ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

সমৃদ্ধ হচ্ছে আগামীর সাকিব-মুশফিক তৈরির পাইপলাইন

মহিবুর রহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৭
সমৃদ্ধ হচ্ছে আগামীর সাকিব-মুশফিক তৈরির পাইপলাইন সমৃদ্ধ হচ্ছে আগামীর সাকিব-মুশফিক তৈরীর পাইপলাইন/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ক্রীড়ার যে কোনো শাখায় টেকসই উন্নয়নের জন্য চাই সমৃদ্ধ পাইপলাইন, চাই চৌকস বয়সভিত্তিক দল। কি ক্রিকেট, কি ফুটবল। বয়সভিত্তিক দল ও পাইপলাইন যেন একই সুতোয় বোনা একটি মালা। কেননা বয়সভিত্তি‍ক দল চৌকস হলেই কেবল একটি শক্তিশালী পাইপলাইন মেলে। আর এই পাইপলাইন থেকেই বেরিয়ে আসে আগামীর নেতৃস্থানীয় এক একজন খেলোয়াড়। যেমনটি এসেছে আজকের মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক, মোস্তাফিজ, তাসকিনসহ বাংলাদেশের ক্রিকেটের উজ্জ্বল সব নক্ষত্ররা।

ক্রীড়াঙ্গনে এক সময়ে বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেয়া ফুটবলের আজকের এই দৈন্যদশার কারণ কি জানেন? তাদের পাইপলাইনে কোন প্লেয়ারই নেই। পক্ষান্তরে শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্ব ক্রিকেটে আজকে যে দাপুটে বাংলাদেশকে দেখছেন তাঁর পেছনে যে কারণটি মুখ্য সেটি হলো একটি প্রাণ প্রাচুর্যে ভরা ঈর্ষা করার মতো একটি সমৃদ্ধ পাইপলাইন।

আমাদের আজকের আলোচনার আলোচ্য বিষয় যেহেতু পাইপলাইন তাই আসুন জেনে নেই পাইপলাইন বলতে আমরা কি বুঝি? পাইপলাইন হলো একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একজন খেলোয়াড়কে একেবারে নিম্নতর স্তর বা বয়সভিত্তিক দল থেকে সর্বোচ্চ স্তর অর্থা‍ৎ জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের জন্য প্রস্তুত করা।

উদাহরণ হিসেবে ক্রিকেটের কথাই ধরা যাক। বাংলাদেশ ক্রিকেটের বয়সভিত্তিক দলসমূহ যেমন; অনূর্ধ্ব-১৪, ১৬ ও ১৮ দলের ভেতর থেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় বাছাইকৃত কয়েকজন প্লেয়ারদের প্রতি বছরই পাইপলাইনে নিয়ে আসা হয়। এরপর সেখানে তাদের জন্য ব্যবস্থা করা হয় বিশেষ বিশেষ কর্মসূচি ও প্রশিক্ষণের। আর এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই বয়সভিত্তিক দলের গন্ডি পার করে তারা নাম লেখায় জাতীয় পর্যায়ে।

বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্ত ও ক্রিকেট বোদ্ধাদের জন্য ভালো খবর হলো, টাইগার ক্রিকেটের এই পাইপলাইন নাকি আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটারদের জাতীয় পর্যায়ে আসার এই পথটি আরও শক্তিশালী করতে নাকি ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি কার্যক্রম হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। হ্যাঁ, বাংলানিউজকে দেওয়া সাক্ষা‍ৎকারে তেমন কিছুরই স্পষ্ট আভাস দিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের ন্যাশনাল গেমস ডেভপলমেন্ট ম্যানেজার নাজমুল আবেদীন ফাহিম।

সমৃদ্ধ হচ্ছে আগামীর সাকিব-মুশফিক তৈরীর পাইপলাইন/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম-ফাইল ফটো

