আজ বুধবার (২৮ অক্টোবর) সাকিব আল হাসানের নিষেধাজ্ঞার শেষ দিন। রাত পোহালেই আবার বাংলাদেশের ক্রিকেটের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে যাবেন দেশের ক্রিকেটের এই পোস্টারবয়।
দেশ সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান নতুন করে পথ চলা শুরু করবেন। সব ধরনের ক্রিকেট থেকে এক বছরে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আবারও ক্রিকেট মাঠে মুক্ত হচ্ছেন সাকিব। ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব গোপন করায় এক বছর আগে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন তারকা এ ক্রিকেটের। বাংলাদেশের ক্রিকেট কেমন কেটেছে এই এক বছর কিংবা সাকিবের কেমন কেটেছে এই এক বছর জানা যাক তেমন কিছু।
সাকিবের নিষেধাজ্ঞার ৮-১০ দিন আগে থেকেই দেশের ক্রিকেটের আকাশে ছিল কালো মেঘ। ২১ অক্টোবর ২০১৯, সংবাদপত্রে বড় হেডলাইন '১১ দফা দাবিতে ক্রিকেটারদের ধর্মঘটের ডাক'। পুরো দেশের ক্রিকেট যেন স্তব্ধ হয়ে পড়ে। পুরো ক্রিকেট পাড়াই অচল হয়ে পড়েছিল। সামনে ভারত সফর, ক্রিকেটাররা ধর্মঘট প্রত্যাহার না করলে ভারত সফরে যাবে কারা। ক্রিকেটারদের কঠোর অবস্থানে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) কোনঠাসা হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত অনেক নাটক আর অপেক্ষা পার করে ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করে ক্রিকেটাররা ধর্মঘট তুলে নেন।
মাঠে ফেরে ক্রিকেট, শুরু হয় ভারত সফরের প্রস্তুতি। কিন্তু এক ঝামেলা শেষ হতেই আরেক ঝামেলার জন্ম। ভারত সফরের প্রস্তুতিতে অনুশীলন ক্যাম্পে সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতি। জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা দুই ভাগে ভাগ হয়ে প্রস্তুতি ম্যাচেও নেই সাকিব। এমনকি নেই টিম মিটিংয়েও। তখনই অনেকটাই নিশ্চিত বোঝা যাচ্ছিল ভারত সফরে যাচ্ছেন না সাকিব। কিন্তু সাকিব যে খবরের এতো বড় শিরোনাম হবেন সেটা কেউই আঁচ করতে পারেননি। ঘর্মঘটের সময় এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের করা ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিক্সিং নিয়ে প্রশ্নের জবাবে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জানিয়েছিলন ফিক্সিং নিয়ে আরও বড় খবর আসছে। তিনি কি সাকিবের নিষেধাজ্ঞার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন কিনা সেটা হয়তো তিনিই ভালো জানতেন। ২৯ অক্টোবর সন্ধ্যায় অনেকটা আচমকাই জানা গেল, আইসিসি থেকে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয় সাকিবকে।
যে কারণে নিষিদ্ধ হন সাকিব
ভারতীয় জুয়াড়ি দীপক আগারওয়ালের কাছ থেকে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন সাকিব। যার প্রথমটি ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ের ত্রিদেশীয় সিরিজ কিংবা ২০১৮ সালের বিপিএলের সময়। সাকিব সেটি আইসিসির সংস্থার 'দুর্নীতি-দমন ইউনিটের ‘ (আকসু) কাছে জানাননি।
দ্বিতীয়টি, ২০১৮ সালের ত্রিদেশীয় সিরিজে আবারও ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পান। এবারও সাকিব আকসুকে তা অবহিত করেননি।
তৃতীয় ঘটনাটি ঘটে ২০১৮ সালে আইপিএলে। ২৬ এপ্রিল কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিপক্ষে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে খেলার সময় ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পান সাকিব এবং সেটাও আকসুকে জানাননি।
আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী প্রস্তাবের তথ্য না জানানো একটা অপরাধ। সবকিছু জানতে পেরে দীর্ঘ তদন্তের পর সাকিবকে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে আইসিসি। এছাড়াও এক বছরের স্থগিত নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় তাকে।
নিষেধাজ্ঞার কারণে যে সব সিরিজ মিস করেছেন সাকিব
