ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ঘরে বসেই জানা যাচ্ছে মামলার তথ্য

মিনহাজুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২, ২০২৩
ঘরে বসেই জানা যাচ্ছে মামলার তথ্য ...

চট্টগ্রাম: বিচারাধীন মামলা সম্পর্কে অনলাইনের মাধ্যমে বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে তথ্য জানতে পারছেন বিচারপ্রার্থীরা। অনলাইন কজলিস্ট ওয়েবসাইট বা ই-কার্যতালিকা এবং ‘আমার আদালত’ অ্যাপ চালুর বদৌলতে এখন আদালতে না গিয়ে ঘরে বসেই কিংবা যে কোনো জায়গা থেকে চট্টগ্রামের অধিকাংশ আদালতে মামলার পরবর্তী তারিখ, আদেশ, পূর্ববর্তী আদেশ এবং মামলার চলমান অবস্থা সম্পর্কে জানা যাচ্ছে।

 

আগে মামলার যেকোনো তথ্য জানতে ঘুরতে হতো আদালতের বারান্দায়। এতে সময়ের পাশাপাশি অপচয় হতো অর্থের।

তবে ‘আমার আদালত’ চালুর পর থেকে ঘরে বসে কিংবা কম্পিউটারের দোকান এবং ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রে গেলে মুহূর্তেই জানা যাচ্ছে মামলার সর্বশেষ তথ্য। বিচার বিভাগে চালু হওয়া এই সুবিধার সুফল পাচ্ছেন চট্টগ্রামের বিচারপ্রার্থীরা। ওয়েবসাইট causelist.judiciary.gov.bd বা ‘আমার আদালত’ অ্যাপ থেকে জানা যাচ্ছে বিচারিক আদালতের ওইসব তথ্য। ফলে বিচারপ্রার্থী, আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট সবার মামলার তথ্য জানার সুযোগ এখন হাতের মুঠোয় চলে এসেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সরকার বিচারপ্রার্থী মানুষের সুবিধার্থে সময়োপযোগী নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এরই আওতায় সরকারের অ্যাসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) প্রোগ্রামের সহযোগিতায় এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অর্থায়নে ২০২২ সালের জুন মাস থেকে সাতটি জেলায় জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতগুলোতে অনলাইন কজলিস্ট বা ই-কার্যতালিকা ব্যবস্থা চালু করা হয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর একজন করে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে নিয়ে ঢাকায় বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। ওই প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর থেকে প্রথমভাগেই সাত জেলার ই-কার্যতালিকা চালু করা হয়। পরে সারাদেশে পর্যায়ক্রমে এই কার্যক্রম শুরু করে।  

চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ, চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ, ট্রাইব্যুনাল, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ আগস্ট থেকে চট্টগ্রামে ই-কার্যতালিকা চালু করার জন্য তিনদিনের অনলাইন প্রশিক্ষণ শুরু হয়। সেখানে বিচারক ও সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারীও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। চট্টগ্রামে একাধিক আদালত থাকায় ধাপে ধাপে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। দেশের অন্য আদালতের মতো চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালত, চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালত, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত, চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত, অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত, যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালত, চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল, জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল, সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন মামলার তথ্য অনলাইনে জানতে পারছেন বিচারপ্রার্থীরা।  

আনোয়ার কানন নামে এক সেবাগ্রহীতা বাংলানিউজকে বলেন, ঘরে বসে মামলা সম্পর্কে জানতে পারলে আদালতে এসে সময় নষ্ট করতে হয় না। এখন থেকে মামলার তারিখ সহ সবকিছু ঘরে বসে জানতে পারব। আগে শুধু মামলার শুনানি কবে, তা জানতে আদালতে আসতে হতো। এই ধরনের সেবা চালু হওয়াতে সরকার ও  বিচার বিভাগকে ধন্যবাদ জানাই।

