ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

টিএসসির ভাবনা থেকে অয়নের স্টেশনতলা

মোহাম্মদ আজহার, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৩
টিএসসির ভাবনা থেকে অয়নের স্টেশনতলা ...

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: যে আক্ষেপ ৫৬ বছরেও কাটেনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীদের। আক্ষেপের মাঝেই অনেকে ছাত্রজীবন শেষে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকও হয়েছেন।

কেউ আবার সেই শিক্ষকতা পেশা থেকেও নিয়েছেন অবসর। এরপরও দেখা হয়নি একটি টিএসসি (টিচার-স্টুডেন্ট সেন্টার)।

বর্তমান সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদও ছিলেন এ বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষার্থী। টিএসসি নির্মাণের দাবি তোলা শিক্ষার্থীদের একজন ছিলেন তিনিও। ২০২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে অতিথি হিসেবে আসেন তিনি। ৩০ বছর পরও সে আক্ষেপের কথা আরও একবার উচ্চারণ করেন ড. হাছান মাহমুদ।  

শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যেখানে একসঙ্গে সময় কাটান, চায়ের আড্ডায় যেখানে গড়ে ওঠে ছাত্র-শিক্ষকের গভীর সম্পর্ক। সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত দেশের অন্যতম প্রাচীন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

কাজী মাহমুদ হাসান অয়ন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন বছর দুয়েক আগে। অন্য সবার মত অয়নেরও আছে টিএসসি না থাকার আক্ষেপ। সংস্কৃতিমনা অয়নের আক্ষেপটা একটু বেশিই বলা যায়। শুধু টিএসসি-ই না, তার আক্ষেপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন কিংবা বটতলার মত গল্পে আড্ডায় মেতে থাকার একটি জায়গা নিয়েও। তাই কিছু একটা করার পরিকল্পনা দীর্ঘদিনের। কিন্তু কি এমন করা যায়- যেখানে সবাই ছুটে আসবে প্রতিদিন একবার হলেও? 

অনেক পরিকল্পনার পর অয়ন দিয়েছেন একটি চায়ের দোকান। শাটল ট্রেনের ক্যাম্পাস হওয়ায় ‘স্টেশন’ শব্দটা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে খুবই পরিচিত। তাই দোকানের নাম দিলেন ‘স্টেশনতলা’। একটু ভিন্নভাবে দেখার চেষ্টা নিজের স্বপ্নটাকে। সঙ্গে নিলেন আরও চার বন্ধু- দর্শন বিভাগের আবু বকর চৌধুরী, বন ও পরিবেশবিদ্যা ইনস্টিটিউটের সাজ্জাদ আনাম পিনন, ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শোয়েবুল হাসান মাসুদ এবং ফিনান্স বিভাগের চৌধুরী সাজিদ মোস্তফা আশফিকে। তারা সবাই চবির ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী।  

দেশের অন্যতম একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে পাঁচ বন্ধুর দেওয়া এই চা দোকানের গল্পটা শুনতে অবাক লাগলেও চবির রেল স্টেশনের পাশেই গড়ে ওঠা স্টেশনতলা নজর কাড়বে আপনারও। সন্ধ্যা নামলেই যেখানে আসর জমান শিক্ষার্থীরা। গানে-গল্পে মেতে থাকেন সবাই। স্টেশনতলায় এককাপ চা খেতে অনেকেই আসেন দূর-দূরান্ত থেকে।  

যেখানে শিক্ষকরাও আসেন চায়ের স্বাদ নিতে। চা খেতে এসে যদি পেয়ে যান প্রিয় বা পরিচিত কোনও শিক্ষার্থী, তাহলে সময়টা ভালো কাটে শিক্ষকদেরও। বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে আসা মানুষের জন্যও উন্মুক্ত এক জায়গা স্টেশনতলা। যেখানে বসে সময় কাটানো যায় অনায়াসে।  

