ঢাকা, শনিবার, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১১ মে ২০২৪, ০২ জিলকদ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

অতিরিক্ত মানুষের চাপেই পদদলনের ঘটনা 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৭
অতিরিক্ত মানুষের চাপেই পদদলনের ঘটনা  চট্টগ্রামের রিমা কমিউনিটি সেন্টারের মেজবানে পদদলিত হয়ে বেশ কয়েকজন হতাহত হন। ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: বন্দরনগরীর আসকার দীঘির পাড়ে রীমা কমিউনিটি সেন্টারে চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কুলখানির মেজবানে অতিরিক্ত মানুষের ভিড়ে হুড়োহুড়িতে এ পদদলনের ঘটনা ঘটে। 

পদদলিত হয়ে এখন পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়ে ১০জনের মতো ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে।

সোমবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।  

নিহতদের মধ্যে সুধীর দাস, দীপংকর রাহুল দাস, আশিস বড়ুয়া, রীবন দাস, উজ্জ্বল চৌধুরী, প্রদীপ তালুকদার, ঝন্টু দাস, কৃষ্ণপদ দাস ও লিটন দেবের নাম পাওয়া গেছে।

তাদের বয়স ৩০ থেকে ৪০ এর কোটায় বলে জানিয়েছে পুলিশ।  

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার ইকবাল বাহার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, রীমা কমিউনিটি সেন্টার থেকে ১৫ জনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। এর মধ্যে ১০জনকে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। হতাহতদের মধ্যে কোনো নারী ও শিশু ছিল না।  

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি ছিল না। পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু  অতিরিক্ত মানুষের ভিড়ের কারণে প্রধান গেট দিয়ে ঢোকার সময় অনেকে পড়ে যান। আর তখনই পদদলিত হয়ে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।  

‘এটা মারামারি কিংবা অন্য কোনো ঘটনা নয়। নিরাপত্তারও অভাব হয়নি, অতিরিক্ত মানুষের ভিড় ও ঢোকার সময় হুড়োহুড়ির কারণে অনেকে পড়ে গিয়ে পদদলিত হয়েছেন। ’

 নিহতদের পরিবারকে সান্ত্বনা দিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন নওফেল।  ছবি:বাংলানিউজ

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, ওই কমিউনিটি সেন্টারের দ্বিতল ভবনের নিচতলায় মূলত গাড়ির গ্যারেজ। বসা ও খাওয়ার ব্যবস্থা দোতলায়।  

আসকার দীঘির পাড়ের অধিকাংশ ভবনের মতো রীমা কমিউনিটি সেন্টারের প্রবেশ পথও বেশ ঢালু। সেখানে দুপর ১২টা থেকে খাওয়া দাওয়া শুরু হয়। কিন্তু দেড়টার দিকে ওই কমিউনিটি সেন্টারে মানুষের ঢল নামে। আর তখনই ভিড়ের মধ্যে হুড়োহুড়ি করে এ পদদলনের ঘটনা ঘটে।  

কমিউনিটি সেন্টারের স্বেচ্ছাসেবক ও যুবলীগ নেতা শিবু প্রসাদ বলেন, এখানে শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য মেজবানের আয়োজন করা হয়। কিন্তু অন্যান্যরাও চলে আসায় ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত মানুষ হয়ে যায়। যার কারণে চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে।  

স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন জানান, কমিউনিটি সেন্টারের ধারণ ক্ষমতা ৪ থেকে ৫ হাজার মানুষের। কিন্তু এখানে ১০ হাজার মানুষ এসেছিলেন।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের বিভাগীয় কার্যালয়ে উপ-পরিচালক জসিম উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, কমিউনিটি সেন্টারের গেটের বাইরে অনেক মানুষের ভিড় ছিল। ঢোকার সময় পেছনের মানুষেল চাপে সামনের ওই ঢালু জায়গায় থাকা বেশ কয়েকজন পড়ে যান।  

‘তখন তাদের ওপর দিয়েই পেছনের লোকজন হুড়োহুড়ি করে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। এতে অনেক মানুষ হতাহত হয়। ’

এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান মহিউদ্দিন চৌধুরীর বড় ছেলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী মহিবুল হাসান নওফেল।  

এ সময় হতাহতদের পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিয়ে তাদের পাশে থাকার কথা বলেন পিতৃ শোকে কাতর নওফেল।  

রীমা কমিউনিটি সেন্টার পরিদর্শন করে পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি ছিল না। অন্য যেসব কমিউনিটি সেন্টারে মেজবানের ব্যবস্থা হয়েছে, সেসব জায়গায় দুর্ঘটনা এড়াতে পুলিশের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।  

গত ১৪ ডিসেম্বর দিনগত রাত ৩টার দিকে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী।  

তার পরিবারের পক্ষ থেকে সোমবার এ কুলখানি আয়োজন করা হয়। এ উপলক্ষে ষোলশহরের চশমা হিলে সাবেক মেয়রের বাসভবন ছাড়াও নগরীর ১৪টি কমিউনিটি সেন্টারে মেজবানের আয়োজন করা হয়। গোমাংস যারা খান না এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদেন জন্য আয়োজন ছিল রীমা কমিউনিটি সেন্টারে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৭
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।