৪০ ওভার শেষে স্কোর টাই। প্রথম সুপার ওভার শেষেও স্কোর টাই।
দিনের দ্বিতীয় ম্যাচটি যারা টেলিভিশনের পর্দায় দেখেছেন তারা নিজেদের ভাগ্যবান ভাবতেই পারেন। কারণ এক ম্যাচেই জোড়া সুপার ওভার দেখার বিরল সৌভাগ্য এর আগে কখনোই হয়নি ক্রিকেটভক্তদের। তারচেয়েও বড় কথা, একদিনে দুই ম্যাচ মিলে তিন সুপার ওভার, এ তো মহাবিরল ঘটনা! টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসেই এমন ঘটনা এই প্রথম।
এমনই অদ্ভুত এক ক্রিকেটীয় দিন দেখা গেল রোববার। দিনের প্রথম ম্যাচে সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে সুপার ওভারে হারিয়েছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। সেই রোমাঞ্চ হারিয়ে যাওয়ার আগেই রাতে দ্বিতীয় ম্যাচে সুপার রোমাঞ্চ নিয়ে হাজির কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব ও মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের মধ্যকার ম্যাচ। যেখানে দুই সুপার ওভারের লড়াইয়ে জয়ের মালা গলায় পড়ল পাঞ্জাব।
এমন রোমাঞ্চের জন্ম দেওয়ার জন্য অবশ্য আইসিসিকে ধন্যবাদ দিতেই পারেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। কারণ ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সুপার ওভারে সমান রান করেও বাউন্ডারির হিসাবে হেরে গিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। অদ্ভুত নিয়মের কারণে কিউইদের কান্নাভেজা বিদায় ক্রিকেটপ্রেমীদের মোটেই পছন্দ হয়নি। তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে আইসিসিও। পরে নিয়ম বদল করা হয়। কিন্তু খোদ আইসিসিও হয়তো ভাবেনি কোনোদিন এমন দিনও আসবে যখন দুই সুপার ওভারের দরকার পড়বে।
নির্ধারিত ২০ ওভারে দুই দলের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৭৬ রানে। এরপর প্রথম সুপার ওভারে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ২ উইকেট হারিয়ে ৫ রান তুলতে পারে পাঞ্জাব। মুম্বাইয়ের পেসার বুমরাহর বলে রান তুলতে রীতিমত হিমশিম খান পাঞ্চাবের ব্যাটসম্যানরা। ওভারের দ্বিতীয় বলেই ক্যাচ তুলে দিয়ে বিদায় নেন পাঞ্জবের পুরান। শেষ বলে বিদায় নেন রাহুল নিজেই। প্রথম সুপার ওভারে গেইলকে কেন নামানো হলো না সে এক বিরাট প্রশ্ন থেকে যাবে।
এদিকে জবাব দিতে নেমে পাঞ্জাবের মোহাম্মদ শামির গোলার সামনে খাবি খেতে থাকেন মুম্বাইয়ের ডি কক-রোহিত শর্মারা। প্রথম ৫ বলে আসে মাত্র ৪ রান। শেষ বলে দরকার ছিল ২ রান। কভার অঞ্চল দিয়ে বল পাঠিয়ে দিয়েই রানের জন্য দৌড়ান ডি কক। প্রথম রান ঠিকমতো নিতে পারলেও পরের রান নিতে গিয়ে রান আউট। আবার সুপার ওভার!
আইপিএলের টুইট অনুযায়ী, প্রথম সুপার ওভারে যে যে ব্যাটসম্যান ও বোলার অংশ নিয়েছিলেন তারা দ্বিতীয় সুপার ওভারে অংশ নিতে পারবেন না। অর্থাৎ দুই দলের ৬ জন করে ১২ জনকে ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু এমসিসি’র নিয়ম বলছে, সুপার ওভারে আউট হওয়া ব্যাটসম্যানরাই শুধু নামতে পারবেন না। এই নিয়ে বিস্তর কথাবার্তা হলো মাঠেই। শেষ পর্যন্ত মুম্বাইয়ের ‘অব্যবহৃত’ পোলার্ড নামলেন হার্দিক পান্ডিয়াকে সঙ্গে নিয়ে। পাঞ্জাবের পেসার জর্ডানের করা ওভারের চতুর্থ বলে দুই রান নিতে গিয়ে পান্ডিয়া বিদায় নেওয়ার পরের দুই বল থেকে আর মাত্র ২ রান তুলে মুম্বাই। যদিও শেষ বলে লং অনে তুলে মেরেছিলেন পোলার্ড, কিন্তু অবিশ্বাস্য দক্ষতায় সীমান্ত থেকে বল ফেরত পাঠান আগারওয়াল। পাঞ্জাবের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১১ রান।
দ্বিতীয়বার সুপার ওভারে ব্যাট করতে নেমে আগেরবারের ভুল এবার আর করেনি পাঞ্জাব। গেইলকে স্ট্রাইকে পাঠিয়ে দেওয়ার ফল হাতেনাতে পেয়ে যায় দলটি। বোল্টের করা ওভারের প্রথম বলেই বিশাল ছক্কা মারেন ইউনিভার্স বস। পরের বলে সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইক দেন আগারওয়ালের কাছে। সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাউন্ডারি মারেন আগারওয়াল। চতুর্থ বলে আবারও বাউন্ডারি মেরে ম্যাচ শেষ করেন তিনি। পাঞ্জাব পেয়ে যায় ঐতিহাসিক এক জয়।
এর আগে টসে জিতে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে কুইন্টন ডি ককের ৫৩ ও কাইরন পোলার্ডের ১২ বলে ৩৪ রানের ঝড়ের ওপর ভর করে পাঞ্জাবের সামনে ১৭৭ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দিয়েছিল মুম্বাই।
জবাব দিতে নেমে শুরুতে ময়াঙ্ক আগারওয়ালকে (১১) হারালেও একপ্রান্তে রানের চাকা সচল রাখেন পাঞ্জাব অধিনায়ক লোকেশ রাহুল। আগের ম্যাচেই ফিফটি হাঁকানো ক্রিস গেইল এদিন নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। ২১ বলে মাত্র ২৪ রান করেছেন এই ক্যারিবীয় দানব। ১২ বলে ২৪ করে বিদায় নেন নিকোলাস পুরান। আবারও ব্যর্থ হয়েছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েলও।
রাহুল দীপক হুডাকে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু দলিয় ১৫৩ রানের মাথায় রাহুল (৭৭) বিদায় নিলে প্রমাদ গুনতে থাকে পাঞ্জাব। তবে ক্রিস জর্ডান ও হুডা মিলে দলকে স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন। শেষ ওভারে পাঞ্জাবের দরকার ছিল ৬ বলে ৯ রান। ট্রেন্ট বোল্টের করা শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে বাউন্ডারি মেরে লক্ষ্যটা কমিয়ে আনেন জর্ডান। শেষ ৩ বলে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩ রান। কিন্তু চতুর্থ বলে দারুণ এক ইয়র্কার ছুড়েন বোল্ট। এরপর সিঙ্গেল নেন হুড়া। ১ বলে চাই ২ রান। কিন্তু আবারও ইয়র্কার। এবার কোনোমতে লেগ সাইডে ব্যাট হাঁকিয়ে দে ছুট। কোনোমতে ১ রান নিলেও তড়িঘড়ি ছুটতে গিয়ে পোলার্ডের থ্রোয়ে রান আউটের শিকার হন জর্ডান। এরপর জোড়া সুপার ওভার!
বাংলাদেশ সময়: ০১৫৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০২০
এমএইচএম