দূর থেকে এসব দৃশ্য দেখে অয়ন পান মধুর ক্যান্টিন আর টিএসসি’র তৃপ্তি। প্রতিদিন সাজাতে থাকেন নতুন নতুন পরিকল্পনা। কিভাবে আরও জমজমাট করে তোলা যায় জায়গাটিকে সে চিন্তায় এখন ব্যয় করেন দিনের বেশিরভাগ সময়। একটা টিএসসির আক্ষেপ হয়তো কমানো যাবে না, তবুও চেষ্টা করে যেতে চান তিনি। স্বপ্ন দেখেন একটা সময় টিএসসির আক্ষেপ কিছুটা হলেও মেটাবে এ স্টেশনতলা। কর্ম সংস্থান হবে অনেক শিক্ষার্থীর।

স্টেশনতলা নিয়ে জানতে চাইলে এভাবেই প্রায় ঘণ্টাখানেক নিজের অনুভূতি এবং স্বপ্নের কথা বলতে থাকেন কাজী মাহমুদ হাসান অয়ন। হয়তো আরও অনেক শোনা যেত এ স্টেশনতলার গল্প।  

অয়নের বাকি বন্ধুদের অনুভূতি জানতে চাইলে তারা বলেন, আইডিয়াটা অয়নের। আমাদের কাছেও ভালো লেগেছিল ওর এ আইডিয়া। এরপর থেকে একসঙ্গেই কাজ করছি। অল্প সময়ের মধ্যে স্টেশনতলা এমন জমজমাট হয়ে উঠবে সেটা আমাদের ভাবনায় ছিলো না। অয়ন সবসময় স্টেষনতলা নিয়ে নতুন নতুন পরিকল্পনা করে। আশাকরি একদিন স্টেশনতলা অনেক বড় কিছুতে পরিণত হবে। হয়তো এ নামটাই হবে একটা ব্র্যান্ড।  

স্টেশনতলার উদ্যোক্তা কাজী মাহমুদ হাসান অয়ন বলেন, আমি যখন চায়ের দোকান হিসেবে স্টেশনতলার যাত্রা শুরু করছিলাম, তখন অনেক পরিচিত মানুষ ও বন্ধুরা কত কিছুই বলেছিল। আমি এসব উপেক্ষা করেছি। সবসময়ই আমার ব্যবসার প্রতি ঝোঁক ছিলো। একটা সময় পরিবার থেকেও ব্যবসার প্রতি নিরুৎসাহিত করা হতো, তবে আমি নিজের পথ বেছে নিয়েছি। এ কাজের পাশাপাশি আমার আরও কিছু ব্যবসা আছে, সেগুলোও চলছে। এখান থেকে লাভ করার পরিকল্পনার চেয়ে আমি সবসময় স্টেশনতলাকে আনন্দঘন একটা জায়গা হিসেবে দেখতে চাই।

অয়ন বলেন, স্টেশনতলা একটা সময় শুধু চায়ের দোকান থাকবে না। অনেক পরিকল্পনা আছে স্টেশনতলা নিয়ে। আমি চাই শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সুন্দর প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে। যেখানে শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানও হবে। ইতিমধ্যে স্টেশনতলায় ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছে চবির দুইজন সাবেক শিক্ষার্থী। অন্য কাজের পাশাপাশি তারা এখানে দৈনিক পাঁচ ঘণ্টা সময় দিচ্ছে। ২০২২ সালের ১৬ ডিসেম্বর শুরু হয় স্টেশনতলার যাত্রা। অল্প সময়ের মধ্যে অনেক ভালো সাড়া পেয়েছি আমরা। আগামী ১৫ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্টেশনতলার আয়োজনে বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসব হবে। এভাবে ভবিষ্যতে স্টেশনতলাকে শিক্ষার্থীদের কাছে ক্যাম্পাসের সবচেয়ে উৎসবমুখর স্থান হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৩
এমএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।