ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

এই সাইফুদ্দিনের ফেরার অপেক্ষায় থাকুন

স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৭
এই সাইফুদ্দিনের ফেরার অপেক্ষায় থাকুন এই সাইফুদ্দিনের ফেরার অপেক্ষায় থাকুন

দুঃস্বপ্নের সফরে বাংলাদেশ শেষ টি-টোয়েন্টিতে হেরেছে বড় ব্যবধানেই। তাদের এই হারটা মূলত ‘কিলার’ মিলারের হাতেই। শূন্য রানে রুবেলের বলে মুশফিকের কাছ থেকে জীবন ফিরে পাওয়া ডেভিড মিলার ৩৬ বলে ৭টি চার আর ৯টি ছক্কায় করেন অপরাজিত ১০১ রান।

শূন্য রানে জীবন পেয়ে টি-টোয়েন্টির ইতিহাসে দ্রুততম শতকের মালিক মিলার। মিলারকে কেন ‘কিলার মিলার’ বলা হয়, বাংলাদেশের বিপক্ষে এই ম্যাচটিই তার উৎকৃষ্টতম উদাহরণ।

আর সেটা হাড়েহাড়ে টের পেয়েছেন ১ নভেম্বর ২১ বছরে পা রাখতে যাওয়া তরুণ তারকা মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন।

সাইফুদ্দিনের করা ১৯তম ওভারের প্রথম ৫ বলেই ৫টি ছক্কা হাঁকান মিলার। শেষ বলে সিঙ্গেল নেন তিনি। শেষ ওভারে সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ৩৫ বলে। যা টি-টোয়েন্টির আন্তর্জাতিক ম্যাচে দ্রুততম। এর আগে ৪৫ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার রিচার্ড লেভি। ৪৬ বলে করেছিলেন ডু প্লেসিস।  

অনেকদিন ধরেই বাংলাদেশের ক্রিকেটে পেস অলরাউন্ডার ছিল না। সাইফুদ্দিনের মাঝেই সেই স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছে টাইগাররা। অনূর্ধ্ব-১৯ পেরিয়ে এই পেস অলরাউন্ডার বিপিএল মাতিয়েছেন। নিয়মিত খেলার স্বপ্ন দেখছেন জাতীয় দলে। কিন্তু, জাতীয় দলের জার্সিতে একটি ওয়ানডে আর চারটি টি-টোয়েন্টি খেলা ফেনীর উঠতি তারকার ওপর দিয়ে যে ঝড় বয়ে গেছে, সেটা তার মনোজগতকে নাড়িয়ে দিতেই পারে।

এই সাইফুদ্দিনের ফেরার অপেক্ষায় থাকুনআনাড়ি ক্রিকেট বোদ্ধারা হয়তো সাইফুদ্দিনকে দোষারোপ করতে পারছেন, কিন্তু দোষ চাপানোর আগে তাদের ভেবে দেখা দরকার ২১ বছরে পা না দিতেই বিশ্ব ক্রিকেটের সেরা ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে লড়ছেন সাইফুদ্দিন। এই তরুণই যে একদিন বাংলাদেশের বেন স্টোকস কিংবা স্টুয়ার্ট ব্রড হবেন না, তা কে বলতে পারে?

ক্যারিয়ারের শুরুতে এমন ধাক্কা তরুণ এই বোলার সামলে উঠতে পারবেন কি না তা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু, এই ধাক্কা সামলে ওঠার তাগিদ দিয়েছেন স্বয়ং মিলারই। সাইফুদ্দিনকে টানা পাঁচ ছয় হাঁকিয়ে মাঠ ছাড়ার আগে বলে গেছেন, ‘টেক ইট ইজি’।
 
