চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ২৬ বছরে সংগঠিত হয়েছে ১৮টি হত্যাকান্ড। কিন্তু এখনো পর্যন্ত বিচার হয় নি একটিরও।
হত্যাকান্ডে দায়ীদের শাস্তি না হওয়ায় বারবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ছাত্র শিবিরের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্যান্য সংগঠনের ৮ কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ছাত্রলীগের ২ কর্মী ছাড়াও ছাত্রদল, ছাত্রমৈত্রী, ছাত্রঐক্য এবং ছাত্র ইউনিয়নের ৪ কর্মী রয়েছেন। এছাড়া একজন মেডিকেল শিক্ষার্থী এবং একজন ভর্তি প্রার্থীও প্রাণ হারিয়েছেন। একইভাবে ছাত্রলীগের সঙ্গে শিবিরের সংঘর্ষে মারা যান ছাত্র শিবিরের ৮ কর্মী। তাছাড়া অসর্তক অবস্থায় প্রাণ হারিয়েছেন ছাত্রলীগের এক কর্মী। সর্বশেষ রোববার ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত হন ছাত্রলীগের এক কর্মী। এ নিয়ে গত ২৬ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮টি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ঘটলো।
চবিতে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে প্রথম রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ঘটে ১৯৮৮ সালে। ওই বছরের ২৮ এপ্রিল নগরীর বটতলী স্টেশনে শিবিরের সঙ্গে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে উভয় দলের পাল্টাপাল্টি গুলিতে পরিসংখ্যান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আমিনুল হক প্রাণ হারান। আমিনুলকে উভয় ছাত্র সংগঠন তাদের নিজ নিজ দলের কর্মী বলে দাবি করে। ১৯৯০ সালের ২২ ডিসেম্বর শিবিরের হামলায় ছাত্রমৈত্রীর কর্মী ফারুকউজ্জামান গুরুতর আহত হওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ ডিসেম্বর চমেক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৯৪ সালের ২৯ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলস্টেশন মাজার এলাকায় শিবির ক্যাডারদের হাতে নিহত হন ছাত্রদলের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল হুদা মুছা।
১৯৯৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রিত মোজাম্মেল কটেজে হামলা চালিয়ে আবৃত্তিকার বকুলকে ছাত্রলীগ কর্মী সন্দেহে হত্যা করে শিবির কর্মীরা। ১৯৯৮ সালের ৬ মে দখল নিতে শাহ আমানত হলে আক্রমণ করে শিবির ক্যাডাররা। শিবির ক্যাডারদের হামলায় বরিশাল থেকে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা আইয়ুব নামে এক শিক্ষার্থী নিহত হন। শিবিরের অবরোধ চলাকালে ১৯৯৮ সালের ১৮ মে চট্টগ্রাম-হাটহাজারী মহাসড়কের বালুছড়া এলাকায় শহরগামী একটি শিক্ষক বাসকে লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি ছোঁড়ে শিবির কর্মীরা। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র মুশফিক-উস-সালেহীন গুলিতে প্রাণ হারায় ।
১৯৯৮ সালের ২১ আগস্ট পুরাতন বটতলী স্টেশন এলাকায় ছাত্রশিবির-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সঞ্জয় তলাপাত্র নিহত হন। এরপর ২০০১ সালের ২৯ ডিসেম্বর ফতেয়াবাদ এলাকায় ছাত্রশিবিরের ব্রাশফায়ারে নিহত হন ছাত্রলীগের নেতা আলী মর্তুজা।
অপরদিকে ছাত্রলীগ এবং ছাত্র শিবিরের মধ্যকার সংঘর্ষে প্রাণ হারান ছাত্র শিবিরের ৮ কর্মী। ১৯৮৮ সালে আইনুল হক নামে শিবিরের এক কর্মী নিখোঁজ হন। পরে ছাত্রলীগ নেতারা তাকে হত্যা করে লাশ গুম করেছে বলে অভিযোগ এনে থানায় মামলা করে শিবির। ১৯৯৯ সালের ১৫ মে ছাত্র শিবির কর্মী জোবায়েরকে বনবিদ্যা ছাত্রাবাসের পিছনে নিয়ে গুলি করে ছাত্রলীগ কর্মীরা।
ওই বছরের ১৯ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী হল দখলে হামলা চালায় ছাত্রলীগ কর্মীরা। এ ঘটনায় মাহমুদুল হাসান ও মো. রহিমুদ্দিন নামে ছাত্র শিবিরের দুই কর্মী নিহত হয়। ২০১২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগ এবং ছাত্র শিবিরের মধ্যকার সংঘর্ষে প্রাণ হারায় ছাত্র শিবিরের সোহরাওয়ার্দী হল সাধারণ সম্পাদক মাসুদ বিন হাবিব ও জীব বিজ্ঞান অনুষদের প্রচার সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম। ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি ছাত্রলীগের সাথে সংঘর্ষ চলাকালে প্রাণ হারায় শাহ আমানত হলের সাধারণ সম্পাদক এবং মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মামুন হোসেন।
১৯৯৮ সালের ২৪ মে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষের সময় অসতর্কাবস্থায় নিজ গুলিতে প্রাণ হারান ছাত্রলীগের ক্যাডার এবং পরিসংখ্যান বিভাগের স্নাতকোত্তর শেষ বর্ষের ছাত্র সাইফুর রহমান। সর্বশেষ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত হয় ছাত্রলীগ কর্মী সংষ্কৃত বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তাপস সরকার।
ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর টিপু বাংলানিউজকে জানান, কোন হত্যাকাণ্ডের পক্ষে ছাত্রলীগ নয়। তবে রাজনৈতিক কারণে হত্যাকাণ্ডগুলোর সুষ্ঠু বিচার না হওয়ায় এ ধরণের ঘটনা ঘটছে। তিনি তাপস হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন সালাম মিঠু বাংলানিউজকে জানান, হত্যাকাণ্ডগুলোর পর প্রশাসনের দায়সারা মনোভাবের কারণে আলোর মুখ দেখে না তদন্ত প্রতিবেদন। এ ধরনের হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে ক্যাম্পাসে সকল ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৪