ঢাকা, শুক্রবার, ১১ আশ্বিন ১৪৩১, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

আশি পেরিয়েও চির তরুণ সুফি মিজানুর রহমান

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২৩
আশি পেরিয়েও চির তরুণ সুফি মিজানুর রহমান ...

চট্টগ্রাম: সুফি মিজানুর রহমানের সম্পর্কে যতোই বলা হোক না কেন, তবুও কম বলা হবে। তিনি ৮০ পেরিয়েও এখন কাজ করেন তরুণের মতো।

কাজে নেই তাঁর ক্লান্তি। কাজ পাগল মানুষটির আজ শুভ জন্মদিন।
পেয়েছেন একুশে পদকও। তাঁর ছেলেরাও আজ সমাজে বিভিন্ন ব্যবসায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

দেশবরেণ্য এ শিল্পপতি অনেকের আইডল, পথপদর্শক। শুধু সুফিজম কিংবা ব্যক্তি হিসেবেই নন তারুণ্যের কাছে সুফি মিজানুর রহমান একটি প্রতিষ্ঠান। যাঁর কণ্ঠ থেকে বেরিয়ে আশা প্রতিটি শব্দ ধারণ করেন, লালন করেন অনেকেই। তাঁরই দেখিয়ে দেওয়া পথে হাঁটতে ভালোবাসেন এই প্রজন্ম।

সুফি মিজানুর রহমানের বড় সন্তান মোহাম্মদ মহসিন বাবা সম্পর্কে নিজের অভিব্যক্তি জানাতে গিয়ে বলেন, শুধু আমরাই নই- এই দেশের লাখো-কোটি যুবক সুফি মিজানুর রহমানকে পথপ্রদর্শক মনে করেন। দীর্ঘ জীবনে তাঁর চলার পথ খুব মসৃণ ছিলো না। জীবনের প্রতিটি মূহূর্তের সাথে লড়াই করে শূন্য থেকে শিখরে পৌঁছেছেন। জীবনের প্রতিটি ধাপে বাবা যতটুকুই শিখেছেন সবটুকুই তারুণ্যের জন্য উৎসর্গ করেছেন। বাস্তব জ্ঞানের মহাসমুদ্র সুফি মিজান। যোগ করেন মহসিন।

সুফি মিজানুর রহমান একাত্তর পরবর্তী সময়ে ব্যবসা শুরু করেন চট্টগ্রাম। এর আগে তিনি একটি ব্যাংকে সামান্য বেতনের চাকরি করতেন। অর্ধশত বছরে ব্যবসায়ি হিসেবে তিনি শুধু নিজেকেই গড়েননি, গড়েছেন সন্তানদেরও। শিক্ষা ও জ্ঞানে সুফি মিজানের ৮ সন্তান আজ ঈর্ষণীয়।

ব্যবসায়ি হিসেবে সুফি মিজানের অর্ধশত বছরের পথচলায় কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ১০ হাজার মানুষের। এই দশ হাজার মানুষের ওপর নির্ভর করে জীবন নির্বাহ করছেন লাখো পরিবার।

তাঁর গড়া প্রতিষ্ঠানগুলো বছরে পাঁচ হাজার কোটি টাকা টার্নওভার করলেও মানবিকতা ও মনুষ্যত্বকে কখনোই ভুলে যাননি সুফি মিজান। দিনে দিনে ব্যবসায়িকভাবে তিনি যতই বড়ই হয়েছেন, ততই ব্যাপ্তি বেড়েছে তাঁর। ততই সমৃদ্ধ হয়েছেন মানবিক উজ্জ্বলতায়-এমনটাই দাবি সুফি মিজানুর রহমানের আরেক সন্তান আমীর হোসেন সোহেলের।

তিনি বলেন, বাবা প্রায়শঃই বলেন- ‘শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হয় পাপড়ির মতো। শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা তুমি যদি শুধু তোমার মধ্যেই বেঁধে রাখো তোমার মতই কোনো একদিন তারও মৃত্যু হবে। যদি বেঁচে থাকতে চাও তোমার অর্জন কোটি প্রাণে ছড়িয়ে দাও। ’ সোহেল বলেন, বাবা শুধু আমাদের কাছেই নন তিনি কোটি তারুণ্যের আলোকবর্তিকা।

আমীর হোসেন সোহেল বলেন, বাবাকে নিয়ে আমার লেখা একটি কবিতার শেষ চারটি লাইন এমন-

সুফি মিজানরা মাসে মাসে জন্মায় না
সুফি মিজানরা যুগে যুগেও জন্মায় না
সুফি মিজানরা জন্মায় শতাব্দীতে দু-চারজন।
আমরা অতীব ভাগ্যবান,
আমাদের মাঝে উপস্থিত সুফি মিজান একজন।

