ছেলেটা হুট করে আউট হয়ে যায়; ভরসা নেই। বোলিংয়েও রান দেয় বেশি; ওভারে একটা করে ছয় তো খাবেই! সেসময় এসব কথা শুনতে হয়েছে প্রচুর, তবে তাই বলে এখনও?
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে সমালোচনা গত কয়েক মাসে উপরের দু’বাক্যের মধ্যেই ছিল কম-বেশি।
মাশরাফি বিন মর্তুজা বিভিন্ন সময় বলে থাকেন, ভরসা হারালে আর কিছু দেওয়ার থাকে না।
সেই ভরসাটাই কি মানুষজন হারাচ্ছিল না সাকিব থেকে? কতবার কত জয়ের নায়ক এই বাঁ হাতি যে আরও নতুন চমকও দিতে পারেন তা অনেকেই বসেছিলেন ভুলতে। কেউ কেউ বিকল্প খোঁজার ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন! প্রকৃতপক্ষে তার বিকল্প আদৌ কেউ আছেন? এর উত্তর সময়ই দেবে, তবে এক সময় মাথায় তুলে (বাংলাদেশের জান, বাংলাদেশের প্রাণ সাকিব আল হাসান- এও বলা হয়েছে তাকে) অন্য সময় পায়ে নামানোও কি সমর্থন!
চাই আর মাত্র ৩২টা রান (নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ১৭৬তম ম্যাচ খেলার পর বর্তমান রান ৪,৯৬৮)। এতেই তিনি দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডেতে পৌঁছে যাবেন পাঁচ হাজারি ক্লাবে। এছাড়া ২২৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক তিনি (প্রথম মাশরাফি)।
ব্যাটে-বলের সমান ছন্দের কারণে বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার তিনি; শুধু ওয়ানডে নয়- ক্রিকেটের সব ভার্সনেই।
মিস্টার সেভেনটি-ফাইভ টেস্টেও বাংলার গ্রেট। ৪৯ টেস্টে রান প্রায় সাড়ে তিন হাজার, উইকেট সংখ্যা ১৭৬। টি-টোয়েন্টিতেও কম যান না; মাগুরার এই সন্তান দেশের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে সব থেকে বেশি রান ও উইকেটের মালিক।
এছাড়া বাংলার ওয়ানডে ইতিহাসে সবচেয়ে বেশিবার ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছেন। শুক্রবারের (০৯ জুন) আগে যেটি ছিল ২০১৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সেই ম্যাচে ব্যাটিংয়ে ৪৮ রান করার পর বোলিংয়ে সংগ্রহ ২ উইকেট। ওই সিরিজেরই পরের ম্যাচে ৪৭ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন। এরপর যে ১৫টি ম্যাচে বোলিং করেছেন, তাতে মাত্র ১২ উইকেট। ক্যারিয়ার বোলিং গড় যেখানে ২৯.২৫, এই ১৫ ম্যাচে তা প্রায় ৫৭! ওয়ানডেতে উইকেটই সব নয়, মিতব্যয়ী বোলিংও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সাকিব নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি সত্য; ক্যারিয়ারে ওভারপ্রতি রান ৪.৪০। এই ১৫ ম্যাচে সাড়ে পাঁচের ওপর! তাতেই সব দোষ তার!জীবনে উত্থান-পতন থাকে। প্রতিদিন ভালো করাও সম্ভব নয়; ক্রিকেটের ক্ষেত্রে ফর্মের একটা বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। অথচ সেই খারাপ ফর্মে সাকিবকে শুনতে হলো ভর্ৎসনা! এমন খারাপ ফর্ম তো শচিন-পন্টিং-লারাদেরও গেছে।
মাশরাফি অধিনায়ক হওয়ার পর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, কোনো ক্রিকেটারই চান না খারাপ খেলতে। ভালোর জন্যই সবাই মাঠে নামে। দল হারলে কাছ থেকে সেই হার সহ্য করে ক্রিকেটারদেরও কষ্টও হয় সবচেয়ে বেশি। আর তাদের খারাপ দিনে ভক্ত, দর্শক, দেশবাসীর একটু সমর্থন যেন জীবন চলার শক্তি হিসেবে দাঁড়ায়। তবে সেই তারাই যখন প্রিয় ক্রিকেটারকে তার ভালো না করায় সমালোচনায় ভাসান তখন আর কিছুই বলার থাকে না।
সাকিব আল হাসানের খারাপ সময়ে তার পাশে থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা সময়ে নানা লেখা লিখেছেন স্ত্রী উম্মে শিশির। শুক্রবার ম্যাচ শেষে শিশির ফেসবুকে লিখেন, ব্যাপার না তুমি সবসময়েই ‘সুপার হিরো’। কেবল তুমিই জানো তোমার অবস্থান কোন পর্যায়ে।
ইংল্যান্ডের কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনও এখন জানে সাকিব কোন পর্যায়ের ক্রিকেটার। এখানে ইতিহাস সৃষ্টির প্রধান নায়কই তিনি। করেছেন ক্যারিয়ারের সপ্তম সেঞ্চুরি, রান ১১৪। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে গড়েন ২২৪ রানের জুটি। যা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির যেকোনো উইকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান। ২২৪’র ১০১ রানই এসেছে দৌড়ে (৮৩টি সিঙ্গেলস, ১৮টি ডাবলস)। সাকিবের সিঙ্গেলস-সংখ্যা ৪৩টি, মাহমুদউল্লাহর ৪০। দুজনই দুই রান নিয়েছেন নয়বার করে। ধীরে ধীরে কি করে ম্যাচে আধিপত্য বিস্তার করতে করতে পুরো ম্যাচই জয় করে ফেলা যায়- এটাই তার উপযুক্ত প্রমাণ বলে মনে করছেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরা।
সাকিব-রিয়াদে মুগ্ধ সৌরভ গাঙ্গুলী বলেছেন, এই জুটির ফুটেজ বাংলাদেশের তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য অবশ্যই দেখার বিষয়। চাপের মধ্যে কীভাবে জুটি গড়তে হয় এই দুইজন তা দারুণভাবেই দেখালেন। যা দারুণ শিক্ষণীয়।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভারতীয় শুভাকাঙ্ক্ষী গাঙ্গুলী
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৬ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৭
আইএ