গুলশানের সিক্স সিজনে হোটেলে সন্ধ্যা নেমেছে ততক্ষণে। সাংবাদ কর্মীদের ঘিরে ধরেছে এক গন্তব্য থেকে আরেকটিতে ছুটে বেড়ানোর ক্লান্তি।
ক্যামেরা, বুম আর খাতা-কলম যতক্ষণে পৌঁছেছে, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ সভাশেষে বেরিয়ে গেছেন হোটেল থেকে। দিনভর গুঞ্জন, টি-টোয়েন্টির নেতৃত্ব হারাতে যাচ্ছেন তিনি। সন্ধ্যা নামার পর জালাল ইউনুসের মুখ থেকে এলো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা।
তিনি জানালেন, আপাতত জিম্বাবুয়ে সফরে নেই রিয়াদ, থাকবেন না আরেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম। সাকিব আল হাসানও ছুটি নিয়ে রেখেছিলেন আগে থেকেই- নেতৃত্বের ভার তুলে দেওয়া হলো নুরুল হাসান সোহানকে। আঁধার নেমে আসা সময়ে আলোর পথ খোঁজার ঘোষণা দিলেন টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন।
বিসিবির ভাবনায় পাওয়া গেল নতুন দিনের বার্তা। কেমন হবে এই যাত্রা? প্রথম পরীক্ষাটা হবে শনিবার বাংলাদেশ সময় বিকেল পাঁচটায়। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটি শুরু হবে হারারেতে।
অধিনায়ক হওয়ার পর নুরুল হাসান সোহান করেছিলেন আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন। আগ্রহের কমতি ছিল না তাকে নিয়ে। নানা প্রশ্নের জবাবে সোহানের কণ্ঠে ভেসেছিল ‘ভয়ডরহীন’ আর ‘দল হয়ে’ খেলতে চাওয়ার প্রত্যয়। চ্যালেঞ্জটা আসলে তার নিজের জন্যও।
একাদশে তার জায়গা নিশ্চিত কি না, এমন সন্দিহান চোখের সংখ্যাটা কম নয়। দেশের হয়ে ৩৩ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন ইতোমধ্যে। ব্যাট হাতে নামা ২৯ ইনিংসে ১২.৯০ গড় আর ১১১.৯৮ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ২৭১ রান। সর্বোচ্চ সংগ্রহটাও কেবল ৩০।
সোহান অবশ্য জোর দিয়েই বলেছেন, নিজের পরিসংখ্যানের চেয়েও তার কাছে জরুরি দলের চাওয়া। সেটিতেই গুরুত্ব দেবেন তিনি। ভিন্ন অধিনায়কের অধীনে আলাদা রোলে খেলা সোহান নিজের দলে কোন ভূমিকাতে থাকবেন? তিনি বলেছেন, ‘পরিস্থিতির দাবি মেটানোই’ হবে তার কাজ।
কাজ বাড়বে আফিফ হোসেন ধ্রুব, লিটন দাস কিংবা শেখ মাহেদী হাসানদেরও। ‘তারুণ্যের’ খোলস থেকে বেরিয়ে দায়িত্ব নেওয়ার শুরুটাও হতে পারে জিম্বাবুয়ে সিরিজেই। সবাই ৩০টির বেশি ম্যাচ খেলেছেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার সময়টাও পাঁচ পেরিয়ে যাচ্ছে। এখন দায়িত্ব নিতে না পারলে আর কবে? আসছে এমন প্রশ্নও।
সোহান অবশ্য বলছেন, একদমই তরুণ নন তারা; আছে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা। ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমরা কয়েকজন গত ৬-৭ বছর ধরে খেলছি। অভিজ্ঞ ছেলেরাও এখানে আছে। আমি দল নিয়ে খুশি। আমার মনে হয় আমাদের কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে, কিন্তু আশা করি সেটা উতরে যেতে পারব। ’
কাজটা সহজই হওয়ার কথা শুরুতে। প্রতিপক্ষ হিসেবে থাকছে চেনা জিম্বাবুয়ে। তাদের বিপক্ষে এখন অবধি টি-টোয়েন্টিতে ১৬ ম্যাচে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ, জিতেছে ১১টিতেই। অবশ্য মানসিকতা বদলে জিম্বাবুয়েও পাল্টে গেছে বলে বিশ্বাস দলটির অধিনায়ক ক্রেইগ আরবিনের। বুলাওয়েতে বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে তারা সেটা দেখিয়েছেন বলেও জানালেন স্বাগতিক অধিনায়ক।
ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘আমরা মানসিকতায় পরিবর্তন এনেছি টি-টোয়েন্টি খেলার। আমার মনে হয় অনেকেই সেটা বুলাওয়েতে (বাছাই পর্বে) দেখেছে- টি-টোয়েন্টি আমরা যেভাবে খেলেছি আগে আর বুলাওয়েতে যেভাবে খেললাম তাতে অনেক তফাৎ আছে। আমরা যদি ওই ইতিবাচক ও ভয়হীন ক্রিকেটটা খেলতে পারি, পরিসংখ্যানটা ধীরে ধীরে বদলাবে। ’
টাইগারদের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন অবশ্য দলের ওপর প্রত্যাশার ভারটা তুলে দেননি। সিরিজ হারলেও সমস্যা নেই, দেশে থাকতেই দিয়েছেন এমন বার্তা। কিন্তু তাতে নতুনের জয়গানের যে স্লোগান উঠেছে, কিছুটা হলেও তো সেটা থমকে যাবে। আদতে আটকে থাকবে দেশের ক্রিকেটই। নুরুল হাসান সোহানরা নিশ্চয়ই তেমন কিছু চাইছেন না? প্রশ্নের জবাবটা কথায় নয়, মাঠে খেলেই দিতে হবে তাদের!
বাংলাদেশ সময় : ২২৪৫, জুলাই ২৯, ২০২২
এমএইচবি