চট্টগ্রাম: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করতে হলে দোসরদের জায়গা দেওয়া যাবে না ও কোনো সুযোগ নেই। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে হবে।
বুধবার (১ জানুয়ারি) দুপুরে নগরের মেহেদীবাগস্থ বাসভবনে চট্টগ্রাম বঞ্চিত ব্যবসায়ী ফোরামের উদ্যোগে সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আমীর খসরু বলেন, যারা এত বছর লুটপাট করেছে, এদের ফিরে আসার কোনো অধিকার নেই। আর ফিরে আসার দরকারও নেই, এদের তো হাজার হাজার কোটি টাকা হয়ে গেছে। তাদের আর ব্যবসা করার দরকার নেই। এদের এখন জেলে দেওয়া দরকার শুধু। তাদের যারা হাজার কোটি টাকার মানুষ হয়েছে, তারা কেউ নিয়মের মাধ্যমে হয়নি। অনিয়মের মাধ্যমেই হয়েছে, তাই এদের জবাবদিহিতার আওতায় আসতে হবে। নির্বাচন করা তো দূরের কথা, তাদের তো দেশের মানুষের সামনে, আইনের সামনে জবাবদিহিতা করতে হবে। প্রথমে জবাবদিহি তারপর নির্বাচনের ব্যাপার। সেটা অনেক পরের কথা। শেখ হাসিনার মতো বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশনের যারা পালিয়ে গেছেন তারাও মেসেজ-কলের মাধ্যমে নির্দেশ দেন। যারা এসব নির্দেশ গ্রহণ করে তাদেরও জেলে দেওয়া দরকার।
ব্যবসায়ীদের নেতৃত্ব নিজেদের মধ্যে ঠিক করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, যখন আমি মন্ত্রী ছিলাম তখন কে কোথাকার, কোন চেম্বারের, কোন অ্যাসোসিয়েশনে কে হবে, সেসব মাথা ঘামায়নি। কারণ, এটা একেবারে উচিত না। আপনাদের নেতা আপনাদের নির্ধারণ করতে হবে। কে নেতৃত্ব দিবে সেটার সিদ্ধান্ত আপনাদের। সেখানে আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত নেই। আমরা (বিএনপি) চাইও না।
দেশের মানুষের মনোজগতের বিশাল পরিবর্তন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, দেশটা শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরে মানুষের মনোজগতের যে বিশাল পরিবর্তন হয়েছে, সেটা আমরা উপলব্ধি করতে পারছি না। এই পরিবর্তনের সঙ্গে যারা নিজেদের ধারণ করতে পারবে না, আগামী দিনে সে রাজনীতিবিদ হোক, আর যেই হোক তার কোনো ভবিষ্যৎ নেই দেশে। মানুষের প্রত্যাশা, আকাঙ্ক্ষা, ধারণা সম্পূর্ণ ভিন্ন হয়ে গেছে। রাজনীতিও আগের মতো চলবে না।
ব্যবসায়ে নতুন ধারণা, সততা ও স্বচ্ছতা আনতে হবে জানিয়ে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু বলেন, আপনাদের (ব্যবসায়ী) ট্রেড বডিও চলবে না। এগুলোর মধ্যে নতুন ধারণা আনতে হবে। এখানে সততা আনতে হবে, স্বচ্ছতা আনতে হবে। মানুষ যাতে বাইরে থেকেও দেখতে পারে, ভেতর থেকেও দেখতে পারে। এরমধ্যে ঘোলাটে করার সুযোগ নেই। তাই এটা আমাদের সবাইকে ধারণ করতে হবে।
দেশকে পরিবর্তনের সুযোগ কাজে লাগাতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতি দিয়ে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, এ সুযোগ যদি আমরা দেশকে পরিবর্তন করার জন্য এবার ব্যবহার করতে না পারি, তাহলে আমরা সবাই ডুবে যাব।
তিনি আরও বলেন, দেশটা যেভাবে দলীয়করণ এবং লুটপাটের মাধ্যমে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। সিএনএফ অ্যাসোসিয়েশন কিন্তু তার বাইরের কেউ না। শুধু যে চট্টগ্রাম সিএনএফ অ্যাসোসিয়েশন ধ্বংস হয়েছে তা নয়, দেশে প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানই এভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। তাই রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, এ প্রতিষ্ঠানগুলোকে মুক্ত করে সবার জন্য একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে দেওয়া। দল হিসেবে এ দায়িত্বটা পালন করছি। কে নেতৃত্বে যাবে, কোন দল যাবে, এসবের মধ্যে আমরা (বিএনপি) নেই।
বঞ্চিত ব্যাবসায়ী ফোরামের আহ্বায়ক এস এম সাইফুল আলমের সভাপতিত্বে ও ফোরামের পরিচালক সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী রোকন উদ্দিন মাহমুদের পরিচালনায় বক্তব্য দেন বিজিএমইএ এর সাবেক সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এস এম ফজলুল হক, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ, সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান, ফোরামের সদস্য সচিব শহিদুল ইসলাম চৌধুরী, সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী শওকত আলী ও আবু ছালেহ প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০২৫
এমআই/পিডি/টিসি