সাইফুদ্দিনের সামনে বর্তমান ক্রিকেটের মহাতারকা বেন স্টোকস আর স্টুয়ার্ট ব্রডের উদাহরণ টানা যেতে পারে। ২০১৬ সালের ৩ এপ্রিল কলকাতায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে শেষ ওভারে জয়ের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের যখন ১৯ রান লাগে তখন বোলিং আক্রমণে আসেন ইংল্যান্ডের বর্তমান সেনসেশন বেন স্টোকস। ব্যাটিংয়ে ছিলেন কার্লোস ব্রাথওয়েইট। সে সময় ২৫ বছরে পা রাখা স্টোকস প্রথম ৪ বলে ৪টা ছয় হজম করেন। দুই বল হাতে রেখেই দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন শিরোপা জিতে নেয় ক্যারিবীয়ানরা। স্টোকস কিন্তু হারিয়ে যাননি। সমালোচনায় কান দিলে হয়তো হারিয়েই যেতেন। এখন তিনি বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম পেস বোলিং অলরাউন্ডার।

ম্যাচে নিজের প্রথম ওভারে ৪ রান দিয়ে সাইফুদ্দিন তুলে নিয়েছিলেন বিশ্বসেরা মারকুটে ব্যাটসম্যান ডি ভিলিয়ার্সের উইকেট। নিজের দ্বিতীয় ওভারে দিয়েছিলেন ১২ রান। প্রথম দুই ওভারে ১৬ রান দিয়ে বাউন্ডারি হজম করেছিলেন মাত্র একটি। নিঃসন্দেহে তখন পর্যন্ত টাইগার অধিনায়ক সাকিবের চিন্তাতে ছিল এই পেসারের নামটি। সাইফুদ্দিনকে আবারো আক্রমণে আনেন ম্যাচের ১৭তম ওভারে। নিজের তৃতীয় ওভারে আক্রমণে এসে প্রথম দুই বলে ডট দিয়ে হাশিম আমলাকে চাপের মধ্যে রাখেন। তৃতীয় বলেই ফেরান ৮৫ রান করা হাশিম আমলাকে। পরের তিন বলে একটি চার সহ দেন ৬ রান। ডেথ ওভারে বোলিং সহ সাইফুদ্দিনের নামের পাশে তখন ৩ ওভারে ২২ রান খরচায় দুটি উইকেট।

টাইগার দলপতি তাই এই সাইফুদ্দিনকেই বেছে নিয়েছিলেন ম্যাচের ১৯তম ওভারে। সেই ওভারেই জেগে ওঠলেন ‘কিলার মিলার’। ৫টি ছক্কা আর শেষ বলে ১ রান নিয়ে করলেন ৩১ রান। যা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির ইতিহাসে সবচেয়ে খরুচে ওভারের তালিকার তিন নম্বর। ম্যাচে বোলিং পরিসংখ্যান ৪ ওভারে ৫৩ রান দিয়ে ২ উইকেট। শেষ ওভারে এমন পিটুনি খেয়েও কিন্তু সাইফুদ্দিন তালগোল পাকিয়ে বাজে ডেলিভারি দেননি।

এবার দেখা যাক, সাইফুদ্দিনের বয়সে (২১ বছর) কি করেছিলেন ইংল্যান্ডের পেসার স্টুয়ার্ট ব্রড। ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ২১তম ম্যাচে ডারবানে ভারতের বিপক্ষে খেলতে নেমেছিল ইংল্যান্ড। ভারতের যুবরাজ সিংয়ের হাতে ৬ বলে ৬টি ছক্কা হজম করতে হয়েছিল ব্রডকে। সেটা টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে খরুচে ওভার। যুবরাজের হাতে এভাবে নাস্তানাবুদ হলেও কিন্তু সে সময়কার ২১ বছরের তরুণ ব্রড হারিয়ে যাননি। নিজেকে দেশের অন্যতম সেরা বোলার হিসেবে প্রমাণ করেছেন।

মিলারের ‘টেক ইট ইজি’ মাথায় রাখলে পেশাদারী ক্রিকেটে সাইফুদ্দিন নিজেকে ফিরে পাবেন। হয়তো বাংলাদেশের স্টুয়ার্ট ব্রড কিংবা বিন স্টোকস হয়ে নিজের প্রমাণ দেবেন। আনাড়ি ক্রিকেটপ্রেমী না হলে সাইফুদ্দিনের জেগে ওঠার অপেক্ষায় থাকবেন কোটি কোটি টাইগারপ্রেমী।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, ৩০ অক্টোবর ২০১৭
এমআরপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।