নিষিদ্ধ হওয়ার পর সাকিব আল হাসানের খুব বেশি একটা ক্ষতি অবশ্য হয়নি। তিনটি আন্তর্জাতিক সিরিজ ও ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে পারেননি সাকিব। কারণ গত বছর অক্টোবরে নিষিদ্ধ হওয়ার পর চলতি বছর মার্চ মাস থেকে করোনা ভাইরাসের কারণে কোনো ধরনের ক্রিকেট আর মাঠে গড়াইনি। এ বছর আর কোনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নেই বাংলাদেশের।
ভারতের বিপক্ষে সিরিজ
নিষিদ্ধ হওয়ার পরপরই নভেম্বরে ভারত সফরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ ও দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলেছিল টাইগাররা। কাজেই এই সিরিজটি খেলতে পারেননি সাকিব।
বঙ্গবন্ধু বিপিএল
ভারত সফরের পর ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হয় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু বিপিএল। দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় এই আসরটি নিষেধাজ্ঞার কারণে খেলতে পারেননি সাকিব।
পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ
বিপিএল শেষ হওয়ার পর চলতি বছর জানুয়ারি মাসে তিন ধাপের পাকিস্তান সফরের প্রথম ধাপে পাকিস্তান সফর যায় বাংলাদেশ। তিনটি টি-টোয়েন্টি খেলে চলে আসে টাইগাররা। এরপর ফেব্রুয়ারিতে দ্বিতীয় ধাপে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্ট খেলে ফিরে আসে বাংলাদেশ। এই সফর মিস করেন সাকিব।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ
ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে একটি টেস্ট, তিনটি ওয়ানডে ও দুটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে বাংলাদেশ সফরে আসে জিম্বাবুয়ে। এই সিরিজটিও খেলতে পারেননি সাকিব।
এরপর করোনার কারণে পুরো বিশ্বের ক্রিকেট স্থবির হয়ে পড়ে।
বৃহস্পতিবার (২৯) অক্টোবর থেকে আবার বাংলাদেশের ক্রিকেটের অংশ হয়ে যাবেন সাকিব আল হাসান। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন সাকিব। দেশে ফিরেই যোগ দেবেন অনুশীলনে। আবার মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে ফিরে পাবে প্রাণ। সবকিছু ঠিক থাকলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) আয়োজনে আগামী মাসের মাঝামাঝিতে শুরু হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট দিয়ে আবারও ক্রিকেট মাঠে ফিরবেন সাকিব।
সাকিব ফেরাতে চিন্তা অনেকটাই দূর হয়ে গেছে বিসিবির নির্বাচকদের। বাংলানিউজকে নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন জানিয়েছে সাকিবের ফেরাটা বাংলাদেশ দলের জন্য বাড়তি অনুপ্রেরণা হিসেবেই কাজ করবে।
হাবিবুল বাশার বলেন, 'সাকিবের ফেরাটা তো অবশ্যই বড় একটা ইম্প্যাক্ট ফেলবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য। সাকিব খেলা মানে আমরা একজন বোলার ও ব্যাটসম্যান বেশি নিয়ে খেলতে পারি। পুরো টিমে আত্মবিশ্বাসটা পরিবর্তন হয়ে যাবে। গত এক বছর তো অনেক মিস করেছে, যদিও বেশি খেলা মিস করতে হয়নি তাকে। মহামারির (করোনা) কারণে তো খেলাই হয়নি। তবে তার উপস্থিতি দলে বাড়তি আত্মবিশ্বাস যোগাবে, অনেক কিছু পরিবর্তন করবে। '
এক বছর ক্রিকেট থেকে দূরে থাকা সাকিব ফিরেই সঙ্গে সঙ্গে ভালো কিছু করবে না, সাকিবকে সময় দিতে হবে। এটা নিয়ে চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। সাকিবের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের আগের ছন্দে ফিরে যেতে সময় লাগবে না বলে আশা করেন বিসিবির এই নির্বাচক।
তিনি বলেন, 'এটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার, এটা নিয়ে চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। যদি সব ঠিক থাকে আমাদের পরবর্তী সিরিজ আগামী জানুয়ারিতে। তার আগে সাকিব যথেষ্ঠ সময় পাবে, যথেষ্ঠ ম্যাচ খেলবে আগের ফর্মে ফিরে আসতে। সাকিবের মতো ক্রিকেটার এতো দিন ধরে ক্রিকেট খেলছে, তার পূর্বের ছন্দে ফিরতে সময় নেবে না বলেই আমার বিশ্বাস। '
ব্যাট হাতে মাঠ কাপাবেন সাকিব, বল হাতে মাঠ কাপাবেন সাকিব, বাংলাদেশের ক্রিকেটের নতুন দিগন্তের দিন গণনা শুরু হবে বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর)। দেশের ক্রিকেট সমর্থকরা সেই অপেক্ষাই করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০২০
আরএআর/এমএমএস