ঢাকা, শুক্রবার, ৩০ মাঘ ১৪৩১, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৪ শাবান ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

মননশীল মানুষের ঠিকানা এখন বইমেলা

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৫
মননশীল মানুষের ঠিকানা এখন বইমেলা ...

চট্টগ্রাম: সৃজন ও মননশীল মানুষের ঠিকানা এখন অমর একুশে বইমেলা। শেষ বিকেলে নানা বয়সী লেখক, পাঠক ও সংস্কৃতিকর্মী ছুটে আসছেন পছন্দের স্টলে।

অটোগ্রাফ, আড্ডা, সেলফি আর মুখরোচক খাবারে সময় কাটছে বেশ। মা-বাবা-শিক্ষকের হাত ধরে আসছে ছোট্ট সোনামণি, শিশু-কিশোররাও।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পোশাক পরা শিক্ষার্থীদের ছোটাছুটিও বাড়ছে।  

সিআরবির ঘুরে এবার এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়াম মাঠে ফিরেছে চট্টগ্রামের অমর একুশে বইমেলা। নগরের প্রাণকেন্দ্রে চতুর্মুখী যোগাযোগ সুবিধার কারণে প্রথম থেকেই আশাবাদী প্রকাশকরা। মেলার দিন যত ফুরিয়ে আসছে বিক্রিও বাড়ছে। বেশি বিক্রির তালিকায় শিশুতোষ বই আর গল্প-উপন্যাস। হাঁকডাক বেশি হলেও কবিতার বইয়ের বিক্রি এখনো কমই।

সরেজমিন দেখা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘোষণা দিয়েই তরুণ লেখকরা আসছেন বইমেলায়। তারা প্রকাশনা সংস্থার নাম, স্টল নম্বর, উপস্থিত থাকার সময় দিয়ে দিচ্ছেন। তাদের আত্মীয় স্বজন, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মীরা ওই সময় এসে বই কিনছেন, সেলফি তুলছেন, অটোগ্রাফ নিচ্ছেন। মোটামুটি হইচই ফেলে দিচ্ছেন একেকটি স্টলে।  

এর ব্যতিক্রমও আছে। মেলায় না থেকেও সগৌরবে বিক্রি হচ্ছে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় সব বই। শুধু কি হুমায়ূন, বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী, চিরায়ত সব বইয়ের চাহিদা দেখা গেছে মেলায়। তবে বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মতো সরকারি বিভিন্ন সংস্থার স্টল না থাকায় তরুণরা ক্ষোভ জানিয়েছেন।  

বুধবার সন্ধ্যায় বইমেলার প্রধান ফটকের পর মসজিদের সামনের সড়কে প্রচুর মুখরোচক খাবার, হস্তশিল্পসামগ্রী, মৃৎশিল্প সামগ্রীর ভাসমান বিক্রেতাদের দেখা গেছে। মেলার ভেতরেও প্রচুর আইসক্রিমের বাক্স দেখা গেছে। এতে মেলায় ভিড় বাড়লে দর্শক-ক্রেতাদের অস্বস্তির আশঙ্কা বিক্রয়কর্মীদের।  

মেলায় রয়েছে ঐতিহ্য, ইউপিএল, কথাপ্রকাশ, অন্যপ্রকাশ, অন্যধারা, অনন্যা, কাকলী, ঝিনুক, গ্রন্থরাজ্য, হাওলাদার, অ্যাডর্ন, শিখা, সিয়ান, জ্ঞানকোষ, বেঙ্গল বুকস, কবি, শোভা, পেনফিল্ড, অনুবাদ, মুদ্রণশিল্প, গলুই, কথাবিচিত্রা, চন্দ্রবিন্দু, নন্দন, রংপেন্সিল, গাজী, পাঞ্জেরী, সালফী, শালিক, মনন, দ্বিমত, রচনা, গার্ডিয়ান, বলাকা, শব্দশিল্প, কিডস, বই বাজার, প্রিন্টপুকুর, বিদ্যানন্দ, খড়িমাটি, তৃতীয় চোখ, প্রজ্ঞালোক, ইতিহাসের খসড়া, চর্চা গ্রন্থ প্রকাশ, অক্ষরবৃত্ত, রোদেলা, পার্ল, রানা, আদর্শ, জলধি, কিংবদন্তী, অনিন্দ্য, সত্যায়ন, গল্পকার, আইমান, দি স্কাই, আন্দরকিল্লা, ভাষাচিত্র, সুকুন, রুশদা, শব্দশৈলী, নালন্দা, বাবুই, সন্দ্বীপন, স্টুডেন্ট ওয়েজ, সাহিত্য বিচিত্রা, নন্দন বইঘর, রানা, রাদিয়া, লাবণ্য, এমেলিয়া, পূর্বা, ঝিলমিল, বাতিঘর, হরিৎপত্র,  আদিগন্ত, দুরন্ত, তেপান্তর, কালধারা, শৈলী, শিশুপ্রকাশ,  দাঁড়িকমা, আপন আলো ইত্যাদি প্রকাশনা সংস্থার স্টল।  

