ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

শান্ত তামিমের ক্লান্ত বাংলাদেশ!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১৯
শান্ত তামিমের ক্লান্ত বাংলাদেশ! ছবি:সংগৃহীত

জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব যে কারও জন্যেই অতি আকাঙ্ক্ষার বিষয়। তামিমের জন্যেও সেটি তেমনই হয়তো। তবে ঠিক কোন সময়ে এই স্বল্পকালীন দায়িত্ব পেলেন এবং সেটি কতটা তার নিজের জন্য ভালো-মন্দ ডেকে আনলো—সে আলোচনাও বিবেচ্য।

প্রথম ম্যাচের আগে ও পরে সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়কের ভূমিকায় শান্ত তামিমকেই দেখলো সবাই। ধরে ধরে বেশ হাসিমুখ নিয়ে যেভাবে জবাব দিচ্ছিলেন এতে বেশ অনুমান করা যায় নিজেকে কিছুটা স্থির করেই এই খণ্ডকালীন দায়িত্ব নিয়েছেন।

তবে তিনি এটাও জানেন দলনায়ক হিসেবে সফল হবার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ দলের ওপেনার হিসেবে দলকে দারুণ শুরু এনে দেওয়া। শুরুতেই সেটি পারেননি তিনি, দলনেতা হিসেবেও না, ওপেনার হিসেবেও না।

আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ ও বিশ্বকাপের লম্বা সফর শেষ করে ৭ জুলাই দেশে ফিরে ১০ দিনের মাথায় ১৭ জুলাই থেকেই শুরু হলো শ্রীলঙ্কা সফরের প্রস্তুতি। বিশ্বকাপের টানা ম্যাচ খেলা এবং ইংল্যান্ড-ওয়েলস এর নানা প্রান্তে ভ্রমণের ক্লান্তি শেষ হওয়ার আগেই আরেকটি বিদেশ সফর। যদিও এই সফরে বিশ্বকাপ ব্যর্থতার ট্যাগলাইন অনেকটা কাটিয়ে তোলা যাবে ভাবা হচ্ছিলো।

শুক্রবার সিরিজের প্রথম ম্যাচে স্বাগতিকদের সঙ্গে ৯১ রানের বড় পরাজয়ে সেই ভাবনায় পেরেক ঠোকার পাশাপাশি সামনে নিয়ে এলো অনেক নতুন ভাবনা। সাকিব-লিটনের ছুটি ও মাশরাফি-সাইফের ইনজুরিতে দলে যারা সুযোগ পেলো তাদেরই কি এদের রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে বিসিবি তৈরি করছে কিনা—সেটা নিয়েও নতুন প্রশ্ন সামনে চলে এলো। তিন বছর পর জাতীয় দলে ডাক পাওয়া শফিউলের চূড়ান্ত একাদশেও অন্তর্ভুক্তি ইতোমধ্যেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে টিম ম্যানেজমেন্টকে।

বিশ্বকাপ জুড়ে তাসকিনকে নিয়ে হাহাকারের পর প্রথম ম্যাচের একাদশে তার অনুপস্থিতিও অবাক করেছে ক্রিকেট সংশ্লিষ্টদের। সৌম্যের টানা বড় ইনিংস না খেলতে পারার ব্যর্থতায় এই সিরিজে ইমরুলের সুযোগ পাওয়াটা প্রত্যাশিত ছিল, কিন্তু সে সুযোগ আসেনি। পুরো বিশ্বকাপজুড়ে নিজেকে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হওয়া তামিমকে অধিনায়ক করার ব্যাপারে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া, যদিও মাশরাফি ও সাকিবের অনুপস্থিতির কারণেই এই দায়িত্বভার নিয়েছেন তামিম।

আমরা যে পরিমাণ অধৈর্য জাতি, এই সিরিজে তামিম যদি পর্যাপ্ত নৈপুণ্য না দেখাতে পারেন—তবে তাকে সরিয়ে দেওয়ার একটি বড় তৎপরতা শুরু হয়ে যেতে পারে। ইতোমধ্যে প্রথম ম্যাচে শূন্য রানে ফিরে গিয়ে সেই তৎপরতাকে এগিয়ে দিলেন তামিম নিজেই। তাই বিশ্বকাপ পরবর্তী এই সিরিজে তামিমের ভারপ্রাপ্ত দলনেতার দায়িত্ব নেওয়া নিজের জন্যেই শাপেবর হলো কিনা—সেটি সিরিজ শেষেই হিসেব মেলানো যাবে। তবে এই তামিমে আস্থা রাখা প্রয়োজন, প্রয়োজন তামিমের কৌশলগত বিষয়ে কাজ করাও। সেটি নিয়ে কাজ করার মতোও আপাতত কেউ নেই দলের সঙ্গে। স্টিভ রোডসের বিদায়ের পর আপদকালীন কোচ হিসেবে যাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, সেই খালেদ মাহমুদ সুজন এর আগেও অনেকবার স্বল্পকালীন দায়িত্বে ছিলেন। যদিও তিনি এই স্বল্পকালীন কাজ করতে আগ্রহী নন, তিনি চান লম্বা সময়ের চুক্তি। আর বিসিবির নজর নিশ্চিতভাবেই বিদেশি কোচের দিকেই। সব মিলিয়ে এই সফরটিতে পরিকল্পিত বাংলাদেশকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।

