চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: যোগ্যতা শিথিল করে ২০১২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে চবি ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি রন্টু দাশের বিরুদ্ধে। এছাড়া ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ২০১২ সালে চবির দুই ছাত্র হত্যায় (ডাবল মার্ডার) সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (২৩ অক্টোবর) দুপুর ২টায় ইতিহাস বিভাগে জড়ো হয়ে শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষকের পদত্যাগের দাবি করেন। এসময় তোপের মুখে নিজেই পদত্যাগপত্র লিখে স্বাক্ষর করেন অভিযুক্ত শিক্ষক রন্টু দাশ।
জানা গেছে, ২০১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি চবির ইতিহাস বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুসারে গ্রেডিং পদ্ধতিতে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার উভয়টিতে ন্যূনতম জিপিএ-৩.০ পয়েন্ট এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে পৃথকভাবে ৩.৫ পয়েন্ট থাকতে হবে। কিন্তু চবি ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি রন্টু দাশ এইচএসসিতে ২.৯ পেয়েও আবেদন করেন। সেসময় বিভাগের প্ল্যানিং কমিটি এর প্রতিবাদ করলেও বিভাগের প্রভাবশালী এক শিক্ষকের চাপে আবেদনপত্রটি গৃহীত হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। পরে রন্টু দাশের জন্য নিয়োগের যোগ্যতাও শিথিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এছাড়াও রন্টু দাশের বিরুদ্ধে ২০১২ সালে চবির দুই ছাত্র হত্যায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। যেই হত্যাকাণ্ডটি চবি শিক্ষার্থীদের কাছে ডাবল মার্ডার হিসেবে পরিচিত। পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন বলেও দাবি করেন তারা। জানা গেছে, ২০১১ সালে অস্ত্র আইনে পুলিশের করা একটি মামলায় গ্রেফতারও হন রন্টু দাশ।
এদিকে এসব অভিযোগে বুধবার (২৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে শিক্ষক রন্টু দাশসহ অবৈধভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অব্যাহতি এবং চাকরিচ্যুত করার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থীরা।
এসময় শিক্ষার্থীরা ২ দফা দাবি উত্থাপন করেন। এগুলো হলো- চব্বিশের গণহত্যাসহ ইতিপূর্বে ক্যাম্পাসে সংঘটিত সকল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের তদন্ত কমিটি গঠন করে চাকুরিচ্যুত করতে হবে। নিয়োগের নীতিমালা শিথিল করে অথবা নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে যাদেরকে অবৈধভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তদন্ত কমিটি গঠন করে তাদের নিয়োগ বাতিল করতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, চবির সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ খালেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রন্টু দাশের বিরুদ্ধে এখনও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা রন্টু দাশকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলাম। কোনো সন্ত্রাসী এই ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না। দেশ স্বাধীন হয়েছে, তবে বিশ্ববিদ্যালয় এখনো স্বাধীন হয়নি। ক্যাম্পাসে প্রশাসনের নাকের ডগায় সন্ত্রাসীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। সিন্ডিকেটে এখনও স্বৈরাচারের দোসররা রয়েছে। সব জায়গা থেকে এসব দোসরদের বাদ দিয়ে এমন কাউকে আনতে হবে যারা শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চবির সমন্বয়ক মোহাম্মদ আলী বলেন, রন্টু দাশ ফ্যাসিবাদের দোসর। শিক্ষক হওয়ার মতো তার যোগ্যতা ছিলো না। এইচএসসিতে ২.৯৪ পেয়েও তিনি দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগও রয়েছে। এসব ঘটনা তদন্ত করে তাকে চাকরিচ্যুত করতে হবে।
এদিকে অভিযোগের বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি অভিযুক্ক ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রন্টু দাশ।
ইতিহাস বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. শামীমা হায়দার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী যা হবার তাই হবে। সব কিছুর নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া রয়েছে। দীর্ঘদিনের ঘটনার প্রেক্ষিতে হয়তো শিক্ষার্থীদের মনে হচ্ছে এখনই পদত্যাগ করতে হবে।
প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, আমি ইতিহাস বিভাগে আসার আগেই ওই শিক্ষক একটা পদত্যাগপত্র লিখেছেন এবং সেখানে স্বাক্ষরও করেছেন। পদত্যাগ কেউ চাইলেই হয়ে যায় না। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম এবং প্রক্রিয়া অনুযায়ী হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২২২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২৪
এমএ/টিসি