ঢাকা, শুক্রবার, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৪ মে ২০২৪, ১৫ জিলকদ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

টিকে আছে সিলভার শিল্প

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৭
টিকে আছে সিলভার শিল্প সিলভার কারখানায় কর্মরত কিশোর। ছবি: উজ্জল ধর/বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: চোখের অপলক দৃষ্টি লক্ষ্যের দিকে। চোখের পলক থেকে কপাল, গাল থেকে ঠোঁট, হাতও কালো। পুরো শরীর যেনো সিলভারের মিহি গুঁড়োতে চোপ চোপ দাগে ভরপুর। একবারেই বিবর্ণ চেহারা।

সেই চেহারার ভেতর থেকে সাদা ফিকফিকে দাঁতের হাসি। বেশ মনোমুগ্ধকরও বটে।

আগুনে পুড়িয়ে সিলভারের বাসনপত্র তৈরি করছেন কারিগর।  ছবি: উজ্জল ধরআড়াই থেকে ৩ ফুট মোটা লাঠি হাতের বগল চাপা করে কখনও সোজা করে আবার কখনও নিজের শরীরকে বাঁকা করে সজোরে ঠেলা।
 

মেশিনে তৈরি হচ্ছে সিলভারের বাসনপত্র।  ছবি: উজ্জল ধরএরপর মোটরে ঘূর্ণায়মান রোলার মেশিনে ১০ থেকে ১৫ সেকেন্ড করে রাখা হচ্ছে। প্রতিটি গোলাকার শিডে চাপ দিয়ে শ্রমিকরা তৈরি করছে এক একটা জিনিস।

পাতিলসহ অন্যান্য বাসন তৈরিতে ব্যস্ত শ্রমিকরা।  ছবি: উজ্জল ধরতার কোনোটা কলস কোনোটা বালতি, মগ, জগ-ছোট বড় বিভিন্ন সাইজের হাঁড়ি পাতিল। এই সিলভারের বাসনপত্রের নির্মাতাদের মধ্যে লিয়াকত, ইদ্রিস আর শাহাদাত।
 
বয়স সবারই চল্লিশোর্ধ্ব। তাদের বিভিন্ন কাজে যারা সহযোগিতা করছে তাদের বয়স কম। তারা ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সী; শাহীন, রশীদ ও শাহজাহান।  

আগুনে পুড়িয়ে সিলভারের পাত তৈরি করা হয়েছে।  ছবি: উজ্জল ধরআবার কেউ কাটার মেশিনে ঘষা মাজা করে বের করছে সিলভারের প্রকৃত রং। এরপর তা এসিড মেশানো পানিতে ধোলাই করে পরিষ্কার করে রোদে শুকাতে দেওয়া হচ্ছে। এরপরই তৈরি হচ্ছে ঝকঝকে নিত্য ব্যবহার্য সিলভার সামগ্রী।

অপচনশীল প্লাস্টিক সামগ্রীর এই যুগে অর্ধশতকেরও বেশি সময় ধরে চট্টগ্রাম নগরীর মুরাদপুরে টিকে আছে সিলভার শিল্প।  

সিলভারের গুঁড়ায় বিবর্ণ শরীর! ছবি: উজ্জল ধরব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মিশর, কাতার, বাহরাইন, ইরান ও ভারত থেকে সিলভারের বার আমদানি করে এখানে জিনিসপত্র তৈরি করেন তারা। প্রতিকেজি ২০০ থেকে ২৭০ টাকা ধরে কেনেন তারা।  

এরপর গ্যাসের চুলায় তাপে তরল করে বিভিন্ন ওজনের আয়তকার প্লেটে রূপান্তরিত করে আবার তা রোলার মেশিনের চাপায় তৈরি করা হয় গোলাকার শিড্। যে শিড থেকে তৈরি হয় প্রতিটি বাসনপত্র। প্রতিটি পাত্র তৈরিতে হাত বদল হয় ৫ থেকে ৭ বার।  

তৈরির পর ধুয়া হচ্ছে সিলভারের বাসনপত্র।  ছবি: উজ্জল ধর

গ্রাহকের হাতে পৌঁছে প্রতি কেজি ২৮০ হতে ৪৫০ টাকা ধরে। আর মালিকের কাছ থেকে লিয়াকত, ইদ্রিস আর শাহাদাতরা প্রতি কেজি সামগ্রী প্রস্তুত করে পারিশ্রমিক পান ৫ থেকে ৮ টাকা।  

মুরাদপুর এলাকায় বর্তমানে ১৪৬ জন মালিকের প্রায় দুইশতাধিক কারখানায় নিয়োজিত রয়েছেন ৫ হাজারেরও অধিক শ্রমিক; যাদের অধিকাংশ কুমিল্লা জেলার অধিবাসী।

সাজিয়ে রাখা হচ্ছে সিলভারের বাসন।  ছবি: উজ্জল ধরতৈরি হাড়িপাতিল সামগ্রী এখান থেকে ছড়িয়ে পড়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। পর্যাপ্ত গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে এই শিল্প ভবিষ্যতেও ঠিকে থাকবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৭
এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।