ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘খ্যাথা কম্বল কিচ্ছু নাই, শীতে মইরা যাইতাছি’

মাহবুব আলম,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৪
‘খ্যাথা কম্বল কিচ্ছু নাই, শীতে মইরা যাইতাছি’ ছবি: সোহেল সরওয়ার/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: হারাদিন লেবারের কাম কইরা, বাতাসের লাইগ্যা শীতের মধ্যে রাইতে ঘুমাইতে পারতাছি না। খুবই কষ্ট অয়! খ্যাথা কম্বল কিচ্ছু নাই।

  শীতে মইরা যাইতাছি। ’-পৌষের মাঝামাঝিতে কনকনে শীতে কাঁপতে কাঁপতে বলছিলেন ষাটোর্ধ্ব আবদুল হালিম।


শুধু কিশোরগঞ্জের আবদুল হালিমই নয়। শৈত্যপ্রবাহ ও কুয়াশার মধ্যে দুর্ভোগ বেড়েছে হাজারো ছিন্নমূল মানুষের। তীব্র শীতের মধ্যে রাস্তার পাশে কিংবা রেলস্টেশনে ঘাপটি মেরে পড়ে আছেন কোন ভাবে। কনকনে শীতে কাজ তো দূরের কথা একটু উষ্ণতা নেয়ার মতো কিছু নেই।  

নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, শীতের তীব্রতার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিম্ন আয়ের মানুষগুলোর কষ্টও বাড়ছে। সড়কের পাশে রেলস্টেশনসহ বিভিন্ন স্থানে তাদের শীতের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকতে দেখা গেছে। অনেকেই আবার শীতের হাত থেকে রক্ষা পেতে কাগজে আগুন দিয়ে সামান্য উষ্ণতা নেয়ার চেষ্টা করছেন।

নগরীর পুরাতন রেলস্টেশনের মাঠের পাশে বসে আগুন জেলে উঞ্চতা নিচ্ছিলেন হালিমা আকতার, পপি বেগম, আজাদুর রহমান ও রাহেলা বেগম। রাহেলা জানালেন, সারা বছরই তারা সড়কের পাশে কাগজ দিয়ে ঘর তৈরি করে বসবাস করেন।

বছরের অন্যান্য সময় খুব একটা সমস্যা না হলেও শীতকালে হাড়কাঁপনে শীতে তাদের খূব কষ্ট হয়। কোন বছর কেউ দয়া করে একটা কম্বল দিলেও অনেক সময় তাও মেলে না।

‘বর্ষাকাল অইলে কোন বিল্ডিংয়ের নিচে গিয়া থাকতে পারি। কিন্তু শীতের সময় যেখানেই যাই সেখানেই কষ্ট। সারা রাইত শরীর গরম অয়না। চোখের পাতাও এক করতে পারিনা। ’

এদিকে ঠান্ডা বাতাস ও ঘন কুয়াশায় গত দুইদিন ধরে কাজে যেতে পারছেন না টোকাই হালিমা বেগম। তাই তার ঘরের চুলায় আগুন ধরাও সম্ভব হয়নি। পঞ্চাষোর্ধ্ব এই বিধবা জানালেন, দশ বছর আগে স্বামীকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি পাবনার ঈশ্বরদী থেকে চট্টগ্রামে এসেছিলেন।

প্রথমে রেলওয়ের বস্তিতে থাকলেও গত বছর তার স্বামী মারা যাওয়ায় ঠাঁই হয়েছে এই রাস্তার পাশের ঝুঁপড়িতে। এখানে তিনি আরও দুজনের সঙ্গে বসবাস করেন।

অসহায় এই বিধবা বলেন,‘শীতে কাঁপি মরনু গো বাপ, খ্যাথা কম্বল নাই, শীতে মরি যাচ্ছি। ’

হালিমার মতো প্রচণ্ড শীতে কাতর হয়ে পড়েছেন অসহায়-দুস্থ ব্যক্তিরা। এরমধ্যে বেশি দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে শিশু ও বৃদ্ধদের।

সফুরা বেগম নামে এক দু:স্থ মহিলা জানান, শীতের যেসব কাঁথা কম্বল আছে তা দিয়ে দুই শিশু সন্তানকে ঘুম পারিয়েছেন। কিন্তু তাও যথেষ্ট নয়। মধ্য রাতের পর কুয়াশায় কাপড় ভিজে গেলে ছেলে-মেয়ে দুইটা কান্না শুরু করে।

মৌসুমের বিভিন্ন সময় এই শীতার্ত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ালেও এবছর এ পর্যন্ত কেউ তাদের জন্য উষ্ণতার কম্বল নিয়ে আসেনি বলে জানান।

বাংলানিউজের সাথে আলাপকালে মো. ইউসুফ নামে এক শ্রমিক বলেন,‘দিনে যা কাম কইরা আনি তা দিয়েই খাইতে অয়। রাতভর শীতের লাইগা ঘুমাইতে পারিনা। কামেও যাইতে পারি না। ‘

তার সঙ্গে যোগ করে মোস্তফা নামে আরেক ব্যক্তি জানান,  দুই দিন ধরে শীত বাড়ায় অনেকে কাজে যেতে পারছেন না। তাই শীতবস্ত্রের অভাবে সেখানে বসবাসকারী অনেকেই মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, শুক্রবার চট্টগ্রাম অঞ্চলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৩ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা আরও নেমে যেতে পারে বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের তাপমাত্রা ছিল ২৫ দশমিক ৫ এবং সবনিম্ন ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন এ অঞ্চলে রেকর্ড করা হয়েছে সর্বোচ্চ ২৫ দশমিক ৭ এবং সর্বনিম্ন ১৪ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।  

প্রসঙ্গত, সাধারণত জানুয়ারি মাসে স্বাভাবিক তাপমাত্রা হচ্ছে ১৩ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তর চট্টগ্রামের পতেঙ্গা কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ শেখ ফরিদ আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন,‘বৃহস্পতিবার রাত থেকে শীত এ অঞ্চলে বাড়তে শুরু করেছে। জানুয়ারি মাসের স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম বিরাজ করছে। এ অবস্থা আরও দু-থেকে তিনদিন চলবে। ’

তবে শৈত্যপ্রবাহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে তিনি জানান।

এদিকে আবহাওয়ার শুক্রবারের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যান্য এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশা পড়তে পারে।

এছাড়া শ্রীমঙ্গল ও দিনাজপুর অঞ্চল সমূহের উপর দিয়ে মাঝারী ধরনের শৈত্য প্রবাহ এবং সীতাকু-, রাঙ্গামাটি, খুলনা, মাদারীপুর, খেপুপাড়া, যশোর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলসহ রাজশাহী বিভাগ ও রংপুর বিভাগের অবশিষ্ট অংশের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু শৈত্য প্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে।

সহকারী আবহাওয়াবিদ শেখ ফরিদ আহমেদ বলেন,‘উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে বাতাস ঘণ্টা ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হচ্ছে। ’

সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে পূর্ভাবাসে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৪
সম্পাদনা: তপন চক্রবর্তী, ব্যুরো এডিটর।  

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad