সেই চেহারার ভেতর থেকে সাদা ফিকফিকে দাঁতের হাসি। বেশ মনোমুগ্ধকরও বটে।
এরপর মোটরে ঘূর্ণায়মান রোলার মেশিনে ১০ থেকে ১৫ সেকেন্ড করে রাখা হচ্ছে। প্রতিটি গোলাকার শিডে চাপ দিয়ে শ্রমিকরা তৈরি করছে এক একটা জিনিস।
তার কোনোটা কলস কোনোটা বালতি, মগ, জগ-ছোট বড় বিভিন্ন সাইজের হাঁড়ি পাতিল। এই সিলভারের বাসনপত্রের নির্মাতাদের মধ্যে লিয়াকত, ইদ্রিস আর শাহাদাত।
বয়স সবারই চল্লিশোর্ধ্ব। তাদের বিভিন্ন কাজে যারা সহযোগিতা করছে তাদের বয়স কম। তারা ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সী; শাহীন, রশীদ ও শাহজাহান।
আবার কেউ কাটার মেশিনে ঘষা মাজা করে বের করছে সিলভারের প্রকৃত রং। এরপর তা এসিড মেশানো পানিতে ধোলাই করে পরিষ্কার করে রোদে শুকাতে দেওয়া হচ্ছে। এরপরই তৈরি হচ্ছে ঝকঝকে নিত্য ব্যবহার্য সিলভার সামগ্রী।
অপচনশীল প্লাস্টিক সামগ্রীর এই যুগে অর্ধশতকেরও বেশি সময় ধরে চট্টগ্রাম নগরীর মুরাদপুরে টিকে আছে সিলভার শিল্প।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মিশর, কাতার, বাহরাইন, ইরান ও ভারত থেকে সিলভারের বার আমদানি করে এখানে জিনিসপত্র তৈরি করেন তারা। প্রতিকেজি ২০০ থেকে ২৭০ টাকা ধরে কেনেন তারা।
এরপর গ্যাসের চুলায় তাপে তরল করে বিভিন্ন ওজনের আয়তকার প্লেটে রূপান্তরিত করে আবার তা রোলার মেশিনের চাপায় তৈরি করা হয় গোলাকার শিড্। যে শিড থেকে তৈরি হয় প্রতিটি বাসনপত্র। প্রতিটি পাত্র তৈরিতে হাত বদল হয় ৫ থেকে ৭ বার।
গ্রাহকের হাতে পৌঁছে প্রতি কেজি ২৮০ হতে ৪৫০ টাকা ধরে। আর মালিকের কাছ থেকে লিয়াকত, ইদ্রিস আর শাহাদাতরা প্রতি কেজি সামগ্রী প্রস্তুত করে পারিশ্রমিক পান ৫ থেকে ৮ টাকা।
মুরাদপুর এলাকায় বর্তমানে ১৪৬ জন মালিকের প্রায় দুইশতাধিক কারখানায় নিয়োজিত রয়েছেন ৫ হাজারেরও অধিক শ্রমিক; যাদের অধিকাংশ কুমিল্লা জেলার অধিবাসী।
তৈরি হাড়িপাতিল সামগ্রী এখান থেকে ছড়িয়ে পড়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। পর্যাপ্ত গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে এই শিল্প ভবিষ্যতেও ঠিকে থাকবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৭
এমএ