ঢাকা, রবিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩২, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

পটিয়ায় ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন বন্ধের সুপারিশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২৫
পটিয়ায় ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন বন্ধের সুপারিশ ...

চট্টগ্রাম: পটিয়া উপজেলায় শিল্পকারখানায় গভীর নলকূপ থেকে পানি উত্তোলন করায় বছরে গড়ে পানির স্তর ৩ থেকে ৭ ফুট পর্যন্ত নিচে নেমে যাচ্ছে। উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় শত শত টিউবওয়েলে পানি পাওয়া যাচ্ছে না।

পানি সংকটে রয়েছেন এলাকার প্রায় ৪ লাখ লোক। ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজও।
 

পানির সংকটের মধ্যে শিল্প-কারখানার বর্জ্যের কারণে সংকটে পড়েছে বোরো আবাদ। পটিয়া উপজেলায় লবণাক্ত পানি ছড়িয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় অনেক কৃষক বোরো চাষে আগ্রহ হারিয়েছেন। পটিয়ার শ্রীমতি ও খরনা খাল ছাড়া প্রতিটি খাল দিয়ে লবণাক্ত পানি আসে। এরমধ্যে চাঁনখালী, মুরালী, শিকলবাহা, মুহুরী, গরুলুটা, পাঁচরিয়া, চন্দ্রকালা খালের পানিতে অতিরিক্ত লবণাক্ততা রয়েছে।

পটিয়ার চরকানাই হাবিলাসদ্বীপ এলাকার সেচপাম্প মালিক মো. আবুল হাশেম রাব্বু বলেন, গত দুই মৌসুমে আমার ৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আর কৃষকদের ক্ষতি আরও কয়েক লাখ টাকা। এ অবস্থায় কী করে চাষ করবো?

পটিয়া উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. রমজান আলী জানান, এমনিতেই পানির সংকট। এরমধ্যে পানিতে লবণাক্ততা। মুখে নিলেই লবণাক্ততার পরিমাণ বোঝা যায়।

কৃষি অফিস সূত্র জানায়, ৬ ইউনিয়নে শিল্প কারখানার আশপাশে ২১০০ হেক্টর জমি রয়েছে। এরমধ্যে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে না।

পটিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কল্পনা রহমান বলেন, শিল্প-কারখানার নিঃসৃত বর্জ্যের কারণে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পরিবেশ অধিদপ্তরে লিখিতভাবে জানিয়েছি। কোন সমাধান মিলছে না।

পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফারহানুর রহমান বলেন, বিষয়টি পরিবেশ অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে। খালের পানি পরীক্ষার পর কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পানি সংকট দূরীকরণে নানা পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি।

পটিয়ায় ৪৩টি এলএলপি সেচপাম্পের মধ্যে ২৩টি বন্ধ রয়েছে। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ (ফ্রাকশনাল) ৪৯৭টি ডিজেলচালিত পাম্পের মাধ্যমে সেচ দেওয়া হচ্ছে।  

এদিকে, পটিয়াকে ‘পানিসংকট এলাকা’ ঘোষণা করতে যাচ্ছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এলাকায় খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দেওয়ায় গত ২৩ ও ২৪ এপ্রিল সরেজমিন পরিদর্শন করে এ তথ্য জানিয়েছেন পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার (ওয়ারপো) মহাপরিচালক লুত্ফর রহমান।

ওয়ারপো প্রতিনিধিদলে মহাপরিচালক ছাড়াও ছিলেন পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আমিনুল হক। তারা পটিয়া উপজেলা মিলনায়তনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারহানুর রহমানের সভাপতিত্বে পানিসংকট মোকাবিলায় করণীয় ঠিক করতে কর্মশালায় যোগ দেন। কর্মশালা শেষে তারা উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে জনগণের কাছে লিখিত ৩০টি প্রশ্নের উত্তর খোঁজেন।

ওয়ারপো ডিজি কর্মশালায় আশ্বস্ত করেন, শিগিগরই তারা সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দিবেন- যাতে পটিয়াকে পানিসংকট এলাকা ঘোষণা করে অন্তত দুই বছর পটিয়ায় ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন বন্ধ করা হয়। এই সময়ে বিকল্প উপায়ে এলাকায় পানি সরবরাহ করা হবে, যেন দুই বছর পর পানির স্তর পূর্বের জায়গায় ফিরে আসে।

পানির সংকট দূরীকরণে তিন প্রস্তাবনা

পানির সংকট দূর করতে অংশীজনেরা তিনটি প্রস্তাব করেন। সেগুলো হলো-পরিবার কেন্দ্রিক টিউবওয়েল বসানো বন্ধ করে কমিউনিটি ভিত্তিক টিউবওয়েল স্থাপন। শিল্পকারখানার জন্য হালদা নদীর মিঠা পানি সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া। বোয়ালখালীর ভান্ডালজুড়ি থেকে চট্টগ্রাম ওয়াসা যে পানি সরবরাহ শুরু করেছে তার সংযোগ নিতে শিল্পকারখানাগুলোকে বাধ্য করা।

বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২৫ 
বিই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।