চট্টগ্রাম: শিবির নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কলেজের শেরে বাংলা ও সোহরাওয়ার্দী হল থেকে বিপুল পরিমান দেশীয় অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করেছে পুলিশ। এসময় মহিউদ্দিন মাসুম নামে এক হল কর্মচারীকে আটক করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টা থেকে বিকাল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত তল্লাশি অভিযান চালিয়ে পুলিশ এসব অস্ত্র ও বিষ্ফোরক উদ্ধার করে।
উদ্ধার হওয়া অস্ত্র ও বিস্ফোরকের মধ্যে রয়েছে- ১৬টি কিরিচ ও হাসুয়া, ৬টি তাজা ককটেল, ৩ কেজি ককটেল তৈরির পাউডার, ২০টি পেট্টল বোমা তৈরির বড় কাঁচের বোতল, ৫টি ছোট কাঁচের বোতল, ৬টি এসএস রড, ৫ কেজি নুড়ি পাথর, চকলেট বাজি ২৫টি, ৩৫টি জরদার খালি কৌটা, ১ বোতল স্যালাইন পানি, কাচি ১টি ও ১০টি কসটেপ।
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) কামরুল আমিন জানান, কয়েকজন ছাত্রলীগকর্মী আটকে রাখা হয়েছে এমন খবরের ভিত্তিতে পুলিশ কলেজের দু’টি হলে তল্লাশী চালায়। এসময় সোহরাওয়ার্দী হলের স্টোর রুম এবং শেরে বাংলা হলের রান্নাঘরের পরিত্যক্ত কক্ষে এসব ধারালো অস্ত্র ও বিষ্ফোরক পাওয়া যায়।
উদ্ধার হওয়া এসব সরঞ্জামের ব্যাপারে মামলা দায়েরসহ যথাযথ আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান নগর পুলিশের এই কর্মকর্তা।
তল্লাশী চলাকালে নগর পুলিশ কমিশনার আব্দুল জলিল মণ্ডল, অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) বনজ কুমার মজুমদার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
যেভাবে অভিযান শুরু:
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কলেজের ইতিহাস বিভাগের নতুন সভাপতিকে ফুল দিতে যান ছাত্রলীগ কর্মী মো. জয়নালসহ বিভাগের পাঁচজন ছাত্র।
এসময় কয়েকজন শিবির নেতাকর্মী তাদের অনুমতি না নিয়ে সদ্য যোগ দেওয়া বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সিদ্দিকুল্লাহ খানকে ফুল দেয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। একপর্যায়ে তাদের সেখান থেকে ধরে হলে নিয়ে যায় শিবির নেতাকর্মীরা।
এ ঘটনার ব্যাপারে ছাত্রলীগকর্মীরা নিকটস্থ থানাকে অবহিত করলে প্রায় শতাধিক সদস্য নিয়ে পুরো কলেজ ঘেরাও করে ফেলে নগর পুলিশ।
পরে পুলিশ সদস্যরা হলের বিভিন্ন কক্ষে তালা ভেঙ্গে তল্লাশী চালায়।
চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও নগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক আবু মো. আরিফ বাংলানিউজকে জানান, কলেজ শিবিরের সভাপতি রোকন ও সাংগঠনিক সম্পাদক তামিমের নেতৃত্বে শিবির নেতাকর্মীরা পাঁচ ছাত্রলীগ কর্মীকে তুলে নিয়ে যায়। প্রায় আধঘণ্টা নির্যাতনের পর বেলা ১২টার দিকে তাদের ছেড়ে দেয়।
নির্যাতনের শিকার হওয়া পাঁচ শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুইজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানান তিনি। তবে, এ ব্যাপারে হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির কাছে কোন তথ্য নেই।
নগর পুলিশের অতিরক্ত উপ-কমিশনার মনজুর মোরশেদ বলেন, শিক্ষার্থীদের আটকে রাখার খবর পাওয়ার পরপরই পুলিশ ক্যাম্পাসে গেলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেনি। পরে শোনেছি তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
আটাশ বছর পরে জয় বাংলায় মুখর কলেজ
প্রায় আটাশ বছর পর ‘জয় বাংলা’ ধ্বনিতে মুখর হয়েছে শিবির নিয়ন্ত্রিত চট্টগ্রাম কলেজ ক্যাম্পাস। তল্লাশী অভিযানে ধারালো অস্ত্র ও বিষ্ফোরক পাওয়ার খবর পেয়ে বৃহষ্পতিবার বিকাল সোয়া তিনটায় মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসে আসে ছাত্রলীগ।
মিছিল শেষে কলেজ ক্যাম্পাসে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের হল দখলে নিয়ে অস্ত্রের কারখানা বানিয়েছে শিবির। অবিলম্বে এসব হল থেকে তাদের বিতাড়িত করে মেধার ভিত্তিতে সিট বরাদ্দ দিতে হবে।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু, সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রণি, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু মো. আরিফ, সদস্য কায়সার হামিদ, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ নেতা তাজ উদ্দিন, মাহমুদুল করিম প্রমুখ।
১৯৮৬ সালে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রসংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবির মধ্যে এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর ক্যাম্পাসের আধিপত্য নেয় ছাত্রশিবির। পরে সংসদ নির্বাচনে হেরে গিয়ে সেখান থেকে ছাত্রলীগের ভিপি প্রার্থী আসিফ কামাল চৌধুরী বিতাড়িত হলে এরপর আর ক্যাম্পাসের চৌহদ্দিতেই প্রবেশ করতে পারেনি ছাত্রলীগ।
এর আগে গত বুধবারও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ছাত্রলীগ কর্মীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে চাইলেও তাদের বাধা দেয় শিবির। ফলে, গেটের বাইরেই অবস্থান করতে হয় তাদের।
চট্টগ্রাম কলেজ ছাড়াও পাশ্ববর্তী হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজটিও শিবিরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৪
** চট্টগ্রাম কলেজ ঘেরাও করে পুলিশের তল্লাশি