কক্সবাজার থেকে: ক্রিকেট স্টেডিয়ামকে পুঁজি করে পর্যটনে এগিয়ে যাচ্ছে অনেক দেশই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কথাই ধরা যাক না।
এ বছরের মার্চে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের ধর্মশালার হিমাচল প্রদেশের পাহাড়ঘেরা স্টেডিয়াম দেখে মুগ্ধ হয়েছেন বিভিন্ন দেশের মানুষ। সাগরঘেঁষা শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ম্যাচ গড়ালে বাংলাদেশও এমন গর্ব করতে পারবে। সেদিন হয়তো বিদেশি পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় তলানিতে থাকবে না বাংলাদেশের নাম।
কক্সবাজারের লাবনী বিচ পয়েন্টে পরিত্যক্ত গলফ কোর্সটি এখন শেখ কামাল আন্তজার্তিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। ৪৮ একর জমির উপর নির্মিত এ স্টেডিয়ামে মূল মাঠের সঙ্গে রয়েছে দুটি একাডেমি মাঠ ও একটি প্যাভিলিয়ন। আছে ১৩টি মূল উইকেট, ১৮টি প্র্যাকটিস উইকেট।
সাগরঘেঁষা এ স্টেডিয়ামে অনেক আগে থেকেই আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের চিন্তা-ভাবনা করে আসছে বিসিবি। তবে এজন্য প্রয়োজন অবকাঠামোগত বেশ কিছু উন্নয়ন। আশার কথা হলো মিডিয়া সেন্টার, ডরমেটরি, একাডেমি ভবন, জিম, সুইমিংপুল নির্মাণে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) কাছে ১৪০ কোটি টাকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বিসিবি। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অনুমোদনের পর প্রকল্পটি পেয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদন, অপেক্ষায় এখন তা একনেকের অনুমোদনের।
চূড়ান্ত অনুমোদনের দুই বছরের মধ্যে কক্সবাজার স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনে আশাবাদী বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) গ্রাউন্ডস অ্যান্ড ফ্যাসিলিটিজ কমিটির ম্যানেজার সৈয়দ আব্দুল বাতেন। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি আগামী দুই বছরের মধ্যে এখানে আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করা সম্ভব হবে। স্টেডিয়ামের কাজ শুরুর জন্য ১৪০ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। টেলিভিশনে মানুষ যখন সাগরঘেঁষা স্টেডিয়াম দেখবেন তখন নিশ্চয়ই পর্যটকের সংখ্যাও বাড়বে এখানে। ’
মাঠ পেরিয়ে যেতে কমপ্লেক্সের দুই পাশে দুটি পুকুর। কিছুদিন পরই এগুলোর একটি সুইমিং পুলের রূপ ধারণ করবে। অন্যটিকে অবকাঠামো সুবিধা দিয়ে সাধারণ দর্শকদের জন্য ছেড়ে দেওয়া হবে। ম্যাচ চলাকালে সেখানে চলবে ছোট ছোট নৌকা। পুকুরের পাশে সারি সারি ৪০০ নারিকেল গাছের চারা লাগানো। মাঠের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে ছোট একটি গ্যালারি, দ্বিতীয় তলায় গ্যালারির আরও কিছু অংশ। আর তৃতীয় তলায় প্রেসিডেন্ট বক্স, প্রেসবক্স, কমেন্ট্রি বক্সসহ প্রয়োজনীয় কিছু কক্ষ। সাগরমুখী করেই গ্যালারিগুলো তৈরি করা হয়েছে। যেন খেলা দেখার পাশাপাশি সাগরের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। বাতাসে ঝাউবনের দোলও গ্যারারির দর্শকদের মুগ্ধ করার মতো।
ক্রীড়া কমপ্লেক্সে রূপ দিতে নেওয়া হয়েছে আরও বেশ কিছু পরিকল্পনা। যা বাস্তবায়ন হলে আগামী দুই বছরের মধ্যে মোস্তাফিজ-সাব্বির-সৌম্যদের পদচারণায় মুখর হবে ক্রিকেটের এ ভেন্যুটি।
যুব বিশ্বকাপে এ মাঠে গড়িয়েছে ১৯টি ম্যাচ। খেলেছেন ১৬টি দেশের ক্রিকেটাররা। ম্যাচগুলো টেলিভিশনে সম্প্রচার না হলেও সমুদ্রের গর্জন ও সৌন্দর্যের খবর মুখে মুখে ঠিকই ছড়িয়েছে বিশ্বে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) গ্রাউন্ডস অ্যান্ড ফ্যাসিলিটিজ কমিটির ম্যানেজার সৈয়দ আব্দুল বাতেন গর্ব করেই বলেন, ‘অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ১৬টি দেশের প্রায় সবাই এ মাঠে খেলেছে। মাঠের সুযোগ-সুবিধা ও সমুদ্রের সৌন্দর্যে মুগ্ধ তারা। তাদের মাধ্যমে বিশ্বের অনেকেই জানে বাংলাদেশে সমুদ্রের তীরে সুন্দর একটি স্টেডিয়াম আছে। ’
২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। বর্তমানে দেশের ১১ থেকে ১২ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পর্যটন শিল্পের ওপর ভিত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করছে। দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটাতে, বিদেশি পর্যটক টানার সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন নিশ্চয়ই খেলাধুলার বৈশ্বিক আসর।
বিশাল জলরাশির ঢেউ আছড়ে পড়ছে সমুদ্র সৈকতে আর তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে মোস্তাফিজ-মাশরাফিদের হাত থেকে ঝরছে অফ কাটার, ইয়র্কার আর এক একটি ইনসুইঙ্গিং ডেলিভারি। সমুদ্রের গর্জনের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে টাইগার সমর্থকদের গর্জনও। কক্সবাজারের মানুষের দীর্ঘদিনের এ স্বপ্ন এবার বুঝি বাস্তব হতে চলেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, ০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
এসকে/এমএমএস
**সিরিয়াস ক্রিকেটই খেলবেন রফিক
**ক্রিকেট না হলে ফুটবল খেলবেন আকরাম
**এক সঙ্গে হওয়াটাই গুরুত্বপূর্ন: দূর্জয়
**সাবেকদের অপেক্ষায় কক্সবাজার