শুরুর দুই ওভারে দুই উইকেট হারানোর ধাক্কা; এরপর জিম্বাবুয়ে সামলে উঠলেও রানআউটে তৃতীয় উইকেট জুটি ভাঙে। কিন্তু বাংলাদেশ যখন চালকের আসনে বসার পথে, ঠিক সেখান থেকেই ইনোসেন্ট কাইয়া ও সিকান্দার রাজার লড়াইয়ের শুরু।
৬৬ বলে দারুণ এক ফিফটি তুলে নিয়েছেন কাইয়া। অন্যদিকে তাসকিন আহমেদের বল তুলে মারতে গিয়ে পায়ে চোট পেলেও লড়াই চালিয়ে যান রাজা। বল ব্যাটের কানায় লেগে তার পায়ের নিচের দিকে আঘাত করে। তবে তাতেও দমে যাননি তিনি। প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ফের ক্রিজে দাঁড়িয়ে যান। এরপর তাসকিনেরই পরের ওভারে রাজার ক্যাচ ছাড়েন বদলি ফিল্ডার তাইজুল ইসলাম। জীবন পেয়ে নিজের ২১তম ফিফটি তুলে নেন রাজা, বল খেলেছেন ৫৭টি।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৩১ ওভার শেষে জিম্বাবুয়ের সংগ্রহ ৩ উইকেট হারিয়ে ১৫৭ রান।
৩০৪ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নামা জিম্বাবুয়ের ইনিংসের শুরুতেই আঘাত হানেন মোস্তাফিজুর রহমান। এই বাঁহাতি পেসারের করা ইনিংসের প্রথম ওভারের শেষ বলটি স্বাগতিক দলের ওপেনার রেগিস চাকাভার (২) ব্যাটের কানায় লেগে স্ট্যাম্প ভেঙে দেয়। পরের ওভারেই আঘাত হানেন শরিফুল ইসলাম। তার ওই ওভারের পঞ্চম বলে মোসাদ্দেক হোসেনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন আরেক জিম্বাবুইয়ান ওপেনার তারিসাই মুসাকান্দা (৪)।
শুরুর সেই ধাক্কা সামলে স্বাগতিকদের ঘুরে দাঁড়ানোর পথ দেখাচ্ছিলেন ইনোসেন্ট কাইয়া ও ওয়েসলে মাধেভেরে। দুজনে মিলে তৃতীয় উইকেট জুটিতে গড়েছিলেন ৫৬ রানের জুটি। কিন্তু ১৪তম ওভারে ভুল বোঝাবুঝিতে রানআউট হয়ে ফেরেন মাধেভেরে (১৯)। মেহেদি হাসান মিরাজের করা ওই ওভারে আলতো টোকায় বল মিড-উইকেটে পাঠিয়ে দেন কাইয়া। এক রান ঠিকঠাক পূর্ণও করেন তারা। ওদিকে সেখানে থাকা ফিল্ডার মাহমুদউল্লাহর হাত গলে বল বেরিয়ে গেলে দ্বিতীয় রানের লক্ষ্যে দৌড়ান দুই ব্যাটার। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ সঙ্গে সঙ্গে বল ফেরত পাঠালে বোলার মিরাজ মাধেভেরে ক্রিজে ব্যাট স্পর্শ করার আগেই নন-স্ট্রাইক প্রান্তের স্ট্যাম্প ভেঙে দেন।
এর আগে লিটন দাস, মুশফিকুর রহিম আর তিন বছর পর ওয়ানডেতে ফেরা এনামুল হক বিজয়ের ফিফটিতে ভর করে ২ উইকেট হারিয়ে ৩০৩ রানের বড় সংগ্রহ দাঁড় করায় বাংলাদেশ।
আজ শুক্রবার হারারেতে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে বেশ ভোগান্তিতেই পড়তে হয় বাংলাদেশকে। উইকেটে সকালের দিকে মুভমেন্ট পাচ্ছিলেন পেসাররা। সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। তবুও তারা অনেক্ষণ হারাতে দেননি কোনো উইকেট।
দুজনের জুটিতেই ১০০ পার করে বাংলাদেশ। তামিম-লিটনের উদ্বোধনী জুটিতে এ নিয়ে চতুর্থবার ঘটে এমন ঘটনা। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৫৪তম হাফ সেঞ্চুরির সঙ্গে তামিম স্পর্শ করেন দেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এই ফরম্যাটে ৮ হাজার রানের মাইলফলক।
এরপর অবশ্য খুব বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি তামিম। ৯ চারে ৮৮ বলে ৬২ রান আসে তার ব্যাট থেকে। দলের রান তখন ১১৭। শুরুতে কিছুটা অস্বস্তিতে ছিলেন লিটন। জীবন পেয়েছিলেন, রান করতে পারছিলেন না, খেলছিলেন ডট বল। তবে হাফ সেঞ্চুরি তোলার পরই খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসেন এই ব্যাটার।
৭৫তম বলে এসে ফিফটি পেয়েছিলেন লিটন। পরে ১৪ বল ক্রিজে ছিলেন, তুলেছেন ২১ রান। কিন্তু যখনই উইকেটে টিকে থাকার ফায়দা তুলতে যাবেন, তখনই লিটন টান পান পেশিতে। ৮৯ বলে ৮১ রান করে মাঠ ছাড়তে হয় রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে।
এতে একরকম সুযোগই আসে এনামুল হক বিজয়ের কাছে। লিস্ট-এ ক্রিকেটে হাজারের ওপর রান করে রেকর্ড গড়েছিলেন, তাতেই ডাক আসে জাতীয় দলে। টেস্ট, টি-টোয়েন্টি খেলে ফেললেও বিজয় সুযোগ পাচ্ছিলেন না ওয়ানডেতেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজে স্কোয়াডে থাকলেও তিন ম্যাচেই থাকতে হয়েছে সাইড বেঞ্চে বসে।
বিজয়ের কাছে সুযোগটা এসেছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে। তিনি কতটা কাজে লাগাতে পেরেছেন? অনেকটাই। ইনসাইড এজ হয়েছেন, ক্যাচও তুলেছেন। কিন্তু বিজয়কে দেখা গেছে আত্মবিশ্বাসী, খেলেছেন দারুণ কিছু শটও। যদিও সবকিছুতে পূর্ণতা দিতে পারেননি সেঞ্চুরি করে।
৬ চার আর ৩ ছক্কায় ৬২ বলে ৭৩ রান করেছিলেন বিজয়। ভিক্টর নিউয়াচির বল তুলে মারতে গিয়ে তিনি ক্যাচ তুলে দেন লং অফে দাঁড়িয়ে থাকা ওয়েলিংটন মাসাকাদাজার হাতে। বাংলাদেশের ইনিংসটা পরে আর এগোয়নি ঝড়ের গতিতে। মুশফিকুর রহিম ক্রিজে ছিলেন, পরে এসেছিলেন আরেক অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও।
ইনিংসের ৪৯তম ওভারে এসেছে কেবল ৭ রান। তবুও অবশ্য দলীয় সংগ্রহ ছাড়িয়েছে তিনশ। মাহমুদউল্লাহ ১২ বলে ২০ ও মুশফিকুর রহিম অপরাজিত ছিলেন ৪৯ বলে ৫২ রানে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৫, ২০২২
এমএইচএম