ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

দীর্ঘ বিরতির প্রভাব বাংলাদেশের খেলায়

সাজ্জাদ খান, স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৬
দীর্ঘ বিরতির প্রভাব বাংলাদেশের খেলায় ছবি: শোয়েব মিথুন- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মিরপুর থেকে: ২০১৫ সাল জুড়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে সাফল্যের স্বর্ণশিখরে থাকা বাংলাদেশের জন্য বিরতিটা ছিল লম্বা সময়ের। প্রায় ১০ মাস পর ওয়ানডে ক্রিকেটে ফেরা বাংলাদেশ ছন্দ হারাতে পারে-এমন শঙ্কা ছিল আগে থেকেই।

এ নিয়ে বাংলাদেশ দলের অনুশীলন ক্যাম্পে থাকা প্রায় সব ক্রিকেটারের কাছেই ক্রীড়া সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল লম্বা বিরতির প্রসঙ্গ নিয়ে। উত্তরে নেতিবাচক কিছুই পাওয়া যায়নি।

ক্রিকেটাররা নেতিবাচক ভাবনা আসলে সামনে আনতে চাননি। কিন্তু বাস্তবতা হলো আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে খেলতে নেমেই দীর্ঘ বিরতির প্রভাবটা টের পেল মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। ২৬৬ রানের টার্গেট দিয়েও আফগানদের হারাতে নাভিঃশ্বাস উঠেছিল টাইগার ক্রিকেটারদের। শেষ দিকে তাসকিন আহমেদ বল হাতে জ্বলে না উঠলে হয়তো হারের গল্পই লেখা হতো।  
 
আইসিসির সহযোগী সদস্য দেশ আফগানদের বিপক্ষে ২৬৫ রানের লড়াই করার মতো পুঁজি গড়েও বেশ ঘাম ঝরিয়ে জিততে হয়েছে বাংলাদেশকে। শেষের নাটকীয়তার পর বাংলাদেশ ম্যাচ জিতেছে ৭ রানে। ম্যাচে জয় পেতে সামর্থ্যের পুরোটাই দিতে হয়েছে স্বাগতিক বোলারদের।

৪৭তম ওভারেও ম্যাচের সমীকরণ ছিল আফগানদের অনুকূলে। ৪৮ ও ৫০তম ওভারে তাসকিন আহমেদ আহমেদ চারটি উইকেট তুলে নিলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে টাইগার শিবির। ব্যাটিংয়ের পর বল হাতেও উজ্জল ছিলেন সাকিব আল হাসান। ৪৮ রানের ইনিংস খেলার পর ১০ ওভারে মাত্র ২৬ রান দিয়ে এ স্পিনার নেন দু’টি উইকেট।
 
আফগানদের বিপক্ষে সিরিজের শুরু থেকে আগ্রাসী ক্রিকেট খেলার মনোভাব দেখালেও মাঠে দেখা যায়নি এমনটি। শেষের চিত্রনাট্য বাংলাদেশের প্রতিকূলে গেলে চরম লজ্জা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হতো বাংলাদশেকে। শুরুতে বোলিং আক্রমনে তেমন ধার দেখা যায়নি। সেই সঙ্গে বাজে ফিল্ডিংয়ের মহড়ায় ম্যাচটি হাতছাড়া হওয়ার দশা হয়েছিল। শেষের নাটকীয়তায় ফলাফল বাংলাদেশের পক্ষে গেলেও হতাশ করার মতো অনেক কিছুই ছিল ম্যাচজুড়ে।  

২৬৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নামা আফগানদের ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই (নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফিরে তাসকিনের প্রথম বল) প্রথম স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা ইমরুল কায়েস ছাড়েন মোহাম্মদ শেহজাদের ক্যাচ। ব্যক্তিগত ১ রানে জীবন পাওয়া শেহজাদ পরে মাশরাফি বিন মর্তুজার শিকার হন ৩১ রান করে।

স্কোরবোর্ডে আফগানদের রান যখন তিন অঙ্ক (১০০) ছুঁয়েছে তখন পয়েন্টে দাঁড়ানো সেই ইমরুলের দুই পায়ের ফাঁক গলে বল যায় সীমানার বাইরে। সফরকারীদের রান যখন ১৩৩ তখন কাভারে সার্কেলের মধ্যে দাঁড়ানো সাব্বিরের হাত ফসকে সিঙ্গেল হওয়াটাও ছিল দৃষ্টিকটু।  

