ঢাকা, রবিবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চমেক হাসপাতাল

পদ ছাড়তে রাজি নন তিনি

মিজানুর রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২২
পদ ছাড়তে রাজি নন তিনি ...

চট্টগ্রাম: এক বছরের বেশি সময় আগে পেয়েছেন পদোন্নতি। চতুর্থ শ্রেণি থেকে ৩য় শ্রেণিতে পদোন্নতি পাওয়ায় ভোগ করছেন সকল সুযোগ সুবিধাও।

 দায়িত্বও পালন করছেন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হয়ে। নিয়ম অনুযায়ী এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে পদোন্নতি পেলে কর্মচারী ইউনিয়নও ছাড়তে হয় পদোন্নতির সঙ্গে সঙ্গে।
 

কিন্তু পদোন্নতি পাওয়ার এক বছর পরও কর্মচারী ইউনিয়নের পদ ছাড়তে নারাজ তিনি। বরং কমিটির মেয়াদ ফুরালেও কৌশলে আরও এক বছর মেয়াদ বাড়াতে চলছে চেষ্টা।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী সমিতির সভাপতি আব্দুল মতিন মানিক। ২০২১ সালের ১৭ অক্টোবর অফিস সহায়ক (চতুর্থ শ্রেণি)  পদ থেকে তৃতীয় শ্রেণির পদে পদোন্নতি পান তিনি। এর কিছুদিন পর কর্তৃপক্ষ ওয়ার্ড মাস্টার হিসেবে দায়িত্ব দেন। বর্তমানে কাজও করছেন ওয়ার্ড মাস্টারের। নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতি পাওয়ার পর ছাড়তে হবে সাংগঠনিক পদ। কিন্তু পদোন্নতি পাওয়ার এক বছর অতিক্রম হলেও স্বেচ্ছায় পদ না ছাড়ায় এখন প্রশ্ন উঠছে- সভাপতি পদে কী মধু?

হাসপাতালের কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,  হাসপাতাল এলাকায় কর্মচারী সমিতির নামে রয়েছে একটি ক্যান্টিন ও একটি ছোট দোকান। যার প্রতিমাসে ভাড়া বাবদ আয় ৩ থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা৷ নিয়ম অনুযায়ী এসব প্রতিষ্ঠানের টাকা যাওয়ার কথা সংগঠনের হিসাবে। কিন্তু দুই বছর আগে দুদকের অভিযানে বন্ধ করে দেওয়া হয় এসব হিসাব। ফলে এ আয় সংগঠনের হিসাবে না ঢুকে পুরোটাই ঢুকছে সভাপতির পকেটে। এছাড়া আউটসোর্সিং সহ বিভিন্ন বাণিজ্যে সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করায় এ পদ ছাড়তেও চাইছেন না মানিক।  

অভিযোগ রয়েছে, মানিকের অনিয়মের বিষয়ে কোনও কর্মচারী প্রতিবাদ করলে হাসপাতাল পরিচালকের নাম ভাঙ্গিয়ে কর্মচারীদের বদলি ও শাস্তির মুখোমুখি করার হুমকি দেওয়া হয়। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মানিক দাবি করেন, একটি পক্ষ তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবো না। তবে এটুকুই বলবো, যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে সবগুলোই মিথ্যা। এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন।

এদিকে চমেক হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সমিতির বর্তমান কমিটির মেয়াদ চলতি মাসেই শেষ হতে যাচ্ছে। কিন্তু ক্যান্টিন ও দোকানের আয় আত্মসাৎ করতে দুমাস আগেই কমিটির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানোর আবেদন করেছেন মানিক ও সাধারণ সম্পাদক। সর্বশেষ কেন্দ্রীয় কমিটি তাদের মেয়াদ ছয় মাস বৃদ্ধি করে। যদিও সমিতির সদস্যরা বলছেন, সভাপতি নিজেই অবৈধভাবে পদ দখল করে আছেন, তার ওপর মেয়াদ বৃদ্ধি সম্পূর্ণ বেআইনি।  

জোর করে সভাপতির পদ দখলে রাখা ও প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী সমিতির সাবেক সভাপতি বেলাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সহ কয়েকটি পদ খালি। তারপরও অবৈধভাবে সভাপতির পদ আঁকড়ে ধরে আছেন মানিক। পদোন্নতি পাওয়ার পর যেখানে তিনি স্বেচ্ছায় পদ ছাড়ার কথা সেখানে জোর করে চেয়ারে বসে আছেন।  গত দুই-আড়াই বছরে প্রায় কোটি টাকা নিজের পকেটে ঢুকিয়েছেন মানিক। অথচ প্রতিবছর ক্যান্টিন ও দোকান থেকে আসা আয়ের অর্থ দিয়ে কর্মচারীদের বোনাস দেওয়ার নিয়ম রয়েছে।

অবৈধভাবে কমিটির মেয়াদ বৃদ্ধি এবং সভাপতির পদ অবৈধভাবে দখল করার বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক, কলেজ অধ্যক্ষ সহ সংশ্লিষ্টদের কাছে চিঠি দিয়েছেন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী সমিতির সদস্যরা। চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী সংগ্রাম ঐক্য পরিষদের নামে এই চিঠি দেন তারা।

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনও অভিযোগ পাননি বলে জানান।  তিনি বলেন, এটি সংগঠনের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমাদের কাজ সঠিকভাবে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা। সেবা দিতে কোনও কর্মচারী অবহেলা করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থান নিবো।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২২
এমআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।