ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

হাসপাতালে ষাটোর্ধ্ব নারী, উধাও স্বামী-সন্তান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২১
হাসপাতালে ষাটোর্ধ্ব নারী, উধাও স্বামী-সন্তান সরস্বতী ধর।

চট্টগ্রাম: হাসপাতালের এক ওয়ার্ডে চুপচাপ শুয়ে আছেন ষাটোর্ধ্ব নারী সরস্বতী ধর। সব শয্যার পাশে রোগীর সেবা করার মানুষ থাকলেও এই নারীর পাশে নেই কেউ।

কিছু জিজ্ঞেস করলেই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন মানুষের দিকে। ৭ দিন হাসপাতালের বিছানায় পড়ে থাকলেও দেখতে আসেননি কোনও স্বজন।
 

এমন ঘটনা চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ১৮ নম্বর নিউরোমেডিসিন ওয়ার্ডে।  

বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টার পর তার সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। কেমন আছেন জিজ্ঞেস করতেই কান্নায় ভিজে এলো চোখ। কিছু না বলেও বুঝিয়ে দিলেন অনেক কিছু। তবুও অসুস্থতার কথা জিজ্ঞেস করলে মাথা নেড়ে ভালো থাকার কথা জানান দিলেন তিনি।  

আরেকটু কথা বলার চেষ্টাতে মুখ খুললেন তিনি। নাম পরিচয় জিজ্ঞেস করতেই জানান, স্থায়ী ঠিকানা আনোয়ারায় হলেও চট্টগ্রাম নগরের হালিশহর এলাকার সবুজবাগে থাকেন। আছে স্বামী ও এক সন্তান।
 
হাসপাতালের রেজিস্ট্রারে সংরক্ষিত তথ্যানুযায়ী, গত ৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে সরস্বতী ধরকে হাসপাতালে ভর্তি করান স্বামী রণজিত ধর। জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য দুটি নাম্বারও দেওয়া হয়। একটি রণজিতের এবং অন্যটি ছেলে পবনের। সেই নাম্বারের সূত্র ধরে ফোন করা হয় স্বামী রণজিতকে। তিনি খুবই অসুস্থ জানিয়ে ছেলে পবনকে ফোন করতে বলেন।  

পবনকে ফোন করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, মায়ের অসুস্থতার খবর তার জানা নেই। তিনি এখন খুলনা আছেন এবং সেখানে থেকে কিছুই করা সম্ভব নয়। তার বাবার ফোনে যোগাযোগ করার পরামর্শও দেন পবন।  

নিউরোমেডিসিন বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. পীযুষ মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, ষাটোর্ধ্ব এই নারীকে গত কয়েকদিন আগে ভর্তি করা হয়েছে। পরিবারের কোনও সদস্য হাসপাতালে আসেনি। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিজের পকেটের টাকা দিয়ে করিয়ে দিয়েছি। রোগীর অবস্থা অগের চেয়ে ভালো। যে অবস্থায় আছে, হালকা ব্যায়াম করলে শারীরিক অবস্থার আরও উন্নতি হবে।  

তিনি বলেন, হঠাৎ কারও মুখ বাঁকা হয়ে গেলে, কথা জড়িয়ে গেলে, চোখে না দেখলে অথবা এক হাত-পা অবশ হয়ে গেলে, দুর্বলতা বোধ করলে তা স্ট্রোকের লক্ষণ। অনেক সময় এ লক্ষণগুলো খুব দ্রুতই সেরে যায়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে। সিটিস্ক্যান করলে তেমন কিছু পাওয়া যায় না। সাধারণ মানুষ এটাকে ‘মাইল্ড স্ট্রোক’ বলে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এ ধরনের স্ট্রোককে ট্রান্সিয়েন্ট ইস্কেমিক অ্যাটাক (টিআইএ) বলে।

মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সরস্বতী ধরকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত কেউ নিতে আসেনি। হাসপাতালের রেজিস্ট্রারে থাকা নাম্বারগুলোতে বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েও কোনো সাড়া মিলছে না।  

ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবকরা জানান, বৃদ্ধার এমন অসুস্থতার সময়ে স্বামী-সন্তান কাছে নেই। সন্তানকে গর্ভে ধারণ করে জন্ম দেওয়ার সময় পর্যন্ত যে কষ্ট পেয়েছিলেন, এখন হয়তো সেই কষ্টই তিনি পাচ্ছেন। তার চোখের জল মুছিয়ে দেওয়ারও যে কেউ নেই।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২১
এমএম/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।