাথান লিওন।
২৬৮ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে অজি ওপেনার জো বার্নস ২৯ আর ডেভিড ওয়ার্নার ১ রান করে আগের দিনই বিদায় নেন। চতুর্থ দিন তিন নম্বরে নামা উসমান খাজা ১৮ রানে সাজঘরের পথ ধরেন। তবে, ২৬ রান নিয়ে দলপতি স্মিথ আর ৯ রান নিয়ে অ্যাডাম ভোজেস অপরাজিত থেকে পঞ্চম (শেষ দিন) মাঠে নামেন। তবে, লঙ্কান স্পিনার রঙ্গনা হেরাথের ঘূর্ণি জাদুতে ৫৫ রানে থামে স্মিথের ইনিংস। আর ১২ রানে বিদায় নেন ভোজেস। দু’জনকেই ফেরান প্রথম ইনিংসে চার উইকেট নেওয়া হেরাথ।
হেরাথের দিনে কম যাননি অভিষিক্ত চায়নাম্যান সান্দাকান। প্রথম ইনিংসে চার উইকেট লাভ করা এই বোলার অজিদের লেজ গুটিয়ে দিতে বড় ভূমিকা রাখেন। মাঝে মিশেল মার্শ ২৫ রান করে হেরাথের বলে এলবির ফাঁদে পড়েন। ইনজুরির কবলে পড়ে সিরিজ শেষ হয়ে যাওয়া স্টিভ ও’কেফি দলের প্রয়োজনে দশ নম্বরে নেমে ৯৮ বলে একটি বাউন্ডারিতে করেন ৪ রান। আর সাত নম্বরে নামা পিটার নেভিল নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে করেন ১১৫ বলে ৯ রান। নেভিল-ও’কেফি মিলে জুটি গড়েন মাত্র ৪ রানের, যেখানে তারা বল খেলেছেন ১৭৮টি।
লঙ্কানদের হয়ে হেরাথ ৫টি এবং সান্দাকান ৩টি উইকেট দখল করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৩ ঘণ্টা, ৩০ জুলাই ২০১৬
এমআরপি