চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: বিশ্ববিদ্যালয়কে নান্দনিক করে গড়ে তুলতে আমরা ইতিমধ্যে অনেক উদ্যোগ নিয়ে কাজ শুরু করেছি। শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের চাওয়া সব ধরনের ফি আদায়ে অনলাইন ব্যাংকিং চালু করা।
সমাজ ও রাষ্ট্রচিন্তা কেন্দ্র কর্তৃক আয়োজিত 'কেমন ক্যাম্পাস চাই' শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার এসব কথা বলেন।
রোববার (২ নভেম্বর) দুপুরে চবির সমাজবিজ্ঞান অনুষদের কনফারেন্স রুমে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
লোকপ্রশাসন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এনায়েত উল্যা পাটোয়ারী। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. শামীম উদ্দিন খান ও উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন। প্যানেল আলোচক ছিলেন যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক। এ সময় শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিজেদের পরামর্শ, প্রস্তাব ও দাবি তুলে ধরে মতামত পেশ করেন।
চবি উপাচার্য ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় একটি নান্দনিক ক্যাম্পাস। এ ক্যাম্পাসকে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশসম্পন্ন নান্দনিক ক্যাম্পাস হিসেবে গড়ে তুলবো আমরা। যোগ্য গ্র্যাজুয়েট তৈরির কারখানা হবে চবি। সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করলে এটি সম্ভব। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল স্টেকহোল্ডার হলেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এই দুই পক্ষ যদি তাদের দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হয়, তাহলে আর কিছুই লাগে না। বাকি সব এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে। শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়া, বিশৃঙ্খলায় না জড়ানো।
তিনি বলেন, আমাদের নিজেদের কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়কে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে। এক্ষেত্রে সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। আমরা একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ক্যাম্পাস গড়তে চাই। এখানে সবাই মিলেমিশে নিজেদের ধর্ম পালন করবে।
চবি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নয়। সুতরাং শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার মানোন্নয়নের যত সুযোগ সুবিধা প্রয়োজন, সেগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। শিক্ষার্থীদের চাহিদা গুরুত্বের ভিত্তিতে আমরা পূরণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, আমরা ছাত্র-শিক্ষক যারা আছি, তাদের আগে একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে হবে। যে বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠেনি। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার আগে মেধাবী থাকে কিন্তু পরে তারা কেন যেন অমেধাবী হয়ে যায়। তারা চোখের পানি নিয়ে বাসায় ফিরে বাবা-মায়ের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী মাদকাসক্ত হয়ে যায়। ছাত্ররাজনীতির নামে তারা নিজের সহপাঠীকে হত্যা করে। এসব শিক্ষার্থীদের কাছে চাকসুর চা খাওয়া এবং জারুলতলায় আড্ডা দেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয়ে সুস্থ মানুষ আসার পর কেন তারা অমানুষ হয়ে যায়? এটার উত্তর আগে খুঁজতে হবে৷
তিনি বলেন, আমাদের এমন বিশ্ববিদ্যালয় বানাতে হবে, যেটা আমি সত্যিকার অর্থে বিশ্ববিদ্যালয় বলতে পারবো। বিদ্যমান যে বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, সেগুলোকে আমি বিশ্ববিদ্যালয় মনে করি না। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় মানে বৈশ্বিকভাবে জ্ঞান অর্জনের জায়গা। এখন আমরা কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে পার্থক্য খুঁজে পাই না। বিশ্ববিদ্যালয় হতে হবে যোগ্য মানুষ তৈরির কারখানা। এখানে খারাপ হয়ে ঢুকলেও যাতে ভালো মানুষ হয়ে বের হয়, সে রকম পরিবেশ ও ব্যবস্থা করতে হবে।
ড. এনায়েত উল্যা পাটোয়ারী বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস চায়, লেজুড়বৃত্তি রাজনীতি চায় না, ছাত্র সংসদভিত্তিক ক্যাম্পাস চায় তারা। আমরাও সেরকম ক্যাম্পাস চাই।
ড. মো. শহীদুল হক বলেন, আমাদের প্রথম স্লোগান হওয়া উচিত বৈষমহীন ক্যাম্পাস চাই। আমাদের যোগ্য গ্র্যাজুয়েট চাই। নিয়মিত ক্লাস চাই, সুন্দর পরিবেশ চাই, উন্নত লাইব্রেরি চাই, যেখানে সবার পড়ার মানসম্মত পরিবেশ রয়েছে। উন্নত মেডিকেল ব্যবস্থা চাই। শাটলে শিক্ষার্থীদের চাহিদার ভিত্তিতে বগি চাই। নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই। দলীয় লেজুড়বৃত্তির ছাত্ররাজনীতি চাই না। মাদকমুক্ত ক্যাম্পাস চাই। কাউন্সেলিং করার ব্যবস্থা চাই।
এ সময় তিনি সার্বক্ষণিক ইন্টারনেট সুবিধা, প্রতি বছর সমাবর্তন, কার্যকর অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন গঠন, রিসার্চ অ্যাসিসট্যান্ট হিসেবে কাজের সুযোগ, সনদ তুলতে আধুনিক পদ্ধতি, আদর্শ, নম্র ও যোগ্য শিক্ষক, রাত ৯টা পর্যন্ত লাইব্রেরি খোলা রাখা, পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা, ছাত্র সংসদভিত্তিক রাজনীতি ব্যবস্থা চালু করার ব্যাপারে পরামর্শ দেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২২৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০২৪
এমএ/টিসি