ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১, ১৩ মার্চ ২০২৫, ১২ রমজান ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ঈদের রং লেগেছে তামাকুমণ্ডির বাজারে

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২৫
ঈদের রং লেগেছে তামাকুমণ্ডির বাজারে ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: ঈদের রং লেগেছে রিয়াজউদ্দিন বাজারের তামাকুমণ্ডিতে। ঠিক কতটি ভবন, কত দোকান সঠিক হিসাব নেই কারও কাছেই।

আনুমানিক শতাধিক ভবনে ১০ হাজার পাইকারি, খুচরা দোকানে হাজার কোটির ব্যবসার প্রস্তুতি রয়েছে এবার।  

সকাল থেকে সেহেরির আগপর্যন্ত নানা বয়সী ক্রেতার ভিড় লেগে থাকে এখানে।

ছোট, বড় দোকান থেকে রাজকীয় শোরুমগুলো এখন দেশ-বিদেশের হাল ফ্যাশনের পোশাক, প্রসাধন, মোবাইল ফোন, লাগেজ, জুতোসহ পরিধান সামগ্রীতে ভরা। আছে শোপিস, ব্যাগ, ক্রোকারিজ, প্লাস্টিক পণ্য থেকে শুরু করে সব ধরনের গৃহস্থালি টুকিটাকি পণ্যও।  

তামাকুমণ্ডি লেইন বণিক সমিতির সভাপতি সরওয়ার কামাল বাংলানিউজকে বলেছেন, সব দোকানি বণিক সমিতির সদস্য নন। তারপরও আমাদের সদস্য সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার ২০০। এখানে পাইকারি দোকানই বেশি। রাজস্থান, আল মদিনা, সেলিম পাঞ্জাবির মতো বড় শোরুমও আছে। তবে ঈদের মৌসুমে পাইকারি বিক্রি শেষে খুচরা বিক্রি করেন দোকানিরা। ঈদের বাজার ক্রমে জমে উঠছে। আশাকরি ভালো ক্রেতাসমাগম হবে।  

ঈদ বাজারে কোনো সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, পুরোনো সমস্যাই মূল সমস্যা। যেটি হচ্ছে ফুটপাত, সড়কজুড়ে হকারদের কারণে অনেক ক্রেতা ঢুকতে পারছে না। হকারদের পণ্যের পসরা সাজানোর কারণে অনেক  গলিই ২-৩ ফুট খোলা আছে। ঢুকতে ঝামেলার কারণে অনেক নারী ক্রেতা অন্য শপিং সেন্টারে চলে যায়। এ ছাড়া কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতও রয়েছে।   

১৯৮৪ সালে সাতকানিয়া থেকে রিয়াজউদ্দিন বাজারে ব্যবসা করতে এসেছিলেন জানিয়ে এ ব্যবসায়ী নেতা বলেন, আগে বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, গ্রাম থেকে বিয়ের বাজার করতে রিয়াজউদ্দিন বাজারে সদলবলে আসতেন মানুষ। এখন নগরে অনেক শপিং সেন্টার হয়েছে। বিভিন্ন জেলা, শহরতলী, উপজেলাতেও বড় বড় শপিংমল হয়ে গেছে। স্বাভাবিকভাবেই একসময়ের উপচেপড়া ভিড় নেই।  
 
সরেজমিন দেখা গেছে, তামাকুমণ্ডি লেনের গোলাম রসুল মার্কেট, আবদুল লতিফ মার্কেট, সিডিএ মার্কেট, প্যারামাউন্ট সিটি, জলসা মার্কেট, নিউ সুপার মার্কেট, ছৈয়দিয়া মার্কেটসহ বেশিরভাগ দোকানই জমজমাট। নিত্যনতুন ডিজাইনের শাড়ি, থ্রিপিস, পাঞ্জাবি, শার্ট, জুতো, কামিজ, বোরকা, ফ্রক, লেহেঙ্গা, পাজামা, লুঙ্গির কালেকশন রয়েছে।   

শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে প্রগতি ক্লথ স্টোর, ছরওয়ার ক্লথ স্টোর, জ্যোতি শাড়িজ, লিমা শাড়িজ, কমন ফেন্সি, তনু শাড়িজ, মেহরিন, সামান্তা শাড়িজ, আল কাদের স্টোর, বিসমিল্লাহ শাড়িজ, নোবেল ক্লথ  স্টোর, ওহী টেক্সটাইল, জেক্স টেক্সটাইল ইত্যাদিতে।   

সপরিবারে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন পূর্ব মাদারবাড়ীর মোহাম্মদ ইউসুফ। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, তামাকুমণ্ডি লেইনের দোকানগুলোতে পণ্যের ভ্যারাইটি আছে। দরকষাকষির সুযোগ আছে। আবার এক দামের দোকানও আছে। সব মিলে পরিবারের ছোট-বড় সবার কেনাকাটার জন্য নির্ভরযোগ্য।  

সাফা মারওয়া শাড়িজের বিক্রয়কর্মী এসএম তালুকদার জানান, অরগেজা, জর্জেট, কাতান, সিকোয়েন্স, টিসু, কাতান, সূতি শাড়ির চাহিদা বেশি। ঈদ গরমের মৌসুমে হওয়ায় ফ্যাশনেবল শাড়ির পাশাপাশি দেশি সূতির শাড়িও কিনছেন অনেকে। সফট আইটেমের শাড়ি ৪০০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা বিক্রি করছি আমরা। সেলাই ছাড়া রাহুল, জারদৌসি, সিল্কের থ্রিপিস ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা।  

মেহেদী ক্লথ স্টোরের মো. জসিম জানান, রিয়াজউদ্দিন বাজারে উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত সব শ্রেণির ক্রেতারাই আসেন। তাই কম দামি থেকে শুরু করে বেশি দামি সব পণ্যই পাওয়া যায় এ বাজারে। তবে মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতারাই বেশি আসেন।  

নাজমা গার্মেন্টসের মো. মানিক খান বলেন, এবার সূতির পাঞ্জাবি বেশি চলছে, ৩৫০-৬৫০ টাকা। আদি কাপড়ের পাঞ্জাবি ৮০০ টাকা। বাংলা কাতান ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, ভারতের কাতান ১ হাজার ৬০০ টাকা। ফতুয়া ৩৫০-৪০০। পাজামা ২৫০-৩৫০ টাকা। বড় শোরুমগুলোতে বেশি দামের পাঞ্জাবির কালেকশন রয়েছে।  

আল রায়হান বোরকা হাউসের মো. শাকিল জানান, নিজস্ব তৈরি টুপার্ট বোরকা ২ হাজার ৫০০ টাকা বিক্রি করছেন। কাপড়ের মান ও হাতের কাজ ভেদে ৭০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকার বোরকা আছে। ওড়না ৩০০-৫০০ টাকা। হিজাব ২৮০ টাকা। নেকাব ৫০-১৫০ টাকা।  

প্রফেসর মার্কেটের মামা ভাগিনা ক্লথ স্টোরের হাজি নুরুল কবির জানান, বিভিন্ন ব্রান্ডের বিভিন্ন দামের লুঙ্গি রয়েছে। আমরা জাকাতের শাড়ি ৫০০ টাকা, সিরাজগঞ্জের লুঙ্গি ২০০ টাকা বিক্রি করছি।  

বেশি ভিড় দেখা গেছে, স্টেশন রোড সংলগ্ন রাজস্থান, ইনসাফ ফ্যাশন বাজার, খাদেম সু, পোশাক বাজার, ডাটা বাজার, বাটা, অ্যাপেক্স, লোটো, আলমাস বেবি জোন, সুলতান পাঞ্জাবি, নবাব পাঞ্জাবিতে।  

বাংলাদেশ সময়: ১০৫০ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২৫
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।