ঢাকা, বুধবার, ১৩ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ জুন ২০২৪, ১৮ জিলহজ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই নির্মাণ হচ্ছে উড়াল সড়ক

আবদুল্লাহ আল মামুন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৪
পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই নির্মাণ হচ্ছে উড়াল সড়ক ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: উড়াল সড়ক নির্মাণে পরিবেশ আইনের তোয়াক্কা করছে না চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। পরিবেশগত সমীক্ষা ছাড়াই একের পর এক নির্মাণ করা হচ্ছে উড়াল সড়ক।

এমনকি পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র নেয়া বাধ্যতামূলক হলেও সেই আইনকে পাত্তাই দিচ্ছেনা সিডিএ।

পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই ইতোমধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে দুটি উড়াল সড়ক।
আরও দু’টির কাজ চলছে।

সরকারি সংস্থা সিডিএ’র আইন না মেনে নির্মাণকাজ পরিচালনা নিয়ে ক্ষোভ আছে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। তবে সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে পরিবেশ অধিদপ্তর এ বিষয়ে জোরালো কোন পদক্ষেপ নিতে পারছেনা বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে ‍জানা গেছে।

সিডিএ সূত্র জানায়,  চারশ ৬২ কোটি ২৯ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ব্যয়ে মুরাদপুর-লালখান বাজার ৫ দশমিক ২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের উড়াল সড়ক নির্মাণ করছে সিডিএ। উড়াল সড়কটি যৌথভাবে নির্মাণের দায়িত্ব পেয়েছে ম্যাক্স-র‌্যাঙ্কিন। গত ১২ নভেম্বর উড়াল সড়কটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়। ৫৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ১ হাজার ১৪৩ মিটার দৈর্ঘ্যের কদমতলী উড়াল সড়ক নির্মাণ কাজও চলছে।

ইতিমধ্যে বহদ্দারহাট ও দেওয়ানহাট উড়াল সড়ক যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।  

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর ১২(১) অনুযায়ী,‘মহা-পরিচালকের নিকট হইতে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে, পরিবেশগত ছাড়পত্র ব্যতিরেকে কোন এলাকায় শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন বা প্রকল্প গ্রহণ করা যাইবে না। ’

পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ১৯৯৭ অনুযায়ী চার শ্রেণীতে ছাড়পত্র দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। বিধিমালা অনুযায়ী ১০০ মিটার বা এর চেয়ে বেশি দৈর্ঘ্যের সেতু বা উড়াল সড়ক লাল শ্রেণীতে পড়ে। এ শ্রেণীর ক্ষেত্রে প্রথমে ‘অবস্থানগত ছাড়পত্র’, পরে ‘পরিবেশগত ছাড়পত্র’ দেওয়া হয়।

লাল শ্রেণীর প্রকল্প অনুমোদনের আবেদনের সঙ্গে প্রাথমিক পরিবেশগত সমীক্ষা(আইই), পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ(ইআইএ), পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা, পরিবেশগত বিরূপ প্রতিক্রিয়া সংক্রান্ত জরুরী পরিকল্পনাসহ দূষণের প্রকোপ হ্রাসকরণ পরিকল্পনা প্রতিবেদন ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনাপত্তিপত্র পরিবেশ অধিদপ্তরে জমা দিতে হয়।

এর কোনটিই করেনি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।

পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক শহীদুল আলম বাংলানিউজকে বলেন,‘‘পরিবেশ ছাড়পত্র না নিয়েই ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ শুরু করেছে সিডিএ। এমনকি তারা পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদনও করেনি। এ বিষয়ে তাদেরকে চিঠি দেওয়া হবে। ’

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ শফিউল আলম বাংলানিউজকে বলেন,‘বহদ্দারহাট উড়াল সেতু নির্মাণের সময় সিটি করপোরেশনের অনাপত্তি পত্র নিয়েছিল সিডিএ। মুরাদপুর ফ্লাইওভার নির্মাণে কোন ধরণের অনাপত্তিপত্রের জন্য আবেদন করেনি তারা। ’

মুরাদপুর উড়াল সড়ক প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মো. মাহফুজুর রহমান পরিবেশ ছাড়পত্র না নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে সিটি করপোরেশনের অনাপত্তিপত্র নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন,‘‘পরিবেশের ছাড়পত্র নিতে হয় এটা জানা ছিল না। সিটি করপোরেশনের অনাপত্তিপত্র নেওয়া হয়েছে। ’’

পরিবেশ ছাড়পত্র নেওয়ার বিষয়টি কদমতলী উড়াল সড়ক প্রকল্পের পরিচালক ও সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ মঈনুদ্দিনও জানেন না বলে জানান।

তবে পরিবেশ ছাড়পত্র নেওয়াটা অত্যন্ত জরুরী বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, সরকারি সংস্থা যদি পরিবেশ আইন না মানে তাহলে বেসরকারি সংস্থাগুলো আইনের তোয়াক্কা করবে না।
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বাংলানিউজকে বলেন,‘উড়াল সড়কের মতো বড় প্রকল্পে পরিবেশগত ছাড়পত্র নেওয়া অত্যন্ত জরুরী। কোন স্থাপনা পরিবেশ বান্ধব না হলে সেটি টেকসই হবে না। পরিবেশ ছাড়পত্র নেওয়ার সময় যেসব সমীক্ষা প্রতিবেদন জমা দিতে হয় তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব সমীক্ষা করা না হলে সেটি দীর্ঘস্থায়ী হলেও পরিবেশবান্ধব বা জনবান্ধব হবে না। ’

পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সাধারণ সম্পাদক স্থপতি জেরিনা হোসেন বাংলানিউজকে বলেন,“মাস্টার প্ল্যান বহির্ভূতভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। এরমধ্যে যদি পরিবেশ ছাড়পত্র নেওয়া না হয় তাহলে এটি হবে ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’। সরকারি প্রতিষ্ঠানই যদি আইন না মানে তাহলে বেসরকারি সংস্থাগুলো মানবে কেন?”

বাংলাদেশ সময়: ২০২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।