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে শিল্প-বাণিজ্যের ডালপালা ছড়ানো সুফি মিজানের জন্ম নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জে। তবে চট্টগ্রামেই তাঁর স্থায়ী নিবাস। ৮১ বছরে পা রাখা সাদামাটা মানুষটি শুধু দেহেই নয় মনেও বড় হয়েছেন দ্যুতি ছড়ানো সুফিয়ানায়। যারা তাঁকে খুব কাছ থেকে চেনেন, তারা জানেন ধর্মপ্রাণ সুফি মিজান বছরের অধিকাংশ দিনই রোজা করেন। আর খাবারের তালিকাও অতি সাধারণ। সদা হাস্যোজ্জ্বল বিনয়ী একজন মানুষ সুফি মিজান।

লোকমুখে শোনা যায়, কোনও সাক্ষাতে সুফি মিজানের আগে কখনো তাঁকে কেউ সালাম দিতে পারে না, তিনিই আগে সালাম দিয়ে হাত বাড়ান। অনেক বড় শিল্পপতি হয়েও তাঁর সাধারণ কিছু গুণ তাঁকে সাধারণের কাছে অসাধারণ একজন মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

সাত ছেলে, এক মেয়ের জনক তিনি। ছেলেদের মধ্যে চারজন অস্ট্রেলিয়া এবং বাকি তিনজন যুক্তরাষ্ট্র থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে কেউই বিদেশে স্থায়ী নিবাস গড়েননি। দেশে ফিরে বাবার গড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর হাল ধরেছেন। ছেলেরা নতুন নতুন শিল্প গড়ে বাবার প্রচেষ্টাকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে গেছেন ও যাচ্ছেন। তাঁদের সাথে যুক্ত হয়েছেন সুফি পরিবারের তৃতীয় প্রজন্ম ভিক্টর মহসিন।

সহধর্মিণী তাহমিনা রহমান ছায়ার মতোই সুফি মিজানের পাশে থাকেন। অনুপ্রেরণা দেন, দেন পরামর্শও। সে কারণে স্ত্রী তাহমিনাকে ‘মহিয়সী নারী’ বলেই সম্বোধন করেন সুফি মিজান।

বাবা সম্পর্কে বলতে গিয়ে সুফি মিজানুর রহমানের অপর সন্তান আকতার পারভেজ হিরু বলেন, বাবার কাছ থেকে অনেক কিছুই শেখার আছে। জীবনের প্রতিটি মূহুর্তে বাবার কাছ থেকে আমি শিখেছি-এখনো শিখি। তিনি আরও বলেন, সুফি মিজান তরুণ প্রজন্মের কাছে অনুকরণীয়। কারণ তিনি প্রতিকূল পরিস্থিতি পেরিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার গল্প শোনাতে ভালোবাসেন।

স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে এ পর্যন্ত মাত্র দুইজন শিল্প উদ্যোক্তাকে একুশে পদক দেয়া হয়। প্রথম ব্যবসায়ী শিল্প উদ্যোক্তা হিসেবে মরণোত্তর পুরস্কার পেয়েছিলেন দেশের অন্যতম শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্কয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা স্যামসন এইচ চৌধুরী। ২০২০ সালে দ্বিতীয় পুরস্কারটি পেলেন দেশের আরেক সফল শিল্পপ্রতিষ্ঠান পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। পিএইচপির বাংলা অর্থ হল, ‘সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধির ছায়া। ’

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে সুফি মিজানুর রহমান ব্যবসা শুরু করেন ব্যাংক কর্মকর্তার চাকরি ছেড়ে। এ পাঁচ দশকেই তিনি গড়েছেন ৩৩টি প্রতিষ্ঠান। যাতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে প্রায় ১০ হাজার কর্মজীবী। তাঁর গড়া প্রতিষ্ঠানগুলো বছরে লেনদেন করে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। সরকারকে ভ্যাট, শুল্ক ও আয়কর বাবদ প্রতিবছর পরিশোধ করে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা।

২০টির বেশি কোম্পানিসমৃদ্ধ গ্রুপের নাম দিয়েছেন পিএইচপি-শান্তি, সুখ-সমৃদ্ধির ইংরেজি শব্দের আদ্যাক্ষর দিয়ে। রোববার (১২ মার্চ) তাঁর ৮১তম জন্মদিন। জন্মদিনে কামনা, তিনি আরও অনেক বছর শান্তি, সুখ ও সমৃদ্ধির আদর্শে দেশের মানুষকে উজ্জীবিত করবেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২৩ 
এমআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।