ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

আইরিশ ক্রিকেটে রূপকথার টেস্ট মঞ্চায়ন

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৪ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৮
আইরিশ ক্রিকেটে রূপকথার টেস্ট মঞ্চায়ন সাদা পোশাকে আইরিশ দল/ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: আয়ারল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসে আজ এক ঐতিহাসিক দিন। ওয়ানডে স্ট্যাটাস পাওয়ার দীর্ঘ ১০ বছর সাদা পোশাকে অভিষেক হচ্ছে আইরিশ ক্রিকেট দলের। ক্রিকেট জগতে প্রায় তিনশ’ বছর পদচারণার পর টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছে আইরিশরা।

একসময়ের ‘পার্ট টাইমার’রা ১১তম টেস্ট দল হিসেবে শুক্রবার (১১ মে) পাকিস্তানের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টে মাঠে নামছে। বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায় মালাহাইডে মুখোমুখি হবে দুই দল।


 
ক্রিকেটে আইরিশরা মোটেই নতুন নয়। তাদের দেশের ক্রিকেটের প্রচলন সেই ১৭৩১ সাল থেকে। তবে স্বীকৃত ক্রিকেট খেলুড়ে দেশের তালিকায় তাদের স্থান হয় ১৯৯৩ সালে। ওই বছর ন্টারন্যাশাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) সহযোগী সদস্য হয় দেশটি। আইসিসি ট্রফি, ইউরোপীয় ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপ এবং আইসিসি আন্তঃমহাদেশীয় কাপে অংশ নিয়ে নিজেদের ক্রিকেট পথের যাত্রা শুরু করে দেশটি।
 
ওয়ানডে স্ট্যাটাস আরও অনেক পরে। ২০০৭ সালে প্রথম ওয়ানডে সিরিজ খেলার অনুমতি পাওয়ার পর থেকেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাদের উত্থান শুরু। আর ওয়ানডে স্ট্যাটাস পাওয়ার ঠিক দশ বছর পর আফগানিস্তানের সঙ্গে ২০১৭ সালে টেস্ট মর্যাদা অর্জন করে আয়ারল্যান্ড।
 
একসময় আয়ারল্যান্ড দলটি ছিল একঝাক ‘পার্ট টাইমার’ নিয়ে গঠিত। দলের সদস্যদের প্রায় সবাই অন্য পেশার পাশাপাশি শখের বসে ক্রিকেট খেলতেন। মাঠে অনুশীলনের যথেষ্ট সুযোগও পেতেন না তারা। ২০০৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়ে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ম্যাচ টাই দিয়ে শুরু। পরের ম্যাচে সবাইকে চমকে দিয়ে শক্তিশালী পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩ উইকেটের জয় তুলে নেয়। তখনও অপেশাদার ক্রিকেট দল আয়ারল্যান্ড।
 
সেই বিশ্বকাপে আইরিশ দলের অধিনায়কত্ব করা জনসন বলেন, ‘ওই জয়টা ছিল আমাদের কাছে অত্যন্ত স্পেশাল৷ তখন থেকে আমাদের জার্নিটা শুরু হয়েছিল৷ বাকি বিশ্ব তখন থেকেই আমাদের ক্রিকেট নেশন বলে জানে৷’
 
নিজেদের অভিষেক আসরেই সুপার এইটে উঠে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিয়ে রাখেন কেভিন ও’ব্রায়ানরা। সুপার এইটেও চমক জারি রাখেন আইরিশ ক্রিকেটাররা। এবার তাদের শিকার ওই বিশ্বকাপে দারুণ খেলতে থাকা বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে মাশরাফিদের ৭৪ রানে হারিয়ে দেন ট্রেন্ট জনসনরা।
 
এতোদিন পর্যন্ত পার্ট টাইমার হিসেবে খেলা আইরিশ দলের সদস্যদের দেশটির ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে কেন্দ্রীয় চুক্তির জন্য অপেক্ষা করতে হয় ২০১০ সাল পর্যন্ত। ২০১০ সালে ক্রিকেট আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গভাবে খেলার জন্য চুক্তিবদ্ধ হন আইরিশ জাতীয় দলের ১৩ খেলোয়াড়র। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্রিকেট আয়ারল্যান্ড ২৪জন খেলোয়াড়ের সঙ্গে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়।
 
