ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ মে ২০২৪, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চেক নিতে এসে ডুকরে কাঁদছিলেন তারা!

সৈয়দ বাইজিদ ইমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৩ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২২
চেক নিতে এসে ডুকরে কাঁদছিলেন তারা! ...

চট্টগ্রাম: রিশা মনি। পাঁচ মাস আগে বিয়ে হয় ফায়ার ফাইটার ফরিদুজ্জামানের সঙ্গে।

সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিখোঁজ ফরিদুজ্জামান। বাড়ি রংপুরের মিঠাপুকুর থানা এলাকায়।
শ্বশুরের সঙ্গে ক্ষতিপূরণের চেক নিতে এসেছিলেন রিশা মনি। চেক নিতে এসে ডুকরে কাঁদছিলেন তিনি।  

সোমবার (২০ জুন) সকাল ১১টায় নগরের সার্কিট হাউসে সম্মেলন কক্ষে ঢুকতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। কোনভাবেই যেন তাকে থামানো যাচ্ছে না। শুধু কাঁদছেন। বলছিলেন, ‘দেখা হবে বলে আর দেখা হলো না। এভাবে কোনদিনের জন্য দেখা না দিয়ে চলে গেলা। তুমি ছাড়া এ টাকা দিয়ে আমার কি হবে? আমি কি নিয়ে বাঁচবো’।  

রিশা মনির সঙ্গে এসেছেন শ্বশুর সাইফুল ইসলাম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ছেলে প্রতিদিন রাত সাড়ে আটটার দিকে আমাদের সঙ্গে কথা বলে। ঘটনার দিন সে ফোন দেয়নি। আমি ফোন করেছি। কিন্তু ধরেছে আরেকজন। সে বললো, ‘কাজে বেরিয়েছে আধা ঘন্টা পর ফোন দিয়েন’। আধা ঘন্টা পরে ফোন দিয়েছি। কিন্তু আমার ছেলের সঙ্গে কথা বলতে পারিনি। পরের দিন জানলাম অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। এরপর চট্টগ্রাম এসেছি। এখনো কোন খোঁজ পাইনি ছেলের। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে ডিএনএ দিয়েছি। তারা বলছে, একমাস লাগবে। অপেক্ষায় আছি।

তিনিও কথার একপর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, পাঁচ মাস হলো ছেলের বিয়ে হয়েছে। কাজের কারণে বেশিদিন বাড়িতে থাকতে পারেনি। একমাত্র ছেলে আমার। একটা মেয়ে আছে, সেও প্রতিবন্ধী। কি করবো কিছু বুঝতে পারছি না। ছেলের কখন খোঁজ মিলবে তার কোনও ঠিক নেই। তার মা ছেলের শোকে কাতর হয়ে বিছানায় শয্যায়।

শুধু রিশা মনিই নয়, অনুষ্ঠান শুরু পর প্রথম সান্ত্বনামূলক বক্তব্য দিচ্ছিলেন ডিপোর মালিক শফিকুর রহমান। অন্যদিকে হু হু করে কেঁদে উঠেছেন অনেকেই। সঙ্গে কেঁদেছেন মালিক শফিকুর রহমানও। অনেক কষ্টে যারা কাঁদছেন তাদের কেউ সন্তান হারিয়েছেন, কেউ হারিয়েছেন স্বামী। আবার কেউ বাবাকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ।  

তাসলিমা সুলতানা। নিহত ফায়ার ফাইটার আলাউদ্দিনের স্ত্রী। অনুষ্ঠানস্থলের মানুষ দেখেই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তার ৫ বছরের এক শিশু সন্তান। তাকে নিয়ে চিন্তায় দিন কাটছে। তাসলিমার সঙ্গে আসা তার ভাই চট্টগ্রাম বিশ্বিবদ্যালয় শিক্ষার্থী মুকুল বাংলানিউজকে বলেন, আপুকে কোনভাবেই সান্ত্বনা দিয়ে রাখা যাচ্ছে না। কখনো হুঁশ আবার কখনো বেহুঁশ। এভাবেই দিন কাটছে তার।

কুমিল্লার নাঙ্গলকোট থেকে এসেছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা মনিরুজ্জামানের স্ত্রী মাহমুদা আখতার। তার ৭ মাসের বাচ্চা। একদিকে বাচ্চা শিশুটিকে সামলাচ্ছেন অন্যদিকে চোখের পানি নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত। তবুও চোখ ভিজে যাচ্ছে বারবার।

বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতদের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে মোট ৬৯ জনকে চেক দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নিহত ২৪ জন। নিখোঁজ ৩ জন। মোট ২৬ জন। ফায়ার সার্ভিসের মোট ৩০ জন হতাহতের মধ্যে ১০ জন নিহত, ৩ জন নিখোঁজ। তাদেরকে ১৫ লাখ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। বিএম কনটেইনার ডিপোতে কর্মরত ছিল এমন নিহত ৯ জন। অন্যান্য ৪ জন। নিহতদের ১০ লাখ করে এবং যারা আহত হয়েছেন তাদের স্তরভেদে ৬ ও ৪ লাখ করে দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২২
বিই/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।