ম্যাচের শেষ ভাগেও আসে কয়েকটি সুযোগ। রহমত শাহ ও হাসমতউল্লাহ শাহিদীর দেড়শোর দিকে এগোতে থাকা জুটি ভাঙার সুযোগ মিস করেন মাহমুদউল্লাহ। ইনিংসের ৪০তম ওভারের শেষ বলে তাইজুল ইসলামের বলে সুইপ করতে গিয়ে লং অফে সীমানায় ক্যাচ উঠান ৬৩ রানে থাকা হাসমতউল্লাহ শাহিদী। ক্যাচ ফসকে যায় মাহমুদউল্লার হাত থেকে। পরে ৭২ রান করে ফেরেন এ ব্যাটসম্যান।
 
আফগান ইনিংস শুরুর প্রথম দিকে বল সীমানার ভেতর আটকে রাখার পরও বাউন্ডারির দঁড়িতে সাকিব আল হাসানের পা লাগিয়ে দেয়ার দৃশ্য ছিল চোখে লাগার মতো। সাকিবের করা ইনিংসের ৪৭তম ওভারের পঞ্চম বলে সফরকারি দলের অধিনায়ক আজগার স্টানিকজাইয়ে ক্যাচ ফেলেন উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিম। এমনসব ছোট-বড় ভুলের মাশুলই যেন মিরপুরে আজ দিতে যাচ্ছিলো বাংলাদেশ।  
 
ব্যাটিংয়েও তামিম ইকবাল ছাড়া কেউ উজ্জল ছিলেন না। ৩০ রানে তামিম জীবন পেয়ে সেঞ্চুরির আগেই মাঠ ছাড়েন সহজ ক্যাচ দিয়ে। ইনিংস বড় করার সুযোগ ছিল ইমরুল কায়েসের। ৩৭ রান করা ইমরুল তখন উইকেটে পুরোপুরি থিতু। তার উইলো থেকে ৬টি বাউন্ডারি ছিল দৃষ্টিনন্দন। সেই ইমরুলই কিনা মোহাম্মদ নবীর প্রথম ওভারের প্রথম বলটি বুঝতেই পারলেননা! লেগ স্টাম্পের উপর পিচ করা বল প্যাড গলিয়ে ভাঙলো স্টাম্প।  

বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে শুরুতেই হতাশ করেন সৌম্য সরকার। ২০১৫ সালে এ মিরপুরেই পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের নাকাল করা সৌম্য ফেরেন শুন্য রানে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (৬২) ও সাকিব আল হাসানের (৪৮) ইনিংসের মাঝে পথ দেখালেও স্লগ ওভারে ব্যর্থতা বাংলাদেশের। শেষ ১০ ওভারে বাংলাদেশের ইনিংসে যোগ হয় মাত্র ৬৯ রান। এজন্য হারাতে হয় ৭ উইকেট।
 
শুধু নিজেদের ভুল নয়, টাইগারদের এ ম্যাচে ঘাম ছোটার পেছনে ব্যাটিং-বোলিংয়ে আফগানদের দাপটকে এক কথায় ‘অসাধারণ’ বলাই যায়। তরুণ লেগস্পিনার রশিদ খানের বোলিং বৈচিত্র্যে চাপে থাকেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ১০ ওভারে মাত্র ৩৭ রান দিয়ে নেন মুশফিকুর রহিম ও সাব্বির রহমানের উইকেট। শেষ দিকে দ্রুত উইকেট তুলে দৌলত জাদরান লাগাম টেনে ধরেন বাংলাদেশের। এ বোলারের গুনে স্লগওভারে খুব বেশি রান তুলতে পারেনি স্বাগতিকরা।
 
এ ম্যাচে আফগানরা জিতলে নায়ক হতে পারতেন রহমত শাহ ও হাসমতউল্লাহ শাহিদী। তৃতীয় উইকেটে ‍জুটিতে এ দুই ব্যাটসম্যান ১৪৪ রান যোগ করে মাশরাফিদের সব হিসেব-নিকেশ যেন পাল্টে দেন। ৭২ রান করে ফেরেন হাসমতউল্লাহ, রহমত শাহ করেন ৭১ রান। এ দুই ব্যাটসম্যান আরেকটু উইকেটে থাকলে হয়তো ফতুল্লা স্মৃতি ভেসে আসতো মিরপুরে।

২০১৪ সালের এশিয়া কাপের আসরে বাংলাদেশকে ৩২ রানে হারিয়ে হোঁচট বাংলাদেশকে দিয়েছিল আফগানরা। আরেকবার আফগানরা টাইগারদের যেন মনে করিয়ে দিল, বাংলাদেশে আমরা লড়াই করতেই এসেছি। ২৮ সেপ্টেম্বর একই মাঠে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মুখোমুখি হবে দু’দল।

বাংলাদেশ সময়: ০০০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৬
এসকে/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।