২০১১ সালের বিশ্বকাপে আন্তঃমহাদেশীয় প্রতিবেশী ও প্রভাবশালী ক্রিকেটজাতি ইংলিশদের বিশাল লজ্জা উপহার দেয় আয়ারল্যান্ড। বলার মতো আর কোনো সাফল্য না পেলেও ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে ইংলিশদের ছুড়ে দেয়া ৩২৮ রানের পাহাড়সম টার্গেট ৩ উইকেট হাতে রেখে পেরিয়ে যাওয়ার যে অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছিল আইরিশরা, তা ক্রিকেট রূপকথার অংশ হতে পারে অনায়াসে।
 
২০১৫ সালের বিশ্বকাপে আবার আইরিশ চমক। এবার তাদের হাতে বধ হয় ক্যারিবীয়ানরা। নিউজিল্যান্ডের মাঠে উইন্ডিজের দেয়া ৩০৪ রানের টার্গেট ৪ উইকেট হাতে রেখেই পেরিয়ে যান পোর্টারফিল্ডরা।
 
বিশ্বকাপের মঞ্চ ছাড়াও একাধিক দ্বিপাক্ষিক-ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে সাফল্য অর্জন করে আইসিসির সুনজর অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে আয়ারল্যান্ড। এ পর্যন্ত আইরিশ দলটি ৯৬ ওয়ানডেতে ৪৪ জয়, ৪৪ পরাজয়, ৫ ফলাফলবিহীন এবং ৩টি খেলায় টাই করে। যার ফলশ্রুতিতে আজ টেস্ট ক্রিকেটের ১১তম দল হিসেবে মাঠে নামছে আইরিশরা।
 
অভিষেক টেস্টে আইরিশদের প্রতিপক্ষ আবার ২০০৭ সালে যাদের হারিয়ে বিশ্বকাপে প্রথম ওয়ানডে জয়ের স্বাদ পেয়েছিলো সেই পাকিস্তান।
 
ঐতিহাসিক টেস্ট অভিষেক নিয়ে উত্তেজিত আইরিশ অধিনায়ক উইলিয়াম পোর্টারফিল্ড বলেন, ‘আয়ারল্যান্ড ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত সবার জন্য এটি অনেক বড় উপলক্ষ। অতীতে আমরা অনেক খেলোয়াড় পেয়েছি। কিছু খেলোয়াড় এখানেও আছে, আবার কিছু নেই। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে এবং স্বীকৃতি দিতে হবে এ পর্যায়ে আসতে তারা কি করেছেন। তাদের অবদান না থাকলে আমরা আজকের ম্যাচের জন্য ভাগ্যবান নাও হতে পারতাম’।

আইরিশদের অভিষেক টেস্টে অংশীদার হতে পেরে খুশি পাকিস্তানের অধিনায়ক সরফরাজ। তিনি বলেন, ‘ঐতিহাসিক এ ম্যাচের অংশ হতে পারা আমাদের জন্য আনন্দের। আমরা সবাই মাঠে নামার জন্য মুখিয়ে আছি। ’
 
২০০৭ সালের বিশ্বকাপের আইরিশ দলে খেলেছিলেন একঝাক স্কুল শিক্ষক, কৃষক এবং পোস্টম্যান৷ কালের পরিক্রমায় আজ সেই দলটি টেস্ট ক্রিকেটের নবীনতম সদ্য।  
 
পাকিস্তান একাদশ
আজহার আলি, ইমাম উল হক, হারিস সোহাইল, আসাদ শফিক, বাবার আজম, সরফরাজ আহমেদ, শাদাব খান, ফাহিম আশরাফ, মোহাম্মদ আমির, মোহাম্মদ আব্বাস ও রাহাত আলি।

আয়ারল্যান্ড একাদশ
উইলিয়াম পোর্টারফিল্ড (অধিনায়ক), অ্যান্ড্রু ব্যালবার্নি, এড জয়েস, টাইরন কেন, অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন, টিম মুরতাঘ, কেভিন ও’ব্রায়ান, নিল ও’ব্রায়ান, বোয়েড র‌্যানকিন, ন্যাথান স্মিথ, পল স্টার্লিং, জেমস শ্যানন, স্টুয়ার্ট থম্পসন ও গ্যারি উইলসন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৮ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৮
এমএইচএম/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।