রোমাঞ্চের চোরাবালিতে হাবুডুবু খাচ্ছে বিশ্বকাপ। অস্ট্রেলিয়ার কনকনে ঠাণ্ডা আর আষাঢ় দিনের মতো বৃষ্টিতে দোলা দিচ্ছে ক্রিকেটের আবহ সংগীতও।
তবুও অস্ট্রেলিয়া থেকে হাজার মাইল দূরের বাংলাদেশে বসে বিশ্বকাপের হাওয়া পুরোপুরি গায়ে লাগাতে অপেক্ষা করতে হবে সোমবার সকাল অবধি। কর্মব্যস্ত দিনের শুরুতেই যে সুদূরের অস্ট্রেলিয়ায় শুরু হবে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ পথচলা।
দল যতই খারাপ হোক কিংবা ফরম্যাট যেমন-তেমন; বাংলাদেশ ছাড়া কোনো কিছুই জমে ওঠে না। সুরের ছন্দে তাল পাওয়া যায় না ঠিকঠাক। বিশ্বকাপ শুরু হয়েছে আরও অন্তত সপ্তাহখানেক আগে। এর মধ্যে ঘটেও গেছে অনেক কিছু। দুবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ যেমন বাদ পড়েছে টুর্নামেন্ট থেকে, আবার ফিন অ্যালেন ধরেছেন অবিশ্বাস্য ‘ফ্লাইং ক্যাচ’।
ক্রিকেট যেন চূড়াতে পৌঁছেছে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে। অথচ বাংলাদেশ যখন টুর্নামেন্ট শুরু করছে, শূন্যতার অতলে হারিয়ে যাওয়া এক দল তারা। হারতে হারতে ক্লান্ত, ভেতরে-বাইরে বিধ্বস্ত। মাঝে আরব আমিরাতের বিপক্ষে দুই ম্যাচ বাদ দিয়ে ফল খুঁজতে গেলে হতাশাই কেবল আষ্টেপৃষ্ঠে ধরবে।
এর মধ্যে দল গিয়েছে নানা ‘পরীক্ষা-নিরীক্ষা’র মধ্যে। বিশ্বকাপের আগে সেটিও পুরোপুরি করা যায়নি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচটি ভেসে গেছে বৃষ্টিতে, এর আগের প্রস্তুতি ম্যাচে হারতে হয়েছে আফগানিস্তানের বিপক্ষে। ‘দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া’র আসলে কতটুকু করা গেছে, তা নিয়ে সংশয় কাটেনি পুরোপুরি।
ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে সাকিব আল হাসানের দাবি অবশ্য ছিল ভিন্ন, ‘দেখেন, এখানে ১৫ জন খেলতে এসেছে। সবাই তৈরি ও ফিট। প্রতিটা পজিশনে মানিয়ে নেওয়ার মতো সক্ষমতা রাখে। আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই সবাই সেটা পারবে, ওপেন মাইন্ডেড থাকবে; দলের প্রয়োজনে যাকে যখন যেখানে খেলতে হয় বা যে ওভার বোলিং করা লাগে, যে জায়গায় ফিল্ডিং করা লাগে সবাই সেটার জন্য প্রস্তুত থাকবে। ’
‘বিশেষত টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ওই দলগুলো ভালো করে যাদের মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা বেশি। আমি আশা করি দলের সবার এই জ্ঞানটা আছে। এ সম্পর্কে সবাই অবগত, যাকে যখন লাগবে প্রস্তুত থাকতে হবে; সেই জায়গায় তারা প্রস্তুতও আছে। এখান থেকে আমাদের ১১ জনকে নিতে হবে। আমি নিশ্চিত যে ১১ জনকেই নেয়া হোক, তারা দেশের হয়ে ভালো খেলার চেষ্টা করবে। ’
