ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

টাইগ্রেসদের ম্যাচ ফি মাত্র ৬০০ টাকা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৭
টাইগ্রেসদের ম্যাচ ফি মাত্র ৬০০ টাকা! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম (ফাইল ফটো)

বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট উইংয়ের চেয়ারম্যান এমএ আউয়াল চৌধুরী ভুলুর মুখ থেকে কথাটি শোনার পর কেমন অবাক লাগলো। সারাদিন রোদে পুড়ে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে একটি ম্যাচ খেলে নারী দলের সদস্যরা নাকি ৬০০ টাকা পান! আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাদের ম্যাচ ফি ১০০ ডলার!

আউয়াল চৌধুরী জানান, ‘ওদের ম্যাচ ফি আমরা ৬০০ টাকা করে দিচ্ছি। আগেতো কোন ম্যাচ ফি’ই ছিল না।

’ তার শেষ কথাটির অর্থ দাঁড়ায় নারী ক্রিকেটারদের প্রতি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড করুণা করছে। তা না হলে ম্যাচ ফি কেন পাবে না?

মাশরাফি-মুশফিক-সাকিব-তামিমদের সাথে মেয়েদের বৈষম্য কতটা বিস্তর! কেননা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অধীনে জাতীয় ক্রিকেট লিগের একটি ম্যাচ খেলে পুরুষ ক্রিকেটাররা পান ২৫ হাজার টাকা। বলবেন সেটা তো ৪ দিনের। আচ্ছা ৪ দিনেও যদি ২৫ হাজার টাকা হয় তাহলে একদিনে তার পরিমান দাঁড়ায় সাড়ে ৬ হাজার টাকা। অর্থাৎ মেয়েরা ছেলেদের ১০০ ভাগের এক ভাগ টাকা পান।

তবে পরিতাপের বিষয় হলো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যবধানটা আরও বিস্তর। কেননা এ বছর বিসিবি’র দেয়া নতুন অনুমোদনে ছেলেদের ওয়ানডেতে ম্যাচ ফি যেখানে দুই লাখ টাকা, সেখানে প্রমীলা দলের মাত্র ৮ হাজার টাকা।

বৈষম্য আছে বেতনেও। ছেলেদের ‘এ’ প্লাস ক্যাটাগরির মাসিক বেতন যেখানে ৪ লাখ টাকা, সেখানে মাস শেষে রুমানা-জাহানারা গ্রহণ করেন ৩০ হাজার টাকা।

কেন এমন বৈষম্য? গণমাধ্যমের ছুঁড়ে দেয়া এমন প্রশ্নের জবাবে ভুলুর দায়সারা জবাব, ‘আমাদের নারী দলের জন্য কোনো ফান্ড নেই। ছেলেদের জন্য যেমন বাজেট আছে মেয়েদের জন্য তেমন নেই। কেননা আইসিসি থেকে আমাদের মেয়েদের জন্য কোনো ফান্ড আসে না। যা পাই তা বোর্ডই দেয়। ’

নিজেদের অক্ষমতার কথা স্বীকার করে ভুলু আরও যোগ করেন, ‘আমরা বাজেট খুব একটা বাড়াতে পারি না। প্রতি বছরই ১০ ভাগ বাড়ে। ’ কি দুঃখজনক কথা। তার মানে আগে তাদের ম্যাচ ফি ছিল ৫৪০ টাকা!

তবে তার একটা কথা শুনে হয়তো বিভাগীয় দলগুলো আশ্বস্ত হতে পারে। আর সেটা হলো জাতীয় লিগে অংশগ্রহণ ফি। আগে যেখানে ৬০ হাজার টাকা ছিল, এখান সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ টাকায়।

তাতে করে কতটুকুইবা লাভবান হবে প্রমীলা ক্রিকেটাররা? মাশরাফি-সাকিব-তামিমদের পারফরমেন্সে বাংলাদেশের ক্রিকেট আজ যে উচ্চতায় পৌঁছেছে, সেখানে দাঁড়িয়ে নারীদের জন্য এমন নামমাত্র ভাতা বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ডের ভাবমূর্তিকে কি ম্লান করে না?

বিসিবি কর্তারা হয়তো বলবেন নারীরা আন্তর্জাতিক ম্যাচ জেতে না, তাই স্পন্সর পাই না, ফলে টাকাও সেই পরিমান দিতে পারি না। কিন্তু তাই বলে ৬০০ টাকা! তার চাইতে ভালো নারী ক্রিকেট বাদ দিয়ে দিন।

কেননা এখানে দেশের সম্মান জড়িত। হোক মেয়েরা জেতে না, তাহলে তারা যাতে করে জিততে পারে সেই ব্যবস্থা করেন। এদেশের ছেলে ক্রিকেট দল আজ যে পর্যায়ে এসেছে সেটতো আর এক দিনে হয়নি। মেয়েদের জন্যও সে ব্যবস্থা করা কি উচিৎ নয়?
 
তা না হলে দিনের পর দিন মেয়ে ক্রিকেটারদের প্রতি এমন বৈষম্যমূলক আচরণ আপনাদের উঁচু মাথাকে হেয় করে দেবে। সেই অপমান সইতে পারবেন তো?     
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৩ ঘণ্টা, ২৯ এপ্রিল ২০১৭
এইচএল/এমআরপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।