ঢাকা, সোমবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৩ রবিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রামে লক্ষাধিক এইচএসসি পরীক্ষার্থী দুশ্চিন্তায়

সৈয়দ বাইজিদ ইমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১১ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২৩
চট্টগ্রামে লক্ষাধিক এইচএসসি পরীক্ষার্থী দুশ্চিন্তায় ...

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় এখনো পানিবন্দী লাখো মানুষ। কোথাও হাঁটু সমান আবার কোথাও কোমর পর্যন্ত পানি জমে আছে।

বিভিন্ন কলেজেও জমেছে পানি। এসব এলাকায় টানা চারদিন বন্ধ ছিল বিদ্যুৎ সংযোগ।
এখনো বিদ্যুৎ নেই অনেক গ্রামে। অতিবৃষ্টি আর বন্যার কারণে বন্ধ ঘোষণা করা হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। এসময়ে পড়ালেখা তো দূরের কথা নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কায় শিক্ষার্থীরা।

এরমধ্যে মাত্র ৬দিন পর ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষা। এবারের পরীক্ষায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে অংশ নিচ্ছেন লক্ষাধিক পরীক্ষার্থী। বন্যার কারণে চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকা, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, বোয়ালখালী, চন্দনাইশ, পটিয়া, আনোয়ারা, বাঁশখালী, হাটহাজারী, চকরিয়া উপজেলাসহ তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের অবস্থা এখনো নাজুক। বন্যায় ভেসে গেছে অনেকের ঘরবাড়ি। ভেসে গেছে শিক্ষার্থীদের বইও। বন্যার কারণে দুইদিন বন্ধ ছিল চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়ের যানচলাচল। কদিন পর পরীক্ষায় কিভাবে বসবেন সে দুশ্চিন্তায় এ অঞ্চলের পরীক্ষার্থীরা।

অভিভাবকরা বলছেন, জেলা প্রশাসনই জানাচ্ছে টানা বর্ষণে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যায় চট্টগ্রামে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ধসে পড়েছে শত শত ঘরবাড়ি। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অন্তত ১৩৫ কোটি টাকার। সেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের জীবন নিয়ে শঙ্কিত। পড়ালেখা তো দূরের কথা 

চট্টগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সাইফুল্লাহ মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, ‘বন্যায় চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় ১৫ জন পানিতে ভেসে মারা গেছেন। এর মধ্যে সাতকানিয়ায় ছয়, লোহাগাড়ায় চার, চন্দনাইশে দুই, রাউজানে এক, বাঁশখালীতে এক ও মহানগরীতে একজন মারা গেছেন। প্রাথমিকভাবে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩৫ কোটি টাকা।  

তিনি আরও বলেন, জেলার সন্দ্বীপ ছাড়া বাকি ১৪ উপজেলায় কমবেশি বন্যা দেখা দিয়েছে। পানিবন্দী মানুষের জন্য শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। দেওয়া হয়েছে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটসহ প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, ১৪টি উপজেলা এবং সিটি করপোরেশনের মধ্যে এক লাখ ৪০ হাজার ১২টি পারিবারের ছয় লাখ ৩৫ হাজার ১৩০ জন লোক বন্যায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) থেকে শুরু হচ্ছে ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষা। এবারের পরীক্ষায় ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর সংখ্যা বেশি।

এর মধ্যে ছাত্র ৪৭ হাজার ৫৩২ জন এবং ছাত্রী ৫৪ হাজার ৯২৯ জন। এরই মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড-চট্টগ্রাম।
 
পরীক্ষায় চট্টগ্রাম অঞ্চলের ২৭৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এবারের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন ১ লাখ ২ হাজার ৪৬৮ জন পরীক্ষার্থী। এর আগে ২০২২ সালে এইচএসসি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৯৩ হাজার ৮৮৯ জন।

সে হিসেবে এবারে বেড়েছে ৮ হাজার ৫৭৯ জন। কেন্দ্রের সংখ্যাও বেড়েছে ১২টি৷ এবারে ১১৩টি কেন্দ্রে নেওয়া হবে পরীক্ষা।

জেলাভিত্তিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা:

২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম জেলায় (নগরসহ) ৭২ হাজার ৬২০ জন, কক্সবাজারে ১৩ হাজার ৩২১ জন, রাঙ্গামাটিতে ৫ হাজার ৫৪০ জন, খাগড়াছড়িতে ৭ হাজার ১০৮ জন, বান্দরবানে ৩ হাজার ৮৭৯ জন পরীক্ষার্থী।

কোন বিভাগে কতজন শিক্ষার্থী:

২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে ১০ হাজার ১৪৮ জন ছাত্র ও ১০ হাজার ৫৯৭ জন ছাত্রীসহ মোট ২০ হাজার ৭৪৫ জন পরীক্ষার্থী। মানবিক বিভাগ থেকে ১৯ হাজার ১৫০ জন ছাত্র ও ২৭ হাজার ৫৯৬ জন ছাত্রীসহ মোট ৪৬ হাজার ৭৪৬ জন পরীক্ষার্থী। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ১৮ হাজার ২৩৪ জন ছাত্র ও ১৬ হাজার ৭৩৬ জন ছাত্রীসহ মোট ৩৪ হাজার ৯৭০ জন পরীক্ষার্থী। এছাড়াও গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৭ জন ছাত্রী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন।

কোন জেলায় কতটি কেন্দ্র:

২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় বেড়েছে কেন্দ্রের সংখ্যাও। এবারের পরীক্ষায় চট্টগ্রাম জেলায় (নগরসহ) ৬৯টি, কক্সবাজার জেলায় ১৮টি, রাঙ্গামাটি জেলায় ১০টি, খাগড়াছড়ি জেলায় ৯টি, বান্দরবান জেলায় ৭ টি কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিবেন।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড চট্টগ্রামের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ন চন্দ্র নাথ বাংলানিউজকে বলেন, ১৭ আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষার্থীদের সকাল সাড়ে নয়টায় কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। প্রথমদিন বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। প্রত্যেকটি পরীক্ষা কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা থাকবে৷ প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে বোর্ড থেকে সর্বোচ্চ সতর্কতা রয়েছে। ইতিমধ্যে পরীক্ষা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে ১০ টি বিশেষ ভিজিল্যান্স টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও ৫২টি সাধারণ ভিজিল্যান্স টিম কাজ করবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০২৩ 
বিই/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।