সিরিজের প্রথম ম্যাচে প্রেমাদাসায় শ্রীলঙ্কান লিজেন্ড লাসিথ মালিঙ্গার ওয়ানডে ক্রিকেটের শেষ দিনে ভঙ্গুর দেখা গেছে টাইগারদের। বিশ্বকাপে ফিল্ডিং আমাদের ভুগিয়েছিলো, সেটি থেকে এই ম্যাচে বাংলাদেশ আরও একধাপ নিচেই নামলো। খেলোয়াড়দের ভেতর ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট।

বিশ্বকাপের মতো একটি হাই-ভোল্টেজ টুর্নামেন্টের পর কার্যত একটি বিরতি দেওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। সেটি সাফল্য উদযাপনের জন্য হোক কিংবা ব্যর্থতা কাটিয়ে ওঠার জন্য হোক। ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির এটি বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন। বিশ্বকাপজয়ী ইংল্যান্ডও ইতোমধ্যে টেস্ট খেলতে নেমে গেছে। বাংলাদেশের মতো দলগুলোর জন্য এটি কিছুটা চাপই। টানা খেলার কারণে আবার আরেকটি বিদেশ সফর অবশ্যই ক্লান্তিকর হতে পারে। যতই আমরা পেশাদারিত্বের কথা বলি, আমাদের খেলোয়াড়দের ফিজিক্যাল সক্ষমতার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে।

আরেকটি বিষয় আমার মাথায় কাজ করছে, যদি দল পাঠাতেই হয় তবে কেনো আমরা আরও নবীন কিছু খেলোয়াড় দিয়েই দল করলাম না। সব সিরিজেই ফলাফল আশা করা বোকামি মনে হয় আমার কাছে। আমাদের পাইপলাইনে আসলে কতটা আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড় তৈরি হচ্ছে সেটিও দেখে নেওয়া প্রয়োজন এরকম সিরিজগুলোর মাধ্যমে। অথবা সাকিব, তামিম, মুশফিক, রিয়াদ বা মাশরাফির জায়গা যখন খালি হবে, তখন সেটি নেওয়ার মতো খেলোয়াড় আসলেই তৈরি হচ্ছে কিনা—সেই প্রশ্নের উত্তরও কিছুটা পাওয়া যাবে।

কিছু কিছু সিরিজকে ইনভেস্টমেন্ট হিসেবেই নিতে হবে। একটি নবীন দলের ওপর সমর্থকদের ওরকম ফলাফল প্রত্যাশাও থাকে না। কিন্তু এই ক্লান্ত অভিজ্ঞ দলের থেকে ইতিবাচক ফলাফল না পেলেই ‘গেলো গেলো, সব গেলো’ রব উঠবে। শেষবেলায় এসেও মালিঙ্গা আমাদের দারুণ কিছুই শিখিয়ে গেলেন। নিজের শেষ ম্যাচে তার বোলিং দেখে আপনার মনে হবে, যদি তিনি এই দেশের হতেন, তার হয়তো এখন অবসর নেওয়াই হতো না। কিন্তু তিনি বুঝেছেন, এখনই তার ছেড়ে দেওয়ার সেরা সময়, আর সেটিই তিনি করেছেন। কিন্তু এটা আমরা বুঝতেই অনেক দেরি করে ফেলি। ইদানীংতো ক্রিকেটকর্তারা মানুষের সেন্টিমেন্ট অনুসরণ করেন, অর্থ্যাৎ মানুষ যাকে দলে চাইছে, যাকে চাইছে না—সেটিও কিছুটা অনুসরণ করা হয়। অবশ্য সিরিজের বাকি ম্যাচগুলোতে এই সব ভাবনা দূর হয়ে যেতে পারে টাইগাররা স্বরূপে ফিরে এলেই। সেটি আসার মতো সামর্থ্য যে এই দলের আছে, তা অতীতেও তারা প্রমাণ দিয়েছে। ক্যাপ্টেন তামিমের কথায়, ‘ছোট ছোট ভুল না করলেই ফলাফল পক্ষে আসবে’। এ বিশ্বাস আমাদেরও...।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১৯
এমএমইউ/এমএমএস/এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।