ঢাকা, শনিবার, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১১ মে ২০২৪, ০২ জিলকদ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

৩৪ বছর পাতে মাছ-মাংস নেই!

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৭
৩৪ বছর পাতে মাছ-মাংস নেই! ছয় বারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু

চট্টগ্রাম: ৩৪ বছর ধরে মাছ-মাংস খাননি চকবাজার ওয়ার্ডের ছয় বারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ১৯৮৩ সালের আগস্ট থেকে আমি ভেজিটেরিয়ান। মাংস, মাছ, শুঁটকি, ডিম খাই না।

অনেকে মনে করেন ভেজিটেরিয়ানদের জন্য পেঁয়াজও নিষেধ। আমি মনে করি, পেঁয়াজ প্রাণি না, সবজি।

মেজবানের শহর চট্টগ্রাম। জনপ্রতিনিধি হিসেবে সামাজিক অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দাওয়াতে যাই। কিন্তু খাই না। খুব বেশি জোর করলে ফিরনি, পায়েশ, বোরহানি, জর্দা এসব থাকলে খাই। মাছ-মাংস-ডিম-শুঁটকির ঝোল পর্যন্ত খাই না। আমার ঘরে দুই ধরনের রান্না হয়। আমার জন্য ভেজিটেবল। স্ত্রী-পুত্রসহ অন্যদের জন্য মাছ-মাংস।  

ডাল, পাঁচমিশালি সবজি দিয়ে ঘণ্ট, শাক ভাজা, হালিম ইত্যাদি রান্না করতে পারি। বাজার নিজে করি। আলু, বেগুন, পালং, ডাঁটা, পাট শাক খুব প্রিয়। ইদানীং পনির, দই, মাশরুম খাচ্ছি প্রোটিনের জন্য।

ডিম দিয়ে তৈরি কেক নিয়ে আমার ক্লারিফিকেশন আছে। ডিম দিয়ে যখন কেক তৈরি হয় তখন ডিমত্ব থাকে না। ডিমের গুণাগুণ জ্বলে যায়। শুধু ঘি, চিনি, ময়দার কার্যকারিতা থেকে যায়। তাই কেক খাই। যোগ করেন তিনি।

কেন ভেজিটেরিয়ান হলেন জানতে চাইলে বলেন, কেন এটা বড় কথা নয়। একটা কারণ তো আছেই। ১৯৮৩ সালে সৌদিআরব যাই। ১৯৮৬ সালে দেশে ফিরে আসি। সৌদি যাওয়ার পর আমি প্রথম দুমাস বাবার পছন্দমতো খেয়েছি। এরপর বাবা মদিনাতে থাকতেন। আমি ছিলাম রিয়াদে। আমি ম্যাচে থাকতাম অনেকের সঙ্গে। পালাক্রমে রান্না করতে হতো। আমার পালায় সবার জন্য মাছ-মাংস রান্না করতাম। নিজের জন্য সবজি রান্না করতাম।

ভেজিটেরিয়ান হওয়ার উপকার প্রসঙ্গে বলেন, পৃথিবীতে মানুষ তিনটি বিষয়ে কষ্ট পায়। তারা সুগার আর প্রেসার নিয়ে কষ্টের কথা বলে। আরেকটি রোগে কষ্ট পায় কম-বেশি মানুষ, কিন্তু তারা বলে না পাইলসের কথা। লজ্জায় বলে না। আমার হার্টও ভালো।

১৯৬৮ সালের কথা। তখন ছিল টেডি প্যান্টের কদর। একদিন একটি প্যান্ট সেলাই। আমারটা সেমি টেডি। না লুজ, না টাইট। নিচে ১৬ ইঞ্চি মুহুরি (গোড়ালির কাছের অংশ)। কাঁচি নিয়ে বাবা প্যান্টটির সেলাই কেটে বলে দর্জির কাছে গিয়ে আবার টেডি সেলাই করে আনতে।

সেদিন থেকে আমি খদ্দেরের পাজামা-পাঞ্জাবি পরা শুরু করি। মোটা কাপড়ের দেশি এসব পোশাকে আমি আছি। বাবার কাটা প্যান্টটি সেই যে আলমারিতে রেখেছি আর ধরিনি। সৌদি যাওয়ার সময় কাজের জন্য ছয়টি প্যান্ট-শার্ট নিয়ে যাই। তিন বছর সেগুলো পরেছি কর্মস্থলে। কিন্তু বাসায়, বার্ষিক পিকনিকে পরতাম পাজামা-পাঞ্জাবি।

কাউন্সিলর মিন্টু বলেন, আমি চট্টগ্রাম পৌরসভার প্রথম কমিশনার হই ১৯৭৭ সালে। তখন ২৫টি ওয়ার্ড ছিল। প্রতি ওয়ার্ডে দুই জন কমিশনার নির্বাচিত হতেন। শুধু আলকরণে ছিলেন তিনজন। ৮৩ সালে এরশাদ সাহেবের আমলে বাতিল করে দেওয়া হয়। এরপর ৮৮ সালে একতরফা নির্বাচন হলো। আমি যাইনি। কারণ গণতান্ত্রিক দলগুলো তখন নির্বাচন বয়কট করেছিল। এরপর ৯৪ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করি। সেই থেকে এখন পর্যন্ত আমি কাউন্সিলর।

তিনি বলেন, আমার জন্ম ১৯৫০ সালে। ৬৮ সালে এসএসসি পাস করি মানবিকে। এইচএসসি পাস করি বিজ্ঞানে। তারপর বিএসসি। যুদ্ধের সময় দেশে ছিলাম। চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের ঘাঁটিতে নানাভাবে সাহায্য করেছি। দানু ভাই, সেলিম ভাই, আজমল, লিয়াকত আলী খানদের সঙ্গে। আমার বাবা টাকা তুলে মুক্তিযোদ্ধাদের সরবরাহ করতেন।  

আবার সবজি প্রসঙ্গ। বললেন, চাষিদের উৎপাদন ব্যয়ের তুলনায় বাজারে সবজির দাম বেশি। তার ওপর নানা ধরনের হাইব্রিড বীজ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক ব্যবহার বাড়ছে। একসময় চট্টগ্রাম মেডিকেলের স্টাফ কোয়াটারের সামনে নিজে সবজি বাগান করেছিলাম। একবার সেখানে একটি গরু সবজি খেয়ে ফেলায় রাগে একটি ঘুষি মেরেছিলাম, তারপর সেটি মারা যায়।          

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৭
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।