‘গত আট-দশ বছরের বয়সভিত্তিক দলের সাথে যদি বর্তমানের তুলনা করি তাহলে দেখবো আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। বিশেষ করে, প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্রে আমাদের যে উন্নতি হয়েছে সেটা চোখে পড়ার মতো। জেলা পর্যায় থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত আমার মনে হয় সারা দেশের আনাচে কানাচে যেসব ক্রিকেটাররা জাতীয় পর্যায়ে খেলার স্বপ্ন দেখে তারা এখন অনেক বেশি ক্রিকেটের পেছনে সময় দেয় ও পরিশ্রম করে। ’

ফাহিম আরও বলেন, ‘এখন দেশের প্রায় প্রতিটি জেলাতেই ক্রিকেট বোর্ডের কোচ আছে, এরা সবাই দক্ষ। তাছাড়া এখন দেশের প্রতিটি জেলায় ক্রিকেট একাডেমির সংখ্যাও বেড়েছে। এখানে উন্নততর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। সঙ্গত কারণেই বয়সভিত্তিক ও জুনিয়র দল সবার জন্যই ক্রিকেটের প্রশিক্ষণে গতি এসেছে। একটি সত্য আমরা উপলব্ধি করেছি, এক সময়ে ক্রিকেট শুধু খেলার জন্যই খেলা হতো। তখন উপায় ছিল না কারণ ওই বোধটাও তখন ছিল না। তবে এখন সবাই বুঝতে পারে যে খেলার জন্য খেললেই হবে না, যদি সত্যিকারের প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে না পারি। ’

আন্তর্জাতিক মানের ভেন্যুতে ম্যাচ আয়োজনের ব্যাপারে জোর দেন ফাহিম, ‘আমরা এখন চেষ্টা করছি বয়সভিত্তিক জাতীয় পর্যায়ের খেলাগুলো ভালো মানের আন্তর্জাতিক মানের ভেন্যুতে খেলানোর। অ-১৮ দলের এখন তিনদিনের খেলা হচ্ছে এবং অ-১৪ ও ১৬ দল দুই দিন করে খেলছে। এই খেলাগুলোতে দেখেছি খেলোয়াড়েরা দারুণ পারফর্ম করেছে, বড় স্কোর করেছে। শুধু তাই নয়, দলের বিভিন্ন প্রয়োজনে, বিপদের সময় তারা অবদান রাখছে। আমার মনে হয় এই ব্যাপারগুলো ওদের মধ্যে তৈরী করতে পারাটা আমাদের বড় একটি অর্জন। ’

‘এটাই আমরা ওদের শেখাতে চাই যে একটা দলে একজন ভালো প্লেয়ারের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ যা ওরা এখন থেকেই শিখে বড় হচ্ছে। ভাল পারফর্ম করা, ভাল জিনিসগুলো সব ওদের এখনই শেখা হচ্ছে। কিভাবে ভ্রমন করতে হয়, কিভাবে অপরিচিত জায়গায় খেলতে হয়, অপরিচিত জায়গায় থাকতে হয়, অপরিচিত পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে হয় সেটা এখনই শিখছে। এক মাসের বেশি সময় ধরে ওরা ঘরের বাইরে থাকছে এবং সেখানে খেলছে। এই দিকগুলো আমরা দেখছি। ’-যোগ করেন ফাহিম।

এভাবেই এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট, এগিয়ে চলেছে দেশ। লাল-সবুজের ক্রিকেটকে সাফল্যের চূড়ায় নিয়ে যেতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড যে কর্মসূচিগুলো হাতে নিয়েছে এবং তার সঠিক বাস্তবায়ন করছে তাতে করে সেই দিন আর বেশি দূরে নয় যেদিন টাইগারদের হুঙ্কারে প্রকম্পিত হবে গোটা বিশ্বের ক্রিকাটাঙ্গন। যা ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে!

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৮ ঘণ্টা, ১৫ জানুয়ারি ২০১৭
এইচএল/এমআরএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।