ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বিশেষ ট্রাইব্যুনালে সাম্প্রদায়িক হামলাকারীদের বিচার দাবি 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২১
বিশেষ ট্রাইব্যুনালে সাম্প্রদায়িক হামলাকারীদের বিচার দাবি  ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: সারা দেশে প্রতিমা ও পূজামণ্ডপ ভাঙচুর, মন্দিরে হামলা, ঘর-বাড়িতে অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে গণ-অনশন, গণ-অবস্থান ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

শনিবার (২৩ অক্টোবর) দেশব্যাপী বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ আয়োজিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে নগরের আন্দরকিল্লা মোড়ে ভোর ৬টা থেকে নগর ও উপজেলা হতে বিভিন্ন সনাতনী সংগঠনের সদস্যরা ব্যানার–ফেস্টুন নিয়ে মিছিলসহ সমবেত হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, দুর্গাপূজার মধ্যে দেশজুড়ে পূজামণ্ডপ ও হিন্দুদের বাড়ি-ঘরে হামলার ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারকের নেতৃত্বে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে সাম্প্রদায়িক হামলাকারীদের বিচার করতে হবে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সুষ্পষ্ট নির্দেশনার পরও প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যেসব সদস্য দায়িত্ব পালনে গাফিলতি ও অবহেলা করেছেন এবং যেসব জনপ্রতিনিধি সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের মোকাবিলায় এগিয়ে আসেননি, তাদের চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

যারা উসকানি দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। বাহাত্তরের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেওয়া প্রতিশ্রুত সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সংখ্যালঘু কমিশন গঠন দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান এই নেতা।

এসব দাবি পূরণ না হলে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রার ঘোষণাও দেন রানা দাশগুপ্ত।

অধ্যাপক রণজিৎ কুমার দে’র সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী, জাসদ নেতা ইন্দু নন্দন দে, অ্যাডভোকেট চন্দন তালুকদার, ইসকনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সম্পাদক চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারী, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি শ্যামল পালিত সহ বিভিন্ন মঠ, মন্দির পরিচালনা পরিষদের নেতারা। সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এএইচএম জিয়া উদ্দিন।

গণ-অবস্থান থেকে পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ ঘোষিত আগামী ৪ নভেম্বর শ্যামা পূজায় দীপাবলি উৎসব বর্জন ও সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৬টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে মন্দিরে অবস্থান, মন্দির-মণ্ডপ ফটকে কালো কাপড়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতাবিরোধী শ্লোগান সম্বলিত ব্যানার টাঙানোর প্রতিবাদী কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।

সমাবেশে ১১ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- শারদীয় দুর্গোৎসব চলাকালীন দেশের বিভিন্ন জেলায় মন্দির ও পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনায় নিহতদের পরিবারের একজন সদস্যকে সরকারি চাকরি, ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দান, ক্ষতিগ্রস্ত সব মন্দির, ঘরবাড়ি পুনঃনির্মাণ, গৃহহীনদের পুনর্বাসন, ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে সরকারি দলের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুত সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পন আইনের দ্রুত বাস্তবায়নসহ ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কাছে প্রদত্ত অঙ্গিকার দ্রুত বাস্তবায়ন করা।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক রণজিৎ কুমার দে বলেন, সংবিধানের চার মূলনীতি ‘হসপিটালাইজড’ হয়েছে। দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ফলে অতীতে অনেকেই দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। এরশাদ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করলেও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার সেটা বাদ দেয়নি।  দেশের সব উপজেলায় মডেল মসজিদের মতো হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের জন্য উপাসনালয় করতে হবে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন রোধে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে হবে।

ইন্দু নন্দন দত্ত বলেন, ৭৪ বছরে এই প্রথম সংখ্যালঘুরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এই ঐক্য এগিয়ে নিয়ে অধিকার আদায় করতে হবে। এই সরকারকেই সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচার করতে হবে।

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্যামল পালিত বলেন, সাম্প্রদায়িক হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আমরা প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত জিরো টলারেন্স নীতির বাস্তবায়ন চাই।

ইসকনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সম্পাদক চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারী বলেন, বিচারহীনতার কারণে সাম্প্রদায়িক ঘটনা মাথাচাড়া দিয়েছে। অতীতের সহিংসতার বিচার এখনো হয়নি। সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন ও কমিশন গঠন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

দুপুর ১২টার পর সমাবেশ শেষে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল নগরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২১
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।