চট্টগ্রাম: এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়াম মাঠে দেড়শ’ স্টল নির্মাণ, সাজসজ্জার কাজ প্রায় শেষ। বইমেলায় ঢুকতেই চোখে পড়বে শহীদ আবু সাঈদ ও শহীদ ওয়াসিম আকরামের ছবি।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পৃষ্ঠপোষকতায় অমর একুশে বইমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। সভাপতিত্ব করবেন চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এক লাখ বর্গফুটের জিমনেসিয়াম মাঠজুড়ে ১৪০টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের স্টল ৭৪টি ও ঢাকার স্টল ৪৪টি। তবে সরকারি বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ সংস্থাগুলো এখনো স্টল নেয়নি।
কালধারার প্রকাশক কবি শাহ আলম নিপু বাংলানিউজকে বলেন, চট্টগ্রামের মানুষ মেলাবান্ধব। যেখানে মেলা হয় সেটি জমে যায়। সপরিবারে আসে। বইমেলার স্থাপনা ঠিক আছে। বইমেলা হচ্ছে কবি, সাহিত্যিক, লেখক, প্রকাশক ও বইপ্রেমীদের সম্মিলন। সারা বছর যে বই বিক্রি হয় বইমেলাতে তার চেয়ে বেশি হয়। কালধারা এবার ৩৫টি বই প্রকাশ করছে। বইয়ের ক্রেতা দিন দিন কমছে। আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসন, মোবাইলের বহুমাত্রিক ব্যবহারের কারণে পাঠকও কমে গেছে।
তিনি বলেন, সিআরবির ভেতরের দিকে যেসব স্টল ছিল তারা সুবিধা করতে পারেনি। কিছু বই চুরি হয়ে গিয়েছিল। পরিবেশগতভাবে জিমনেশিয়াম মাঠ বইমেলার জন্য বেশি গ্রহণযোগ্য। এবার মেলার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে বইমেলা।
বইমেলার সদস্যসচিব ও সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সভাপতি মো. শাহাবউদ্দিন হাসান বাবু বলেন, আবারও আমরা নগরের প্রাণকেন্দ্র এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়াম মাঠে অমর একুশে বইমেলা করতে পারছি। এখানেই আসলে পাঠক, লেখক, প্রকাশকরা বইমেলার আয়োজন দেখতে চায়। গতবছর কোনো কারণে সিআরবিতে বইমেলা হয়েছিল। আমার মনে হচ্ছে এবার চট্টগ্রামের বইমেলার ইতিহাসে সবচেয়ে ভালো এবং সফল বইমেলা হবে। বিক্রি আশানুরূপ হবে। চসিকের মেয়র আন্তরিকতার সঙ্গে তিনবার বৈঠক করেছেন সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সঙ্গে। সার্বিক প্রস্তুতি মনিটরিং করছেন। ঢাকা ও চট্টগ্রামের প্রকাশকেরা এসেছেন। বইমেলায় সর্বস্তরের পাঠক পছন্দের বই পাবেন।
প্রজ্ঞালোক প্রকাশনের প্রকাশক ও সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি রেহানা চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা গবেষণাধর্মী চারটি বই বের করেছি। আরও কিছু বইয়ের কাজ চলছে। বইমেলায় লোকসমাগম যত হয় বই বিক্রি কিন্তু তেমন হয় না। এক্ষেত্রে শিক্ষক, অভিভাবকদের উৎসাহ দিতে হবে তরুণদের। যাতে তারা বই পড়ে, বই কেনে।