নিলয় হাসান নামের এক যুবক বলেন, আমার ভাই প্রবাসে থাকে। পারিবারিক বিষয় নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। মামলার কারণে ভাই দেশে এলেও আমি খোঁজ খবর রাখি। আমাকে একজন জানিয়েছিলেন, অনলাইনে মামলার তারিখ কবে-তা দেখা যায়। অনলাইনে মামলার শুনানির তারিখ জানতে পারলে সবাই উপকৃত হবে।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মোরশেদুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, অনলাইন কজলিস্টের মাধ্যমে বিচারপ্রার্থী মানুষের একটি বড় অংশ ঘরে বসেই স্মার্টফোনের মাধ্যমে তার মামলার তারিখ ও পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে সহজেই জানতে পারছেন। এতে তাদের মামলার তারিখ সংগ্রহকে কেন্দ্র করে এখন আর ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে না। আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থী সংশ্লিষ্ট সকলে উপকৃত হচ্ছে। অনেক সময় ব্যস্ততার কারণে মক্কেলদের মামলার বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে সময় লাগতো। এতে ভোগান্তিতে পড়তেন বিচারপ্রার্থীরা। এখন অনলাইন সেবায় বিচারপ্রার্থী নিজেই নিজের মামলার সব তথ্য জানতে পারছেন। এতে আমাদের চাপ অনেক কমে গেছে। সেইসঙ্গে সুফল পাচ্ছেন বিচারপ্রার্থীরা।

এটিকে স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট কাজ বলে উল্লেখ করে অ্যাডভোকেট সেলিম উল্লাহ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, সরকার সবক্ষেত্রে সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। অ্যাপের মাধ্যমে আইনি সেবা তার একটি বাস্তব উদাহরণ।

চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের নাজির মোহাম্মদ ইসমাইল বাংলানিউজকে বলেন, চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের অধীনে প্রত্যেক আদালতে ই-কার্যতালিকা প্রকাশ গত ২৮ আগস্ট থেকে শুরু হয়েছে। এতে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি কমেছে।  

চতুর্থ অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী ওমর ফুয়াদ বাংলানিউজকে বলেন, ই-কার্যতালিকা বিচার বিভাগের ভাল উদ্যোগ। বিচারপ্রার্থীরা সহজে মামলার তথ্য পাচ্ছে। তাদের সময় নষ্ট হবে না, ঘরে বসে মামলার আপডেট তথ্য পাবে। মামলা মিসিং হওয়ার সুযোগ নেই। আদালতে বেঞ্চ সহকারী ও স্টেনোগ্রাফারের জন্য একটি কম্পিউটার হওয়াতে সমস্যা হচ্ছে।  

চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বেঞ্চ সহকারী কফিল উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের  নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালসমূহতে প্রশিক্ষণ শেষে ই-কার্যতালিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অ্যাপের মাধ্যমে ঘরে বসে বিচারপ্রার্থীরা মামলার তথ্য পাবেন। মানুষের ভোগান্তি কমে যাবে।  

জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী মো.সেকান্দর আলী বাংলানিউজকে বলেন, ই-কার্যতালিকার প্রশিক্ষণ শেষ করে আমাদের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শুরুতে সামান্য অসুবিধা হচ্ছে। মানুষ ঘরে বসে ট্রাইব্যুনালের মামলার আপডেট জানতে পারবে।  

চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো.রেজাউল করিম বাংলানিউজকে বলেন, গত ২০ আগস্ট প্রশিক্ষণ শেষ করে আমাদের ই-কার্যতালিকা প্রকাশ শুরু হয়েছে। শুরুতে কিছু সমস্যা হচ্ছে, কিন্তু সামনে সেটা কাটিয়ে উঠতে পারব। আমাদের আদালতে একটিমাত্র কম্পিউটার। সেটাতে স্টেনোগ্রাফার কাজ করে। তার কাজ শেষ হওয়ার পর আমি কাজ শুরু করতে পারি। যার কারণে আপলোড করতে দেরি হচ্ছে।  

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এএসএম বজলুর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশে বিচার বিভাগকে ডিজিটাল করা হয়েছে। বিচারাধীন মামলা সম্পর্কে অনলাইনের মাধ্যমে বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে তথ্য জানতে পারছেন বিচারপ্রার্থীরা। অনলাইনে আদালতের কার্যতালিকা থেকে মামলার পরবর্তী তারিখ, আদেশ, পূর্ববর্তী আদেশ এবং মামলার চলমান অবস্থা সম্পর্কে জানা যাচ্ছে। অনলাইনে আদালতের কার্যতালিকাকে স্বাগত জানিয়েছেন আইনজীবীরা।  

চট্টগ্রাম জেলা পিপি অ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, অনলাইনে আদালতের কার্যতালিকা প্রকাশ সরকারের যুগোপযোগী পদক্ষেপ। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে স্মার্ট বিচার বিভাগ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থী সকলেই এতে উপকৃত হচ্ছে। আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা ঘরে বসে সেবা পাচ্ছেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০২৩
এমআই/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।