ঢাকা, শনিবার, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১১ মে ২০২৪, ০২ জিলকদ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সুদীপ্ত হত্যা: হাল ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৭
সুদীপ্ত হত্যা: হাল ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ সুদীপ্ত বিশ্বাস/ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম: নিজ বাসার সামনে পিটিয়ে ও কুপিয়ে খুন করা হয়েছিল চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাসকে।  নৃশংস এই ঘটনা দেশজুড়ে তোলপাড় তুলেছিল।  প্রতিবাদে রাস্তায় নামে ছাত্রলীগ।  হত্যাকাণ্ডের পরপর চার আসামিকে গ্রেফতার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নিতে সক্ষম হয় পুলিশ।

জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের নেতৃত্বদাতাসহ বেশ কয়েকজনের নাম প্রকাশ পায়।  খুনের সঙ্গে অন্তত ৩০ জন জড়িত থাকার তথ্যও পায় পুলিশ।

 কিন্তু জবানবন্দিতে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আর একজনকেও গ্রেফতার যায়নি। এমনকি গত এক মাসে আসামিদের গ্রেফতারের আর কোনো উদ্যোগও নেয়নি পুলিশ।
চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের দুই মাস পর এসে কার্যত পুলিশ হাল ছেড়ে দিয়েছে।   

জানতে চাইলে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মোস্তাইন হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, হাল ছেড়ে দিইনি।  খুনের সঙ্গে যাদের নাম আমরা পেয়েছি তাদের কেউ এলাকায় নেই। নেটওয়ার্কের ভেতর যারা ছিল তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।  গ্রেফতার এড়াতে পারলেও খুনের সঙ্গে জড়িত সবাই অবশ্যই অভিযোগপত্রে আসামি হবেন।  

গত ৬ অক্টোবর সকালে নগরীর সদরঘাট থানার দক্ষিণ নালাপাড়ার বাসার সামনে খুন হন সুদীপ্ত বিশ্বাস।  এই ঘটনায় অজ্ঞাতনামা সাত-আটজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন সুদীপ্তের বাবা মেঘনাথ বিশ্বাস বাবুল।

হত্যাকাণ্ডের সাতদিন পর ১৩ অক্টোবর গ্রেফতার হয় মোক্তার হোসেন নামে একজন।  ১৮ অক্টোবর আদালতে খুনের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেয় মোক্তার।  জবানবন্দিতে মোক্তার জানায়, মাঈনউদ্দিন হানিফ ও আইনুল কাদের নিপুর নেতৃত্বে মোরশেদ আলম বাবলু, নিয়াজ মোরশেদ নিপু, চশমা রুবেল, বাপ্পি, খায়ের, বাবু, রুবেল দাশ, শামিম, জাহেদ, এম এইচ মুরাদ ও কাজী সালাউদ্দিন লাভলুসহ প্রায় ৩০ জন হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিল।

সাতটি সিএনজি অটোরিকশা ও তিনটি মোটরসাইকেলে করে খুনিরা সদরঘাট এলাকায় যায়। চারদিন পর ১৭ অক্টোবর রাতে আমির হোসেন ওরফে বাবু ও খাইরুল নুর ইসলাম ওরফে খায়ের নামে দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়।  

২২ অক্টোবর রাতে ফয়সাল আহমেদ পাপ্পু নামে আরেক সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার তথ্য অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার হওয়া লোহার রডও উদ্ধার করা হয়। সুদীপ্তকে খুন করে যাওয়ার সময় নগরীর তিন পোলের মাথা এলাকায় লোহার রডটি ফেলে দেয় পাপ্পু।  

গ্রেফতার হওয়া চারজনই নগরীর লালখান বাজার এলাকার যুবলীগ কর্মী হিসেবে পরিচিত।  জবানবন্দিতে যাদের নাম এসেছে তারাও যুবলীগের পরিচয় দেয় এলাকায়। রাজনৈতিক এই পরিচয়ের কারণে সুদীপ্তের হত্যাকারীদের পুলিশ গ্রেফতার করছে না বলে অভিযোগ নগর ছাত্রলীগের।  পুলিশের নিস্ক্রিয় ভূমিকায় ক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করেছে।

নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নূরুল আজিম রনি বাংলানিউজকে বলেন, খুনের সঙ্গে জড়িত এমন অনেকে এলাকায় আছে বলে পত্রপত্রিকায় পেয়েছি।  তারা মিছিল-সমাবেশেও অংশ নিচ্ছে।  অথচ পুলিশ তাদের ধরছে না।  খুনের নির্দেশদাতাকে ‍বাঁচানোর জন্যই পুলিশ তাদের ধরছে না।

নগর পুলিশের কোতোয়ালি জোনের সহকারি কমিশনার জাহাঙ্গীর আলম বাংলানিউজকে বলেন, মাঈন উদ্দিন হানিফ ও আইনুল কাদের নিপুকে গ্রেফতার করতে পারলে কার নির্দেশে, কেন এ হত্যাকাণ্ড সংঘঠিত হয়েছে তা বেরিয়ে আসবে।  তারা আত্মগোপনে আছে।  তাদের ধরার জন্য আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি।

নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মোস্তাইন হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, তদন্তে খুনের নির্দেশদাতার নাম যদি আমরা পাই, অবশ্যই তাকে অভিযোগপত্রে আসামি করা হবে।  এখানে কাউকে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ বা ইচ্ছা আমাদের নেই।  তবে কারো কথামতো রাম শ্যাম যদু মধুকে তো আর আসামি করতে পারি না।  

এদিকে হত্যাকাণ্ডের দুই মাস পরও কি কারণে সুদীপ্ত খুন হয়েছেন সেটা বের করতে পারেনি পুলিশ।  সরকারি সিটি কলেজের নিয়ন্ত্রণ, ফেসবুক পোস্ট নিয়ে বিরোধ এবং পূর্ব শত্রুতার জেরে হত্যাকাণ্ড বিবেচনায় নিয়ে পুলিশ তদন্তের কথা জানিয়েছিল।
  
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদরঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রুহুল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, তদন্ত চলছে।  আমরা হাল ছেড়ে দিইনি।  তবে কয়েকদিন আগে আমাদের থানা এলাকায় আরো একটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।  সেজন্য সুদীপ্ত হত্যা মামলা একটু পিছনে পড়ে গেছে।  

গত ০৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যার দিকে নগরীর সদরঘাট থানার মাদারবাড়ি এলাকায় শুভপুর বাসস্ট্যান্ডের ‍পাশে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এস টি ট্রান্সপোর্টে ব্যবসায়ী মো. হারুনকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। হারুন প্রয়াত বিএনপি নেতা দস্তগীর চৌধুরীর ভাই শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আলমগীর চৌধুরীর ছেলে। এছাড়া সদরঘাট থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন হারুন।

বাংলাদেশ সময়: ০২৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৭
আরডিজি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।