ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ মে ২০২৪, ০৫ জিলকদ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘পৃথিবীতে আজ ধ্বনিত হলো খ্রিস্ট প্রভুর জয়’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৫
‘পৃথিবীতে আজ ধ্বনিত হলো খ্রিস্ট প্রভুর জয়’ ছবি: সোহেল সরওয়ার/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: প্রার্থনা আর সব ধর্মের মানুষের মহাসম্মিলনের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামে প্রধান ধর্মীয় উৎসব বড়দিন পালন করেছে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা।   বড়দিন উপলক্ষে শুক্রবার (২৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নগরীর পাথরঘাটা ক্যাথলিক চার্চে চট্টগ্রামের বিশিষ্টজনদের সম্মিলন ঘটে।

এসেছিলেন চট্টগ্রামে অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের নাগরিকরাও।
 
দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নাশকতার চেষ্টার কারণে এবার চট্টগ্রামের সব গির্জায় বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়।
  নির্ধারিত অতিথি কার্ড ছাড়া কেউই চট্টগ্রাম ক্যাথলিক চার্চে ঢুকতে পারেননি।   এরপরও উৎসবের কমতি ছিল না।   যারা সমবেত হয়েছিলেন তাদের গানে, হাসি-আনন্দে বর্ণিল হয়ে উঠে বড়দিনের বড় আয়োজন।
 
সন্ধ্যায় নগরীর পাথরঘাটায় ক্যাথলিক চার্চে অনুষ্ঠিত হয় বড়দিনের মহাআয়োজন। শুরুতে কয়্যার দল বড় দিনের তাৎ পর্য তুলে ধরে একটি গান দিয়ে সবাইকে স্বাগত জানান। ‘আঁধার বেরিয়ে এলোরে ধরায় নতুন সূর্যোদয় পৃথিবীতে আজ ধ্বনিত হলো খ্রিস্ট প্রভুর জয়’সহ নানা গান পরিবেশনে করে দলটি।
 
সম্মিলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, সিএমপি কমিশনার মোহা. আব্দুল জলিল মণ্ডল, অতিরিক্ত কমিশনার একেএম শহীদুর রহমান ও দেবদাস ভট্টাচার্য, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন, চসিকের প্যানেল মেয়র জোবায়দা নার্গিস খান, রাশিয়ান ফেডারেশন কনস্যুলেট এ্যাটাচে মি. ভিয়াচেশ্লাভ জাখারভ, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি এজাজ ইউসুফী, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মহসিন চৌধুরী, কারিতাসের আঞ্চলিক পরিচালক জেমস গোমেজসহ বিশিষ্টজনেরা।   সবাই মিলে একসঙ্গে বড়দিনের কেক কাটেন।

এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমরা অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি করি।   ভ্রাতৃত্বের মনোভাব নিয়ে আমরা সব বাঙালী বাংলাদেশে মিলেমিশে বসবাস করি।   এই ভ্রাতৃত্ব যেন অটুট থাকে সেটাই হোক বড়দিনের কামনা।
 
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, তার মূল চেতনা ছিল বাংলাদেশ হবে সব ধর্মের। এখানে যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। অন্য ধর্মের মানুষ সেটিকে উৎসব হিসেবে পালন করবে।   স্বাধীনতার পর ধর্মনিরপেক্ষতার ওপর ভর করে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
 
তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলার ঘটনা ঘটছে।   এতে বিদেশির হাত আছে।   এর উদ্দেশ্য দেশকে অস্থিতিশীল করা।   দেশের মানুষের পরষ্পরের মধ্যে যে সৌহার্দ্য আছে, সেটি নষ্ট করা।   তবে আজকের বড়দিনের প্রার্থনা হোক, এই দেশ যেন শান্তির জনপদ হয়ে থাকে।

চট্টগ্রাম ধর্মপ্রদেশের বিশপ মজেস কস্তা বলেন, এবারের বড়দিনে তিনটি বিষয় আমরা বিশেষভাবে বিবেচ্য হিসেবে নিয়েছি।   একটি হচ্ছে অন্তরে যেন ঈশ্বর এবং পরস্পরের জন্য ভালবাসা বৃদ্ধি পায়, দ্বিতীয়টি হচ্ছে আমরা যেন দয়ালু হতে পারি এবং তৃতীয়টি হচ্ছে আমরা যেন সাধাসিধে জীবনযাপন করতে পারি।
 
বড়দিন উপলক্ষে চট্টগ্রামের চার্চগুলোতে বিশেষ আলোকসজ্জা করা হয়েছে।   আলোকসজ্জা করা হয় ক্রিসমাস ট্রিতে। গির্জাগুলোতে গোশালায় জন্ম নেওয়া যিশুর জন্মদিনের ক্ষণটিকে প্রতীকীভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
 
শুক্রবার সকালে নগরী এবং জেলার গির্জায় গির্জায় বিশ্বশান্তি কামনায় অনুষ্ঠিত হয় প্রার্থনা।   জামালখান ব্যাপটিস্ট চার্চ, ক্রাইস্ট চার্চ, সেন্ট মেরিস চার্চ, পাহাড়তলী চার্চ, বোয়ালখালীর গোদমণ্ডীর খ্রিস্টানপল্লীসহ বিভিন্ন গির্জায় অনুষ্ঠিত প্রার্থনায় খ্রিস্টধর্মাবলম্বীরা অংশ নেন।   পাথরঘাটায় ক্যাথলিক চার্চে বৃহস্পতিবার রাতে দুই দফা প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়।   প্রার্থনা পরিচালনা করেন ফাদার টেরেন্স রড্রিক্স ও বিশপ মজেস কস্তা।

প্রার্থনা শেষে শুক্রবার দিনভর চট্টগ্রামে খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের বাড়িতে বাড়িতে চলছে উৎসব।   আত্মীয়স্বজন সবাই মিলে একে অপরের বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছেন।   চলছে কেক কাটা ও বিশেষ খাবারদাবার।   শুভেচ্ছা এবং উপহার বিনিময়ও চলছে।  

** বড় দিনের যত বড় আয়োজন
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৫
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।