ঢাকা, রবিবার, ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৬ মে ২০২৪, ১৭ জিলকদ ১৪৪৫

ক্রিকেট

মনে তাদের স্বপ্ন, চোখে বিস্ময়

মাহমুদুল হাসান বাপ্পি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩২ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০২২
মনে তাদের স্বপ্ন, চোখে বিস্ময়

সাদা পোশাকে মাঠে লড়ছেন প্রিয় ক্রিকেটাররা। গ্যালারিতে তখন বাহারি পোশাকে মাতাচ্ছেন তারা।

প্রতি বাউন্ডারিতেই ভেসে আসছে করতালি, শোনা যাচ্ছে উল্লাসের আওয়াজ। টিভিতে দেখা তারকাদের চোখের সামনে দেখে বিস্ময়ের অন্ত নেই, মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা একদিন জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়ানোর স্বপ্নটা যেন তাতে হচ্ছে আরও গভীর।

কায়েস আহমেদ রায়হান খেলেন ধানমন্ডি ক্রিকেট ক্লাবে। তার প্রিয় ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম। তার সঙ্গে যখন কথা হয়, মুশফিক তখনও ব্যাটিংয়ে। বাউন্ডারি হাঁকাতেই আর কথা বলায় মনোযোগ নেই কায়েসের। তার জন্য তখন মুশফিকের ব্যাটিং দেখাটাই পৃথিবীর সবচেয়ে জরুরি কাজ!

পাশেই দাঁড়িয়ে কায়েসের বন্ধু মুনিম মাশুক জয়। 'ভাই আমাকে জিজ্ঞেস করেন প্রিয় ক্রিকেটার কে...' বলে কথাটা ঠিকঠাক শেষ করেননি। এরপর নিজেই বলতে শুরু করলেন জয়, 'আমার প্রিয় ক্রিকেটার সাকিব ভাই। উনি আজকে শূন্য রানে আউট হয়ে গেছেন, অনেক কষ্ট লেগেছে ভাই। '

নিজে উইকেটরক্ষক ব্যাটার। তবে মুনিম হতে চান ডেভিড ওয়ার্নারের মতো। মনের ভেতর আড়াল করে রাখা কথাটা এরপর নিজেই বলতে শুরু করল মুনিম, 'আমার ডেভিড ওয়ার্নারকে অনেক ভালো লাগে। একদিন উনার মতো আমিও অনেক মারবো ভাই, দেইখেন। '

কিন্তু ডেভিড ওয়ার্নার তো তিন ফরম্যাটেই সমানতালে খেলছেন। মুনিম কী করবেন? 'আমার প্রিয় ফরম্যাট ওয়ানডে। তবে একদিন দেশের হইয়া সবগুলোতেই খেলবো ইন শা আল্লাহ। ' বলেই মুনিম হাসেন, তার হাসিতে স্নিগ্ধতা থাকে, থাকে পরিশ্রমের সংকল্পও।

একটু এগিয়ে আসতেই দেখা হলো মোহাম্মদ রিজওয়ানের সঙ্গে। ভুল ভাববেন না। বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচে পাকিস্তানি ব্যাটার এসে হাজির হননি। এই রিজওয়ান খেলেন ধানমন্ডি ক্রিকেট ক্লাবে, করেন পেস বোলিং। মাথায় কাপড়ে বাধা টাইগারের ছবি। বুকে পতাকার সঙ্গে এক বুক স্বপ্ন।

রিজওয়ানের সঙ্গে নামের মিল থাকলেও তার প্রিয় ক্রিকেটার বাবর আজম, 'আমার প্রিয় ক্রিকেটার বাবর আজম। তবে দেশে মাশরাফি ভাই। আমিও পেসার তো!' বলেই হেসে ফেলেন রিজওয়ান।

বিসিবিই আয়োজন করে ঢাকা মেট্টোর বিভিন্ন একাডেমির শিক্ষার্থীদের নিয়ে এসেছে। তাদের জন্য রাখা হয়েছে খাবারের ব্যবস্থাও। ওই সূত্রেই প্রথম মিরপুরে হাজির হয়েছে ১০ বছরের লামিয়া আক্তার। যাত্রাবাড়ি ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে প্রতিদিন দুই বেলা অনুশীলন করতে হয়।

জাহানারা আলম তার প্রিয় ক্রিকেটার। লামিয়াও এই তারকা ক্রিকেটারের মতোই পেসার। এমনিতে সাকিব আল হাসানকেও খুব পছন্দ করেন। কিন্তু আজ তো সাকিব ডাক মেরে ফিরেছেন! কথাটা বলতেই লামিয়ার মুখ ভার, 'এমন দুয়েকদিন হতেই পারে। ক্রিকেট খেলবে, আউট হবে না!'

লামিয়ার কথার জবাব দেওয়া গেল না। কথা বদলে শোনা হলো স্বপ্নের কথা। অবশ্য তাদের সবার স্বপ্ন একই, লামিয়াও তার ব্যতিক্র নন; জাতীয় দলের হয়ে খেলতে চান, সঙ্গে যোগ করলেন আরও একটা ইচ্ছে, 'দেশকে বিশ্বকাপ জেতাবো একদিন!'

লামিয়ার সঙ্গে একই ক্লাবে খেলা ইয়াসির আরাফাতের স্বপ্নটাও আলাদা না। প্রিয় ক্রিকেটার তাসকিন আহমেদের মতো একদিন গতির ঝড় তোলার স্বপ্ন তার। ইনজুরিতে ছিটকে পড়া তাসকিনের বোলিং দেখতে না পারার আক্ষেপ ইয়াসিরের, 'তাসকিন ভাই থাকলে খুব ভালো লাগতো! কিন্তু কী আর করা..'

ইয়াসিরের বন্ধু মাহিয়াদের প্রিয় ক্রিকেটার সাকিব মাঠে ছিলেন। তবে তার ব্যাটিং দেখতে না পারার কষ্ট তার। আরেক প্রিয় ক্রিকেটার বিরাট কোহলি ফর্মে ফিরেছেন, মাহিয়াদের তাই স্বস্তি, 'কোহলি আমার সবচেয়ে প্রিয় ক্রিকেটার। একদিন তার মতো করে কাভার ড্রাইভ খেলবো এই মাঠে...'

মাহিয়াদের কথায় আত্মবিশ্বাসের কমতি নেই। চোখের ভাষায় বুঝিয়ে দেন, যা দরকার হয় করবেন স্বপ্ন পূরণে। মিরপুরের গ্যালারিতে ঘুরে যতজনের সঙ্গে কথা হলো, সবারই একই অবস্থা। তাদেরও বুঝিয়ে দিতে খুব ইচ্ছে করছিল, 'তোমাদের স্বপ্নেই তো এই দেশের ক্রিকেটটা এগিয়ে চলবে...স্বপ্ন দেখাটা থামিও না প্লিজ!'

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩১ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০২২
এমএইচবি/আরইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।