১৭ বছরের এই ইতিহাসের শুরুটা যারা করেছিলেন, তাদের প্রত্যেকেই বিদায় নিয়েছেন ক্রিকেট থেকে। আর তাদের ওই শুরুর ওপর দাঁড়িয়েই এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট।
২০০০ সালের ১০ নভেম্বর থেকে ২০১৭ সালের ১০ নভেম্বর-এই ১৭ বছরে বাংলাদেশ টেস্ট খেলেছে ১০৪টি। ১৮ বছরে পা রাখলো টাইগাররা। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশ সমীহ জাগানো অবস্থানে যেতে পারলেও টেস্টে এখনও তা পুরোপুরি সম্ভব হয়নি৷ তবে সাদা পোশাকে বারবার বিশ্বকে জানান দিয়েছে নিজেদের ক্ষমতার, রেকর্ড গড়ে নিজেদের জাত চিনিয়েছে টাইগাররা৷ স্মরণীয় করে রাখতে জিতেছে নিজেদের খেলা শততম টেস্টটিও৷
২০০০ সালের ১০ নভেম্বর ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ৷ প্রতিপক্ষ ছিল ভারত৷ আগে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ বিশ্ব ক্রিকেটকে চমকে দিয়ে অভিষেক ইনিংসেই করেছিল ৪০০ রান। টেস্ট অভিষেকে দলীয় সর্বোচ্চ রানের স্কোরটা জিম্বাবুয়ের (৪৫৬) রান। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহটা বাংলাদেশের (৪০০)। বাংলাদেশের পক্ষে আমিনুল ইসলাম বুলবুল করেছিলেন ১৪৫ রান৷ কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে সেই সাফল্য ধরে রাখা যায়নি৷ ফলে মাত্র ৯১ রানেই গুটিয়ে গিয়েছিল টেস্ট ক্রিকেটের আঁতুর ঘরে থাকা দলটি৷ সৌরভ গাঙ্গুলির সঙ্গে প্রথম টেস্টে টস করতে নেমেছিলেন বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়।
টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম দল: শাহরিয়ার হোসেন, মেহরাব হোসেন, হাবিবুল বাশার, আমিনুল ইসলাম, আকরাম খান, নাঈমুর রহমান (অধিনায়ক), আল-শাহরিয়ার, খালেদ মাসুদ (উইকেটরক্ষক), মোহাম্মদ রফিক, হাসিবুল হোসেন, বিকাশ রঞ্জন দাশ।
যদিও বাংলাদেশের ক্রিকেটে জাগরণের সূচনাটা ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জয়ের মাধ্যমে। আইসিসি ট্রফি জিতেই ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে খেলতে যায় বাংলাদেশ। সেখানে পাকিস্তানকে হারিয়ে টেস্ট প্রাপ্তির দাবিটা জোরালো করে টাইগাররা। তারই ধারাবাহিকতায় ২০০০ সালের জুনে আইসিসির পূর্ণ সদস্যপদ লাভ করে বাংলাদেশ।
এরপর থেকে গত ১৭ বছরে ১০৪টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ৷ এর মধ্যে ১০টি টেস্ট জিতলেও ৭৯টি টেস্ট ম্যাচ হেরেছে বাংলাদেশ। ১৫টি ম্যাচ ড্র করেছে। শ্রীলঙ্কায় কলম্বোর পি সারা ওভালের টেস্টটি ছিল টাইগারদের শততম টেস্ট৷ অভিষেকের ১৬ বছর ৪ মাস ৬ দিন পর বাংলাদেশ শততম টেস্ট খেলতে নেমেছিল৷ পরিসংখ্যান বলছে, টাইগাররাই সবচেয়ে কম সময়ে শততম টেস্ট খেলার সুযোগ পায়। অভিষেকের পর শ্রীলঙ্কার শততম টেস্ট খেলতে সময় লেগেছিল ১৮ বছর ৩ মাস ২৯ দিন৷
টেস্টে বাংলাদেশের রেকর্ড
মোহাম্মদ আশরাফুল: সবচেয়ে কম বয়সী টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান৷ ২০০১ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচে ব্যাট হাতে নেমে করেন ১১৪ রান৷ মাত্র ১৭ বছর ৬১ দিন বয়সে এই কীর্তি গড়েন তিনি।
এনামুল হক জুনিয়র: ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এক টেস্টে মাত্র ১৮ বছর ৪০ দিন বয়সে ১০ উইকেট নিয়েছিলেন এই বাঁহাতি স্পিনার। এত কম বয়সে ১০ উইকেট নেয়ার সাফল্য বিশ্বে আর কারও ছিল না।
আবুল হাসান: ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্টে দশম ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতে নেমে নিজের অভিষেকে ব্যাট হাতে ১১৩ রান করেন৷