সাকিব আল হাসান জোর দিয়েই বলেছেন কথাটা। তবে ভেতরে-বাইরে দল কতটা আটকে পড়া, তিনি প্রমাণ দিয়েছেন তারও। গত কয়েকদিন ধরে ক্রিকেটারদের সংবাদমাধ্যমে কথা বলায় অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন।
আইসিসির আয়োজন করা সংবাদ সম্মেলন বলেই হয়তো আসতে হয়েছে সাকিবকে। এসেও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। বাংলাদেশ অধিনায়কের কাছে প্রশ্ন ছিল, একমাত্র লিটন দাসই ইনিংস উদ্বোধনে নিয়মিত পারফর্ম করছেন। তবুও তাকেই কেন সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে ওই জায়গা থেকে, এর ব্যাখ্যা কী? টুকটাক পরিসংখ্যানও জানানো হয়েছিল সাকিবকে।
উত্তর না দিয়ে তিনি করলেন পাল্টা প্রশ্ন, ‘আপনার কি মনে হয় লিটন ওপেন করলেই বা ওপেনার ঠিক হয়ে গেলে আমরা জিতবো?’ কেন এমন প্রশ্ন এর ব্যাখ্যা দিতে গেলেন সাংবাদিক। সাকিব এবার রীতিমতো রেগে গিয়ে বললেন, ‘আপনি যেভাবে বলছেন, ডিসিশন মেকারের জায়গায় আপনাকে রাখতে হবে। ’
দলকে সংঘবদ্ধ রাখতে সবচেয়ে বড় কারিগর সাকিবই হবেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এখন অবধি ভালো কিছুর দেখা না পাওয়ায় তাদের ওপরের চাপও স্পষ্ট। সেদিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থানেই আছে নেদারল্যান্ডস।
প্রত্যাশার ভার এমনিতেও তাদের ওপর নেই। প্রথম রাউন্ডে লড়াকু ক্রিকেট আর কিছুটা ভাগ্যের সাহায্য তাদের তুলে দিয়েছে সুপার টুয়েলভে। তবুও দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা টম কুপার বলছেন, তারা এসেছেন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতেই।
সংবাদ সম্মেলনের পুরোটাজুড়েই বাংলাদেশের সাংবাদিকদের প্রশ্ন নিতে হয়েছে কুপারকে। নিজের দল নিয়ে তাই তেমন কিছু বলার সুযোগও পাননি। যেটুকু বলেছেন, বাংলাদেশ কেন্দ্রিক। তার কথায় স্মৃতির রোমন্থনও ছিল।
২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শেষবারের দেখায় কাছাকাছি গিয়েও তাদের হারতে হয়েছিল কেবল ৮ রানে। তিন দেখায় তাদের জয়ও আছে একটি। কুপার মনে করিয়ে দিয়েছেন ‘কাছাকাছি ম্যাচগুলোর’ কথা। সংখ্যাটা সোমবার দুইয়ে চলে গেলেও ‘আপসেট’ হবে না বলেই বিশ্বাস কুপারের।
‘আপনারা এটাকে আপসেট ভাবছেন কিন্তু আমরা সেভাবে দেখছি না। এখানে এসেছি লড়াই করতে। অতীতে তাদের সঙ্গে ক্লোজ ম্যাচ আছে। বাংলাদেশকে হারাতে না পারার কোনো কারণ দেখছি না। ’
টি-টোয়েন্টিতে দলগুলোর ব্যবধান এমনিতেই কমে আসে। ডাচদের তাই ভালো চ্যালেঞ্জই দেওয়ার কথা। এর মধ্যে সুর-তাল-লয় ও ছন্দ ঠিক করতে হবে বাংলাদেশের। সিনিয়রদের ছেটে ফেলা হয়েছে, বদলে গেছেন কোচ-অধিনায়কও; তাসমান সাগরের পাড়ে এবার ভাগ্য বদলের লড়াইটা লড়তে হবে সাকিব আল হাসানদের। রাগ, জেদ, ক্ষোভ থেকে হোক; তবুও।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২২
এমএইচবি/এমএইচএম