ইসলামিক বইয়ের স্টলগুলোর মধ্যে তরজুমান, দ্বীন দুনিয়া, মাইজভাণ্ডারী, আলোকধারা, রাহনুমা, মাকতুবাতুল আসলাফ, রুহানা, আয যিহান ইত্যাদি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের স্টলে ভক্তদের ভিড় ছিল বেশ। এর বাইরে রয়েছে জিয়া স্মৃতি পাঠাগার, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব, মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের গবেষণা কেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি বিশেষায়িত স্টল। চট্টগ্রামের প্রকাশনা সংস্থার মধ্যে এবার সবচেয়ে বেশি বই প্রকাশ করেছে ‘খড়িমাটি’।  

তরুণ লেখক রহমান রনির ‘কসমোপলিটান হোমিও’ উপন্যাসটি প্রকাশ করেছে চন্দ্রবিন্দু। রহমান রনি বাংলানিউজকে বলেন, এটি আমার অষ্টম বই। প্রি অর্ডারে ৩৫ কপি বিক্রি হয়েছিল। মেলায় ইতিমধ্যে ৬০ কপি বিক্রি হয়েছে। মুদ্রিত মূল্য ৫০০ টাকা হলেও মেলার পাঠক ৩৮০ টাকায় কিনতে পারছেন।  আমি খুশি।  

শিশু প্রকাশের স্টলে কথা হয় লেখক-সাংবাদিক আরিফ রায়হানের সঙ্গে। তিনি জানান, মেলায় ভালো বিক্রি হয় বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারি আর সরকারি সাপ্তাহিক ছুটির দিন। কিন্তু এবার ভালোবাসা দিবস ও একুশে ফেব্রুয়ারি পড়েছে শুক্রবার। তাই প্রকাশকদের একটু টেনশন। যদি আলাদা দিন হতো তাহলে চার দিন ভালো বিক্রি হতো। প্রতিবছরের মতো এবারও বইমেলায় ছোটদের বই বেশি বিক্রি হচ্ছে।  

বইমেলার কিছু স্টলে সচেতনতামূলক থিম নজর কাড়ছে সবার। বিদ্যানন্দের স্টলে এবারের থিম গাছ কাটা বন্ধ করা। কিছু স্টলে ব্যানারে বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হচ্ছে। আবির প্রকাশনের প্রকাশক মুহম্মদ নুরুল আবসার জানান, আমাদের স্টলের এবারের থিম ‘বাঁচাও কর্ণফুলী, বাঁচাও বাংলাদেশ’। আমি শুধু বইয়ের ব্যবসা করি না। আমি এ সমাজের, দেশের নাগরিক। কর্ণফুলী দেশের বড় সম্পদ। এ নদী নিয়ে অনেক গবেষণা ও কাজ হওয়া দরকার ছিল। প্রজন্ম এ নদী সম্পর্কে অনেক কিছু জানে না। দখল দূষণে বিপর্যস্ত এ নদী। খরস্রোতা নদী আর নেই। ডুবোচর জাগছে, পানিতে লবণাক্ততা বাড়ছে, পরিবেশ প্রতিবেশ নষ্ট হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কর্ণফুলী নিয়ে গবেষণালব্ধ পাণ্ডুলিপি পেলে আমরা প্রকাশ করবো।  

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মুদ্রিত বইয়ের আবেদন সমকালীন ও চিরকালীন। ভালো বইয়ের পাঠক আছে, ক্রেতা আছে।  

গত ১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পৃষ্ঠপোষকতায় ও সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সহযোগিতায় অমর একুশে বইমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। এক লাখ বর্গফুটের জিমনেসিয়াম মাঠজুড়ে ১৪০টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবার।

চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সভাপতি ও বইমেলা কমিটির সদস্যসচিব মো. সাহাব উদ্দীন হাসান বাবু বাংলানিউজকে বলেন, ১৪০টি স্টলে প্রচুর প্রতিষ্ঠিত লেখকের ভালো ভালো বই এসেছে। মেলায় গবেষণা, প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাস, কবিতা, ছড়া, শিশুতোষ, ক্যারিয়ার, মোটিভেশনাল, ধর্মীয় বইয়ের চাহিদা রয়েছে। অনেক নতুন লেখকের বই যেমন মেলায় আসছে প্রতিদিন তেমনি নতুন নতুন পাঠকও যোগ দিচ্ছেন মেলায়। পাঠক যদি বই না কিনতো তাহলে লাখ লাখ টাকার বই মেলায় বিক্রি হতো না। তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষ হলেও মলাটবদ্ধ বইয়ের কদর কখনো নিঃশেষ হবে না।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৫
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।