ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

পরিবেশ দূষণের প্রভাব পড়ছে ভূগর্ভস্থ পানিতে

মিজানুর রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২২
পরিবেশ দূষণের প্রভাব পড়ছে ভূগর্ভস্থ পানিতে ...

চট্টগ্রাম: বলা হয়ে থাকে পানির অপর নাম জীবন। কিন্তু প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে পানি।

ভূগর্ভস্থ পানি নিরাপদ বলা হলেও এখন মিলছে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকারক উপদান। যা প্রতিনিয়ত গ্রহণের ফলে শরীরে বাড়ছে ক্যান্সার ও নন ক্যান্সারজনিত বিভিন্ন রোগের সম্ভাবনা।
 

গবেষকরা বলছেন, পরিবেশ দূষণের ফলে ভূগর্ভস্থ পানিতেও তার প্রভাব পড়ছে। যা পান করলে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।

গ্রাসরূট জার্নাল অফ ন্যাচারাল রিসোর্সেস সাময়ীকিতে প্রকাশিত ‘গ্রাউন্ড ওয়াটার পলিউশন ইন বাংলাদেশ: এ রিভিউ’ নামক জার্নালে এ তথ্য দিয়েছেন গবেষকরা। বিগত দুই দশকে বাংলাদেশের ভূগর্ভস্থ পানি নিয়ে দেশি-আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত প্রায় ১০০ গবেষণাপত্র রিভিউ করে ভূগর্ভস্থ পানি দূষণের চিত্র তুলে ধরেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন গবেষক।

গবেষণা জার্নালে দেখানো হয়, জমিতে সার-কীটনাশক ব্যবহার, সেপটিক ট্যাংক, কারখানার বর্জ্য, গৃহস্থালি বর্জ্য, ময়লার ভাগাড়, স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ও প্রাকৃতিকভাবে পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়াসহ ৯ কারণে ভূগর্ভস্থ পানির দূষণ বাড়ছে।  

এ দূষণের ফলে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা বিশেষ করে ঢাকা, গোপালগঞ্জ, রংপুর, সিলেট, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, সাতক্ষীরা এবং খুলনা এলাকার পানিতে বিভিন্ন অদ্রবণীয় ক্ষতিকারক রাসায়নিক উপাদান উপস্থিত রয়েছে। যার মধ্যে আর্সেনিক, আয়রন, ম্যাংগানিজের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি। এছাড়াও কিছু কিছু জায়গায় ট্রেস মেটাল অর্থাৎ লেড, ক্যাডমিয়াম এবং ক্রোমিয়ামের অস্তিত্বও পাওয়া গেছে।

গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও ক্যামিকৌশল বিভাগের শিক্ষক ড. সুমন গাঙ্গুলী বাংলানিউজকে বলেন, দেশের ভূগর্ভস্থ পানি নিয়ে গবেষকরা আলাদাভাবে বিভিন্ন এলাকা নিয়ে গবেষণা করেছেন। কিন্তু সামগ্রিকভাবে কেউ গবেষণা করেননি। আমরা চেষ্টা করেছি দেশের সব এলাকার ভূগর্ভস্থ পানির অবস্থা দেখতে। তাই দেশিয়-আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত ১০০টি জার্নাল রিভিউ করে দেশের সামগ্রিক পানির অবস্থা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

তিনি বলেন, দেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ এবং শিল্প এলাকাগুলোর পানিতে বিভিন্ন ক্ষতিকারক উপদান পাওয়া গেছে। তবে আশার বিষয় হলো, চট্টগ্রামের ভূগর্ভস্থ পানি এখনও অনেকটা নিরাপদ।  

এই গবেষক জানান, আমাদের দেশ মূলত কৃষি নির্ভর। ফসলের মাঠে প্রতিনিয়ত কীটনাশক ব্যবহার করছি। কিন্তু গবেষণা জার্নাল রিভিউ করে একটি বিষয় লক্ষ্য করেছি, কীটনাশক ব্যবহারে ভূগর্ভস্থ পানি দূষণ ও মাইক্রোবিয়াল কন্টামিনেশন নিয়েও বিশদ কোনও গবেষণা হয়নি। এ দুটি বিষয় নিয়ে আরও গবেষণার সুযোগ রয়েছে।  

‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও ভবিষ্যতের জন্য হলেও সরকার এবং সংশ্লিষ্টদের ভূগর্ভস্থ পানি রক্ষায় উদ্যোগী হতে হবে। সুপেয় পানির এই উৎস রক্ষা করতে না পারলে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে’ বলেন তিনি।  

গবেষণায় সহযোগী ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও ক্যামিকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. নজরুল ইসলাম, ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যার সহযোগী অধ্যাপক ড. শাহিদুল ইসলাম, বায়োম্যাটেরিয়ালস রিসার্চ ল্যাবের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো মো. আকতার রিফাত, এমএস শিক্ষার্থী দিপ্ত দাস।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২২
এমআর/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।