মিরাজের খুলনার খালিশপুরের বাসা থেকে ফিরে: টিনের ছাউনি ঘর, বাঁশের বেড়া। সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে উঠোন ও ঘরে।
যেখানে মিরাজের বাবা রেন্ট-এ-কার চালক জালাল হোসেন, মা গৃহিণী মিনারা বেগম, একমাত্র বোন রুমানা আক্তার মিম্মাও বসবাস করেন। ক্রিকেট খেলার প্রতি চরম আগ্রহ থেকেই বিভিন্ন মাঠে, পাড়ার ভাইদের খেলার সময় গিয়ে হই-হুল্লোড় করতেন মিরাজ।
বাবা-মা তেমন ক্রিকেট না বুঝলেও ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেট পাগল ছিলেন মিরাজ। মাঝে মধ্যেই স্কুল পালিয়ে ক্রিকেট খেলতেন। সরকারি বিএল কলেজ মাঠ থেকে শুরু করে অলিগলিতে, ফুটপাতে ক্রিকেটে মজতে দেখা যেতো মিরাজকে।
দরিদ্র রেন্ট-এ-কার চালক বাবা জালাল হোসেনের সামর্থ্য ছিলো না ক্রিকেট খেলার সরঞ্জাম কিনে দেওয়ার। কিন্তু তাতে থেমে যাননি মিরাজ। স্থানীয় কোচদের সহযোগিতায় কঠোর অনুশীলনে তৈরি করেন নিজেকে। ক্রমান্বয়ে জায়গা করে নেন জাতীয় ক্রিকেট দলে। তার সুযোগ পেয়েই প্রমাণ করে দেন সক্ষমতা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের নায়ক বনে যান তিনি।
মিরাজের সাফল্যে তার পরিবার, স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, সহপাঠী এবং পাড়া প্রতিবেশীদের পাশাপাশি গোটা খুলনার মানুষও আনন্দে মেতেছেন। শুধুই কি খুলনা সারা বাংলাদেশ, এমনকি বিশ্ব মিডিয়ায় টিনের ঘর ও বাঁশের বেড়ার ঘরে বেড়ে ওঠা ছেলেটির সুনাম গাইছে।
রোববার (৩০ অক্টোবর) ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ডকে ১৬৪ রানেই গুঁড়িয়ে দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ। টাইগারদের ছুঁড়ে দেওয়া ২৭৩ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো করলেও মিরাজের বোলিং তোপে ক্রিজে দাঁড়াতে পারেননি ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা। ফলে সাকিব-মিরাজ-তামিমদের জয়টা ১০৮ রানের।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে এবারই প্রথমবারের মতো ইংলিশদের হারালো টাইগাররা। যার হাতে পরাস্ত ইংল্যান্ড সেই ছেলেটি খুলনার। তাইতো খুলনায় মিরাজকে নিয়ে এতো উল্লাস, এতো মাতামাতি, মিষ্টির ছড়াছড়ি, এতো আবেগ, এতো অনুভূতি।
মিরাজের প্রতিবেশী লে. (অব) এম এ সাত্তার সোমবার (৩১ অক্টোবর) সকালে বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকা টেস্ট জয়ের নায়ক মিরাজ বেড়ে উঠেছে আমাদের সামনেই। এর চেয়ে বেশি কি আনন্দ হতে পারে আমাদের কাছে।
আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, টিনের ছাউনি, বাঁশের বেড়ার ঘরে ৮-১০ বছর ধরে মিরাজরা ভাড়া থাকছে। তার বাবা রেন্ট-এ-কার চালক। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেট পাগল এ ছেলেটি ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের টেস্ট জয়ের মহানায়ক হবে তা ভাবতেও পারিনি। ক্রিকেটের সবচেয়ে পুরনো দল, সবচেয়ে অভিজাত ইতিহাসের। ক্রিকেটের জনক ইংল্যান্ডকেই হারিয়েছে মিরাজরা। এরচেয়ে খুশির খবর আর কি হতে পারে।
মিরাজের বাবা জালাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ছেলের এই সাফল্য, দেশের সাফল্য। মিরাজ যে স্বপ্ন নিয়ে খেলতে নেমেছে সে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
ছেলের ধারাবাহিক সাফল্যে তিনি সবচেয়ে বেশি খুশি। যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
মিরাজের সাবেক কোচ মো. শাহনেওয়াজ বলেন, সরকারি বিএল কলেজ মাঠ থেকে শুরু করে অলিগলিতে, ক্রিকেট খেলতো মিরাজ। অসম্ভব ভালো খেলতো। বিভিন্ন সময় তাই ওকে ভাড়ায় খেলতে নিয়ে যেতো। তখনই বুঝেছিলাম মিরাজ একদিন ক্রিকেট বিশ্বে জায়গা করে নেবে। আজ সে স্বপ্ন পূরণ হলো।
এদিকে টেস্ট জয়ের পর ক্রিকেট ভক্তরা মিরাজের বাবাকে শুভেচ্ছা জানাতে তার বাসায় ভিড় করছেন ফুল ও মিষ্টি নিয়ে। অনেকেই মিরাজের বাবার সঙ্গে ও বাসার সামনে ছবি তুলে ফেসবুকে দিচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৬
এমআরএম/জেডএস