সোহাগ গাজী: বিশ্বের প্রথম ক্রিকেটার যিনি এক ম্যাচে সেঞ্চুরির পাশাপাশি হ্যাটট্রিকও করেন৷ ২০১৩ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একই ম্যাচে সেঞ্চুরি করার পাশাপাশি তিনি হ্যাটট্রিক করেন।
মেহেদি হাসান মিরাজ: ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজে অভিষেক হয় তার। আর অভিষেক ম্যাচেই তুলে নেন ১৯ উইকেট৷ এর চেয়ে বেশি উইকেট নেয়া (অভিষেকে ও দুই টেস্টের সিরিজে) আর কোনো ক্রিকেটার বিশ্বে নেই৷
টেস্টে বাংলাদেশের কয়েকটি প্রথম
প্রথম টেস্ট ম্যাচ: ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ৷
প্রথম অধিনায়ক: প্রথম অধিনায়ক ছিলেন নাঈমুর রহমান দুর্জয়৷ টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
প্রথম রান: প্রথম রানটি এসেছিল শাহরিয়ার হোসেনের ব্যাট থেকে।
প্রথম বাউন্ডারি ও প্রথম ওভার বাউন্ডারি: শাহরিয়ার হোসেনের ব্যাট থেকেই আসে বাংলাদেশের প্রথম বাউন্ডারিটি আর আকরাম খানের ব্যাট থেকে আসে প্রথম ছক্কাটি।
প্রথম টেস্ট ফিফটি: প্রথম অর্ধশতকের মালিক হাবিবুল বাশার সুমন। অভিষেক টেস্টে ১১২ বলে ১০টি বাউন্ডারিতে তিনি করেছিলেন ৭১ রান।
প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি: প্রথম টেস্ট ম্যাচেই আমিনুল ইসলাম বুলবুল ১৪৫ রান করেছিলেন৷ তার ৫৩৫ মিনিটের দীর্ঘ এই ইনিংসে ছিল ১৭টি চারের মার। ৩৮০টি বল মোকাবেলা করে বুলবুল তার ইনিংসটি সাজান। তিনি ছিলেন ক্রিকেট ইতিহাসের তৃতীয় ক্রিকেটার, যিনি দেশের অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করেন।
আরও কিছু প্রথম
প্রথম বোলার: টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম বলটি করেছিলেন হাসিবুল হোসেন। অভিষেক টেস্টে তিনি প্রথম বলটি করেছিলেন ভারতের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান শিবশঙ্কর দাশকে।
প্রথম উইকেট: ভারতের শিবশঙ্কর দাশকে বোল্ড করেছিলেন নাঈমুর রহমান দুর্জয়।
প্রথম ৫ উইকেট: অভিষেক টেস্টে অধিনায়ক নাঈমুর রহমান তার অফ স্পিনে ৪৪.৩ ওভার থেকে ১৩২ রান খরচায় নিয়েছিলেন ৬ উইকেট। আর টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম পেসার হিসেবে ৫ উইকেট পেয়েছিলেন মঞ্জুরুল ইসলাম। ২০০১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বুলাওয়েতে ৬ উইকেট শিকার করেছিলেন ৮১ রানের বিনিময়ে।
প্রথম টেস্ট জয়: ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে ২২৬ রানে জিতেছিল বাংলাদেশ৷
প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়: ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজ জিতেছিল ১-০তে৷
বিদেশে একমাত্র সিরিজ জয়: ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজ ২-০তে জয়৷
প্রথম ১০০ উইকেট: টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম ১০০ উইকেট মোহাম্মদ রফিকের। এরপর এই কীর্তিতে যোগ দেন সাকিব আল হাসান।
১৭ বছরে আরও কিছু প্রাপ্তি
দলীয় সর্বোচ্চ রান: ১৯৬ ওভার ব্যাটিং করে ২০১৩ সালের মার্চে গলে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৬৩৮ রান৷
প্রথম ব্যক্তিগত হাজার রান: টেস্টে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম ব্যক্তিগত হাজার রান সংগ্রাহক হাবিবুল বাশার। ৫০ টেস্টের ক্যারিয়ারে ৩০.৮৭ গড়ে তার সংগ্রহ ৩০২৬ রান। ২৪টি ফিফটির বিপরীতে তার শতরান ৩টি।
প্রথম দ্বিশতক: ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০০ রান করেছিলেন মুশফিকুর রহিম৷
সেঞ্চুরি ও ১০ উইকেট: ২০১৪ সালে বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে সাকিব আল হাসান জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই সাফল্য পান৷
বাংলাদেশ সময়: ০১১০ ঘণ্টা, ১০ নভেম্বর ২০১৭
এমআরপি