শান্ত-শীতল আর কাচের মতো স্বচ্ছ, টলমলো পানি ভারতের মিজোরামের লুসাই পাহাড় থেকে নেমে সুদীর্ঘ ৩২০ কিলোমিটার পথ বয়ে কর্ণফুলী নদী নাম নিয়ে মিলেছে গিয়ে বঙ্গোপসাগরে। বাংলাদেশ অংশের প্রায় ১৬১ কিলোমিটার পথচলা এই নদীর দুই পাশে হাজারো বর্ণিল দৃশ্য চোখে পড়ে সকলেরই।
এই নদীকে কেন্দ্র করেই চট্টগ্রাম বন্দরসহ হাজারো স্থাপনা। নদীর বুকে হাজারো ছোট বড় মাছধরা ও পণ্যবাহী নৌকার চলাচল প্রতি মুহূর্তে।
তবে শীতের সময়ে গাঙচিলের উৎপাত মানুষদের ভালো লাগার উত্তাপ কিছুটা বাড়ায় বটে। এই মৌসুমে সাগর থেকে মাছ ধরে নৌকাগুলো নদীর তীরে ভিড়লে চারপাশে কিচির-মিছির শব্দে চারপাশ মাতিয়ে রাখে এই গাঙচিলের দল। নৌকার পেছনে পেছনে উড়ে চলে নাছোড় এই সাদা গাংচিলের দল। কর্ণফুলী নদী যেন নতুন সাজে সেজে ওঠে এই সময়ে। নৌকার মাঝি আর জেলেরাও ছোট ছোট মাছ দিয়ে তাদের করে নেয় আপন। নদীতে গা ভাসিয়ে পাখা মেলে পানির ঝাপটা ছিটিয়ে যখন গাঙচিল খেলে বেড়ায় নদীর বুকে, তখন যেনো এক নয়ানাভিরাম দৃশ্য অবলোকন করে নদীপথ ব্যবহারকারী আর পর্যটকরা। এই গাঙচিলের সঙ্গে শীতের সময় দেখা মেলে অতিথি পাখিদেরও। সুদূর সাইবেরিয়া অঞ্চলে শীতের তীব্রতা বেড়ে গেলে খাবার ও আশ্রয়ের সন্ধানে হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পেরিয়ে বিভিন্ন জাতের অতিথি (পরিযায়ী) পাখি কিছুদিন আগেও এই নদীর চরলাক্ষা, বোয়ালিয়ার চর, শিখলবাহা বিপুল সংখ্যায় ভিড় করত এই কর্ণফুলী নদীতে ও এর বিস্তীর্ণ দুই পাড়ে।
তবে শিকারিদের উৎপাত আর আর নদীর দু’পাশে গড়ে ওঠা ভারী শিল্প কারখানার কারণে, দূষণ ও বর্জ্যের অত্যাচারে নদীপথে পাখির আগমনও আগের চেয়ে কমে যাচ্ছে আজকাল। বছর পাঁচেক আগেও বিভিন্ন প্রজাতির বিপুল সংখ্যক পাখি বিভিন্ন সময়ে এই নদীতে আসতো, এই সংখ্যা এখন একেবারে নগণ্য সংখ্যায় এসে দাঁড়িয়েছে দিনে দিনে তাদের সংখ্যা আরো কমবে—যতই বাড়বে মানুষের প্রকৃতি বিরোধী হঠকারিতা।
অথচ পাখিদের জন্য কোলাহলমুক্ত, দূষণমুক্ত ‘বিহঙ্গবান্ধব’ নির্ভয় পরিবেশ নিশ্চিত করে দিতে পারলে এই কর্ণফুলী নদীই হয়ে উঠতে পারত পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। এদের শান্ত নিবিড় প্রাকৃতিক অভয়াশ্রম।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৭
জেএম