ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ মে ২০২৪, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

মেরামত শেষে যাত্রা শুরু করলো ‘এমভি হাইয়ান সিটি’

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১০ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০২২
মেরামত শেষে যাত্রা শুরু করলো ‘এমভি হাইয়ান সিটি’ মেরামত শেষে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো এমভি হাইয়ান সিটি।

চট্টগ্রাম: বন্দরের বহির্নোঙরে আরেকটি জাহাজের সঙ্গে সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত ১৭২ মিটার লম্বা ১১৫৬টি রফতানির কনটেইনার বোঝাই এমভি হাইয়ান সিটি জাহাজটি মেরামতের পর পুনরায় সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছে। প্রায় দুই মাস পর জাহাজটি রওনা হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের মধ্যে স্বস্তি নেমে এসেছে।

 

মঙ্গলবার (২১ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বন্দরের শক্তিশালী টাগবোট কাণ্ডারী ১ এবং কাণ্ডারী ৬ এর সহায়তায় জাহাজটি কর্ণফুলী নদীর বন্দর চ্যানেল অতিক্রম করে। এ সময় নিয়ম অনুযায়ী জাহাজটির নেতৃত্বে ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দরের অভিজ্ঞ পাইলট আবু সাইদ মো. কামরুল আলম।

বেলা দেড়টার দিকে তিনি বহির্নোঙরে পৌঁছে জাহাজের নিজস্ব পাইলটের কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন।  

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বাংলানিউজকে বলেন, একটি বড় জাহাজ বহির্নোঙরে মারাত্মক দুর্ঘটনার পর টো করে এনে মেরামতের পর পুনরায় বিদেশ পাঠানো নিঃসন্দেহে আমাদের সক্ষমতার প্রমাণ। এ কাজে সরকারি, বেসরকারি অনেক সংস্থা, প্রতিষ্ঠান আমাদের সহযোগিতা করেছে। সবার প্রতি আমরা ধন্যবাদ জানাই। আমাদের এ সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও সাফল্যে মেরিটাইম ওয়ার্ল্ডে বাংলাদেশের সুনাম বাড়বে।  

সূত্র জানায়, গত ১৪ এপ্রিল বন্দর ত্যাগ করার সময় কুতুবদিয়ার কাছে এমটি ওরিয়ন এক্সপ্রেস জাহাজের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছিল জাহাজটির। এ সময় হাইয়ান সিটির পোর্ট সাইডে কার্গো হোল্ডে ছিদ্র হয়ে পানি ঢুকে ৭ ডিগ্রি কাত হয়ে যায়। পানি ঢোকায় ড্রাফট বেড়ে ১০ দশমিক ৭ মিটারে দাঁড়ায়। উপক্রম হয় ডুবে যাওয়ার। বিশেষ উদ্যোগে জাহাজটি কুতুবদিয়া এলাকায় নোঙর করা হয়। বুধবার (৪ মে) বন্দরের টাগ কাণ্ডারী ১, ৬, ১০, ১১, লুসাই, জরিপ-১১, বর্ষণ, প্রান্তিক সরোয়ার, মুরিং বোট সন্দ্বীপের সহযোগিতায় জাহাজটি নিরাপদে বার্থিং করানো হয় বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি সংলগ্ন কর্ণফুলী ড্রাইডক জেটিতে। এর আগে কর্ণফুলী ড্রাইডক জেটিতে কনটেইনার খালাসের কাস্টম পারমিট নেওয়া হয়। জেটির ফোরশোরে ১০ দশমিক ৭ মিটার ড্রাফটের উপযোগী ড্রেজিং করানো হয়।

বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, ২০০ কোটি টাকা দামের হাইয়ান সিটি জাহাজটিতে রফতানি কনটেইনারগুলোর মূল্য প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। জাহাজটি উদ্ধার, মেরামত করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দরের সাহসী ও সঠিক সিদ্ধান্তের কারণে ৮০০ কোটি টাকার রফতানি পণ্য যেমন রক্ষা পেয়েছে তেমনি জাহাজটি ডুবে গেলে বড় আর্থিক লোকসান ছাড়াও মেরিটাইম ওয়ার্ল্ডে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হতো। স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন তৈরি পোশাক রফতানিকারকরা।

চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিহাসে প্রথম জিসিবি, সিসিটি ও এনসিটির বাইরে জোয়ার-ভাটা নির্ভর কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে একটি বেসরকারি জেটিতে কনটেইনার আনলোড করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে বন্দরের ১টি ১৬ টন ক্ষমতাসম্পন্ন ফর্ক লিফট, ৮টি স্প্রেডার, ৪টি ট্রেইলার, বার্থ অপারেটরের লজিস্টিকস সাপোর্টসহ যন্ত্রপাতির বহর ওই জেটিতে পাঠানো হয়েছিল।  

জাহাজটি মেরামতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ গোলাম সরওয়ার। ১৯৯৮ সালের জাহাজের প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে অবসর নিয়ে যিনি ‘প্রান্তিক’ নামে একটি নৌ-প্রকৌশল ও নৌযান উদ্ধারকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।  

জাহাজটি মেরামতের সময় পরিদর্শন করেছিলেন কবি আলম খোরশেদ। এরপরি তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন- জাহাজটি নোঙরের পর জনা ত্রিশেক ডুবুরিকে দিয়ে জাহাজের তলদেশে প্রায় দেড় হাজার বর্গফুট আয়তনের একটি পুরু লোহার পাত জোড়া লাগিয়ে জাহাজের মূল ক্ষতস্থানটি ঢেকে দেওয়ার উদ্যেগ নেন। এই ডুবুরিদলের সামগ্রিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে ছিলেন দেশের প্রবীণতম আন্ডারওয়াটার ডাইভার, একানব্বই বছর বয়সী মো. আবদুল হালিম। জনাব সরওয়ার নিজেও একজন দক্ষ ডাইভার এবং এই  জলের তলার মেরামত যজ্ঞে অংশ নিতে তাঁকেও কয়েকবার জলে নামতে হয়েছিল। এর পাশাপাশি মূল জাহাজের দানবাকৃতি ক্রেনের মাধ্যমে তাঁরা জাহাজের খোলের ভেতর থেকে কনটেইনারগুলোকেও দ্রুত বার করে আনার কাজও চলমান রেখেছেন।

কনটেইনার সরানোর এই কাজ শেষ হলেই তাঁরা পাম্পের মাধ্যমে খোলের মধ্যকার জমা পানিটুকু সেঁচে, জাহাজর ভেতরদিক থেকে ওই ক্ষত বরাবর আরেকখানি লোহার পাত ওয়েল্ডিং করে লাগিয়ে দিলেই আশা করা যাচ্ছে জাহাজটি ফের চলাচলের উপযোগী হয়ে উঠবে। সন্দেহ নেই এটি বাংলাদেশের নৌ-প্রকৌশলের ইতিহাসে সত্যিকার অর্থেই একটি দৃষ্টান্তমূলক, প্রেরণাদায়ক এবং গর্ব করার মতো অর্জন হিসেবে চিহ্নিত হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০২২
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।