ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

শ্রীলঙ্কার পুনর্জন্মের পুনরাবৃত্তি নাকি ভারতের জয়

মাহমুদুল হাসান বাপ্পি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (স্পোর্টস) | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০২২
শ্রীলঙ্কার পুনর্জন্মের পুনরাবৃত্তি নাকি ভারতের জয় ছবি: শোয়েব মিথুন

সিলেট থেকে: প্রকৃতিতে শীতের আবহ। ভোর হলে নেমে আসছে শিশিরও।

শ্রীলঙ্কা দলটাও ঠিক তেমন। একটু একটু করে গড়ে তুলেছে নিজেদের। ঠিক যেন ছেলেদের এশিয়া কাপের পুর্নজন্মের পুনরাবৃত্তি। প্রথম ম্যাচে ভারতের কাছে বড় হারে শুরু। মুষড়ে পড়াই তাদের জন্য ছিল নিয়তি। কিন্তু লঙ্কানদের এই দলটা আলাদা। তাদের ‘টিম স্পিরিট’ অন্যরকম।

অধিনায়ক চামারি আতাপাত্তুর ভাষায়, ‘প্রতিপক্ষ নয়, নিজেদের পরিকল্পনায় স্থির থেকে’ মিলেছে সাফল্য। সিলেটের চা বাগানে যখন হারমানপ্রিত কৌরের সঙ্গে ট্রফি হাতে দাঁড়াচ্ছেন চামারি, তখন নিশ্চয়ই মনের কোণে নিজের কাছেই ট্রফি লুকিয়ে রাখার ইচ্ছে।  

কিন্তু সেটা তিনি প্রকাশ করতে পারছেন না। হাসছেন, ‘চাপ মুক্ত’ রাখতে চাইছেন দলকে। ফাইনালের আগের দিন অনুশীলন করতে এসেছিল পুরো শ্রীলঙ্কা দল। ভারতের সংবাদ সম্মেলন করতে আসা শুধু অধিনায়ক হারমানপ্রিতের। তারই আবদার ছিল, ট্রফিটা হাতে তিনি ছবি তুলতে চান চা বাগানে।

ছবি তোলার চেয়ে বোধ হয় তার ঘুরতে যাওয়ার শখই মূখ্য এখানে। দুই অধিনায়ককে নিয়ে চা বাগানে যেতে শেষ অবধি বাধ্য হয়েছেন এসিসির কর্মকর্তারা। হাসিমুখে দাঁড়িয়ে তারা ট্রফি হাতে পোজ দিয়েছেন ফটোগ্রাফারদের জন্য। কিন্তু আগামীকাল কাউকে ছাড় দেওয়ার চিন্তা যে নেই, সংবাদ সম্মেলনেই স্পষ্ট করেছেন অধিনায়করা।

চামারির কাছেই যেমন, ভারত পরিষ্কার ফেভারিট হলেও দলকে তিনি চাপ নিতে নিষেধ করেছেন, ‘ভারত ফেভারিট দল এই টুর্নামেন্টে। তাদের ভালো ক্রিকেটার আছে। কিন্তু অধিনায়ক হিসেবে, আমি কোনো চাপ নিতে চাই না। যারা ভালো ক্রিকেট খেলবে, ভুল কম করবে, তারাই জিতবে। ’

ভারতের জন্য এশিয়া কাপ ছিল ‘পরীক্ষার মঞ্চ’। সামনে বিশ্বকাপ, ওই টুর্নামেন্টে ভালো করতে এখানে সবাইকে বাজিয়ে দেখেছেন বলে পাকিস্তানের কাছে হারের পর জোর দিয়ে বলেছিলেন কোচ রমেশ পাওয়ার। ফাইনালের আগে একই কথার পুনরাবৃত্তি করেছেন হারমানপ্রিত, ‘আরও বেশি ম্যাচ উইনার’ খুঁজে বের করার লক্ষ্য ছিল বলে জানিয়েছেন।

যদিও তার কথায় ছিল প্রতিপক্ষের প্রতি সম্মানও, ‘আমরা তাদের দলে অনেক ইতিবাচকতা দেখেছি। বিশেষত শেষ বল পর্যন্ত তারা ছাড় দেয় না। শ্রীলঙ্কাকে লড়াই করতে দেখা অসাধারণ ব্যাপার। যখনই কোনো দল ভালো ক্রিকেট খেলবে, আপনি সবসময় তাদের থেকে শিখতে পারেন। ’

এশিয়া কাপের মঞ্চে পরীক্ষার সুযোগ সত্যিকার অর্থে কারো থাকলে, সেটি ছিল ভারতেরই। এশিয়া কাপের এ নিয়ে অষ্টম আসর বসেছে; সবগুলোর ফাইনালেই খেলছে তারা। ছয়বার জিতেছে শিরোপা, একবার পারেনি তারা; সেবার জিতেছিল বাংলাদেশ।  

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষের পরিসংখ্যানেও ভারতের জন্য আছে স্বস্তির সুবাস। ২৩ দেখার ১৭ ম্যাচেই জয় এসেছে তাদের। লঙ্কানরা শেষবার জিতেছিল এখন থেকে আরও অন্তত আট বছর আগে।  

এশিয়া কাপ যতই ভারতের জন্য ‘পরীক্ষার’ টুর্নামেন্ট হোক, শ্রীলঙ্কার জন্য লড়াইয়ের। সবদিক থেকেই ক্রান্তির সময় পাড় করেছে তারা। দেশ হিসেবেও ভুগতে হচ্ছে তাদের। ওই স্মৃতি ফাইনালের আগের সংবাদ সম্মেলনেও নিয়ে এলেন চামারি। ছেলেদের থেকে অনুপ্রাণিত হওয়ার কথাও বললেন।

‘সবকিছুই কঠোর পরিশ্রমে হয়। গত বছর ছেলে ও মেয়েদের দল, এমনকি দেশ হিসেবেই আমাদের ভুগতে হয়েছে। কিন্তু এখন আমরা খুশি কারণ ছেলেরা এশিয়া কাপ জিতেছে, আমরাও ফাইনালে সেরাটা দিয়ে এর পুনারাবৃত্তি করতে চাই। ’

সিলেট স্টেডিয়াম ১৫ দিনে সাক্ষী হয়েছে অনেক অদ্ভূত সময়ের। তীব্র গরম হয়ে বৃষ্টি কিংবা শীতের আগমন; আবহাওয়া পালা বদলেছে বারবার। বহু আশা নিয়ে আসা বাংলাদেশ বাদ পড়েছে সেমিফাইনালের আগেই। থাইল্যান্ড ‘অপ্রত্যাশিতভাবে’ পাকিস্তানকে হারিয়ে সেমিফাইনাল খেলে গেছে।  

শুরুর কড়াকড়ি হারিয়ে গেছে সময়ের ভেলায়। চায়ের পাতার কোথাও কোথাও ‘কুঁড়ি’ও ফুটেছে এতদিনে। শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটে নতুন সূর্যোদয় হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। শরতের গৌধূলিতে সিলেটে তাদের আরও একবার রঙিন হওয়া হবে নাকি ভারত বজায় রাখবে তাদের ‘স্ট্যান্ডার্ড’, উত্তরটা শনিবার মিলবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০২২
এমএইচবি/এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।