খড়িমাটির প্রকাশক কবি মনিরুল মনির বলেন, এবার ৬০টির মতো বই প্রকাশ করেছি আমরা। প্রবন্ধ, কবিতা, গল্প, উপন্যাস রয়েছে। এর মধ্যে কবিতার বই বেশি। কাগজ, কালি, ছাপা, বাঁধাই সব কিছুর দাম বাড়তি। গতবছর সিআরবিতে বইমেলা হয়েছিল। সেখানে সন্ধ্যার পর পাঠক যেতে চাইতো না, অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা থাকত। এমএ আজিজের জিমনেশিয়া মাঠ হচ্ছে নগরের যেকোনো প্রান্ত থেকে সহজে আসা যায়। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ভালো। জিমনেশিয়াম মাঠে যতবার বইমেলা করেছি জমজমাট উৎসবমুখর পরিবেশ ছিল। ভালো ভালো নতুন বই প্রকাশ করেছেন প্রকাশকরা। মেলার পরিবেশ, স্টলের আকার ভালো হবে আশা করছি। মেলার কাঠামো বেশ পরিকল্পিত মনে হচ্চে। সব প্রকাশক নান্দনিকভাবে স্টল সাজানোর চেষ্টা করছেন। মেলার ব্যাপারে সবার আগ্রহ রয়েছে।
বইমেলা মিডিয়া কমিটির আহ্বায়ক মুস্তফা নঈম বাংলানিউজকে বলেন, বইঘর হচ্ছে দেশে সৃজনশীল প্রকাশনার আঁতুড়ঘর। সৈয়দ মোহাম্মদ শফি হচ্ছেন বইঘরের জনক। উনার সূত্র ধরে সারা দেশে বই প্রকাশ হচ্ছে। চট্টগ্রামেও সৃজনশীল কিছু প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। ঢাকার পরে চট্টগ্রাম দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। বইমেলাটিও দ্বিতীয় বৃহত্তম। আমরা চাই সব গণমাধ্যমে বইমেলার ইতিবাচক খবরাখবর প্রকাশিত হোক। যাতে নতুন প্রজন্ম বইমুখী হয়, বইমেলামুখী হয়। লেখক, প্রকাশক, পাঠক সবাই উপকৃত হয়।
চসিক মেয়র জানিয়েছেন, মেলা প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা ও ছুটির দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এবার মেলা প্রাঙ্গণে থাকছে দৃষ্টিনন্দন ‘শহীদ জিয়া স্মৃতি পাঠাগার’, এছাড়াও নিরাপত্তার স্বার্থে পুরো মেলা প্রাঙ্গণ সিসিটিভি নেটওয়ার্কের আওতাভুক্ত থাকবে। মেলা কার্যালয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত আসন থাকবে।
মাসব্যাপী বইমেলার অনুষ্ঠানমালায় রয়েছে- রবীন্দ্র উৎসব, নজরুল উৎসব, লেখক সমাবেশ, যুব উৎসব, শিশু উৎসব, মুক্তিযুদ্ধ উৎসব, ছড়া উৎসব, কবিতা উৎসব, মাতৃভাষা দিবস ২১ ফেব্রুয়ারির আলোচনা, লোক উৎসব, তারুণ্য ও ছাত্র সমন্বয় উৎসব, নারী উৎসব, বসন্ত উৎসব, মরমী উৎসব, আবৃত্তি উৎসব, নৃগোষ্ঠী উৎসব, পেশাজীবী সমাবেশ, কুইজ প্রতিযোগিতা, চাটগাঁ উৎসব, বইমেলার সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান। মেলায় প্রতিদিনের বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় দেশের প্রথিতযশা লেখক-কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ অংশ নেবেন।
মেলা মঞ্চে প্রতিদিন শিশু কিশোরদের চিত্রাংকন, রবীন্দ্র-নজরুল, লোকসঙ্গীত, সাধারণ নৃত্য, লোকনৃত্য, আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতা, দেশের গানের আয়োজন করা হবে। মেলাকে আকর্ষণীয় করার লক্ষ্যে চট্টগ্রামের লেখক, সাহিত্যিক, সংস্কৃতি কর্মী ও বইপ্রেমীদের নিয়ে বিভিন্ন উপ-পরিষদ গঠন করা হয়েছে। তাদের সহযোগিতায় প্রতিদিনের অনুষ্ঠানমালা সাজানো হয়েছে। মেলা মঞ্চে প্রতিদিন মুক্তিযুদ্ধের জাগরণী ও দেশাত্মবোধক গান পরিবেশিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২৫
এআর/পিডি/টিসি