চট্টগ্রাম: ৯০ বছর ধরে টিকে আছে ফকির কবিরের হাতে তৈরি চাক সেমাই। এখন বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ২৪০ টাকা।
নগরের চকবাজারের কাপাসগোলা রোডের তেলিপট্টির মুখে মেসার্স ফকির কবির বেকারিতে দিন রাত তৈরি হচ্ছে এ সেমাই। ১৯৩৬ সালে ভাড়া ঘরে যার হাত ধরে যাত্রা শুরু এ কারখানার তিনি এখন না ফেরার দেশে। কবির আহমদের একমাত্র ছেলে আবু আহমদ এখন ব্যবসা দেখাশোনা করছেন। নিজস্ব জমিতে দাঁড়িয়ে আছে কারখানাটি। কর্মসংস্থান হয়েছে অন্তত ১৫ জনের।
সরেজমিন দেখা গেছে, টাইলস করা পরিচ্ছন্ন পরিবেশে কারিগরেরা সেমাই বানানো হয়। এ সেমাইয়ের প্রধান উপকরণ ময়দা ও ফুটন্ত গরম পানি। টগবগ করে না ফোটা পর্যন্ত পানি ময়দায় মেশানো হয় না। পানি ও ময়দা মেশানো হয় কাঠের কাঠি দিয়ে। লবণ, চিনি, রং কিছুই নেই। সেই খামির গোলাকৃতির ডাইসে ফেলে লম্বা হাতল ধরে কয়েকজন ঘুরাতে থাকেন। তখন ডাইসের নিচে চিকন সুতো বা নুডলসের মতো পড়তে থাকে। এভাবে তৈরি হয় সেমাই। যা বাঁশের তৈরি ডালায় চাকের মতো রাখা হয় বিশেষ কৌশলে।
কাঁচা সেমাই দেখতে সাদা রঙের হয়ে থাকে। এরপর রোদে শুকানোর পালা। তারপর দেওয়া হয় বেকারির বড় চুল্লিতে। কিছুক্ষণের মধ্যে সেমাইয়ের চাক লালচে বর্ণের হতে থাকে। উল্টে পাল্টে নামিয়ে ফেলা সেমাই বিক্রির জন্য প্রস্তুত।
ব্যবস্থাপক দিলীপ কুমার ১৯৮১ সাল থেকে এ কারখানায় কাজ করছেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ফকির কবির সাহেবের এ সেমাইয়ের চাহিদা বেশি কিন্তু উৎপাদন ক্ষমতা সীমিত। রমজানের আগে আমরা কিছু সেমাই পাইকারি বেচলেও এ খুচরা ক্রেতাদের সামলাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ সুযোগে অনেকে নিম্নমানের সেমাই বানিয়ে বিভিন্ন দোকানে সরবরাহ দিচ্ছে। যারা আমাদের রেগুলার ক্রেতা তারা সরাসরি কারখানায় এসে নিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, রোদে না শুকালে এ সেমাইয়ের কোয়ালিটি আসে না। রোদে শুকিয়ে পরে তন্দুলে পোড়ানো হয়। শুরুতে যে ডাইস ছিল এখনো তাই আছে।
স্থানীয় বাসিন্দা নূর মিয়া জানান, ছোট বেলা থেকে এ সেমাই খেয়ে আসছি। এ সেমাই পোলাও কিংবা দুধ, কিসমিস, নারকেল, বাদাম দিয়ে খাওয়া যায়। ফকির কবির জীবিত থাকাকালে মাঝেমধ্যে এসে চেক করতো। গরম পানিতে দিয়ে টেস্ট করতো। নাকের কাছে নিয়ে গন্ধ শুঁকতো।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০২৫
এআর/টিসি