ঢাকা, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ জুন ২০২৪, ১৮ জিলহজ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

শোভাযাত্রায় স্মরণ

১৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে উঠেছিল বিজয়ের পতাকা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৪
১৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে উঠেছিল বিজয়ের পতাকা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করলেও আনুষ্ঠানিক বিজয়ের একদিন পরই শত্রুমুক্ত হয়েছিল চট্টগ্রাম। মুক্তিবাহিনী, মিত্রবাহিনী ও গেরিলা যোদ্ধাদের ক্রমাগত আক্রমণে চট্টগ্রামে পাক সেনাবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদররা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল।

তবে স্বাধীন চট্টগ্রামে স্বাধীন দেশের পতাকা উঠেছিল একদিন পর ১৭ ডিসেম্বর।

সেদিন দুপুরে লক্ষ জনতার স্রোত মিশে গিয়েছিল চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে।
নয় মাসের যুদ্ধ শেষে বিজয়ের আনন্দে আত্মহারা চট্টগ্রামবাসী কোন নেতৃত্ব ছাড়া নিজেরাই সেদিন সার্কিট হাউসে উড়িয়েছিলেন লাল-সবুজের পতাকা।

বিজয়ের সেই দিনটির স্মরণে বুধবার চট্টগ্রাম নগরীতে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও জেলা প্রশাসন। বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় সর্বস্তরের মুক্তিযোদ্ধারা চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সমবেত হন।

সেখানে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের কমান্ডার মো.সাহাবউদ্দিন।
ctg_banglanews24_1
তাদের বক্তব্যের পর বর্ণাঢ্য একটি শোভাযাত্রা সার্কিট হাউস থেকে বের হয়। শোভাযাত্রার সামনে ছিল পুলিশের সুসজ্জিত একটি দল। এর পরে ব্যাণ্ডবাদকদের একটি বিশাল দল ব্যাণ্ড বাজিয়ে শোভাযাত্রাকে সামনে এগিয়ে নেন।

এরপর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের লাল পতাকা হাতে নিয়ে এগিয়ে যান মুক্তিযোদ্ধারা। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের কমান্ডার মো.সাহাবউদ্দিন, গেরিলা কমাণ্ডার মো.শাহআলম, জেরা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ এতে নেতৃত্ব দেন।

শোভাযাত্রাটি সার্কিট হাউস থেকে ওয়াসা হয়ে শিল্পকলা একাডেমিতে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে ১৭ ডিসেম্বর উপলক্ষে যৌথভাবে আলোচনা সভার আয়োজন করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও জেলা প্রশাসন।

মুক্তিযুদ্ধের গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ডা.মাহফুজুর রহমান সম্পাদিত ‘বাঙালির জাতীয়তাবাদী সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম’ গ্রন্থের ৩৮০ ও ৩৮১ পৃষ্ঠায় বিজয়ের একদিন পর চট্টগ্রাম শত্রুমুক্ত হওয়ার বিষয়টি বিশদভাবে উল্লেখ আছে। গবেষক মাহফুজুর রহমান নিজেও বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (বিএলএফ) এর অধীনে চট্টগ্রাম সেক্টরে গেরিলা যুদ্ধ করেছেন।
ctg_banglanews24_2ctg_banglanews24_2
বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে ডা.মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘মুক্তিবাহিনীর এক নম্বরের সেক্টরের অধিনায়ক মেজর রফিকুল ইসলাম ও মিত্রবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার আনন্দস্বরূপ ১৭ ডিসেম্বর ফেনী থেকে মিরসরাই, সীতাকুন্ড হয়ে চট্টগ্রাম শহরে ঢুকেছিলেন। এরপর চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেণ্টে পাকিস্তানী বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল। ’

তিনি বলেন, মেজর রফিকের নেতৃত্বে ৫ ডিসেম্বর ফেনী শত্রুমুক্ত হয়েছিল। ৭ ডিসেম্বর মিরসরাই শত্রুমুক্ত হয়েছিল। ১৩ ডিসেম্বর পটিয়া শত্রুমুক্ত হয়েছিল। চট্টগ্রাম শহরের আশপাশের এলাকাগুলো শত্রুমুক্ত হওয়ার পর ১৭ ডিসেম্বর মেজর রফিকের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা চট্টগ্রাম শহরে এসেছিলেন।

ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ১৭ ডিসেম্বর বিকেলে বিএলএফ কমাণ্ডার ইঞ্জিনিয়ারের আফছারের নেতৃত্বে মইনউদ্দিন খান বাদল ও ডা.মাহফুজুর রহমান সহ বেশ কয়েকজন গেরিলা যোদ্ধা চট্টগ্রাম শহরে ঢুকে প্রথমেই কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র আয়ত্তে নিয়ে নেন।

১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণার পর ৩০ মার্চ কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র দখল করে নেন পাকিস্তান সেনাবাহিনী। বিজয়ের পরদিন ১৭ ডিসেম্বর গেরিলা যোদ্ধারা ওই বেতারকেন্দ্রে যাওয়ার আগ মুহুর্তে পাকিস্তানী সেনারা পালিয়ে যান।

মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ডা.মাহফুজুর রহমান জানান, চট্টগ্রামে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বড় আকারে কোন আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণ হয়নি। তবে ফ্রিডম ফাইটার্স কমান্ডের শহর গ্রুপের গেরিলা কমান্ডার আব্দুর রহমান (বর্তমানে প্রয়াত) আত্মসমর্পণের জন্য পাকিস্তানিদের হাতে দিতে দুটি সাদা পতাকা নিয়ে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেণ্টে গিয়েছিলেন। ১৭ ডিসেম্বর ক্যাণ্টনমেণ্টেই পাকিস্তানী সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৮ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৪

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।