ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রামের রেললাইনে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে

সৈয়দ বাইজিদ ইমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২২
চট্টগ্রামের রেললাইনে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম: ২৯ জুলাই থেকে ১৪ আগস্ট। ১৬ দিনে চট্টগ্রামে ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ১৭ জন।

আহতের সংখ্যাও কম নয়। কোনো দিন ট্রেনে কাটা পড়ে আবার কোনদিন ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছে মানুষ।
এভাবেই বাড়ছে ট্রেন দুর্ঘটনা।  

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ট্রেন দুর্ঘটনার জন্য ৬টি কারণ চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে আছে- অবহেলা ও অসচেতনতা, ঝুঁকিপূর্ণ রেললাইন ও সেতু, লোকবল সংকট, মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন কোচ, তদারকির অভাব, লাফালাফি করে বগিতে ওঠার চেষ্টা।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, ট্রেন দুর্ঘটনার পর একাধিক তদন্ত কমিটি করার কথা শোনা যায়, কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদন এবং এর প্রেক্ষিতে দায়ীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে- তা অনেকটাই গোপন থাকে। তদন্ত কমিটিগুলো এমনভাবে গঠন করা হয়, যাতে এই কমিটিতে যারা থাকে তারা তদন্তে একেবারে নিচের পর্যায়ের ব্যক্তিদের দোষী সাব্যস্ত করতে পারেন।

ট্রেনে যত দুর্ঘটনা ঘটছে তার জন্য পথচারীদের অসচেতনতাই বড় কারণ। সাম্প্রতিক সময়ে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যুর ঘটনা পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, অধিকাংশই ঘটেছে রেললাইন পারাপারের সময় অসচেতনতার কারণে। অবহেলায় ট্রেনে কাটা পড়ে লোকের মৃত্যুও বাড়ছে। ট্রেন আসার সময়েই রেললাইন পার হতে চায় মানুষ। সামান্য অবহেলার কারণে মৃত্যুঝুঁকিতে পড়তে হয়। কানে হেডফোন লাগিয়ে, মোবাইলে কথা বলা অবস্থায় এবং বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে গিয়েও প্রাণ দিতে হচ্ছে।

গত ১৬ দিনে শুধু চট্টগ্রামেই নিহত হয়েছেন ১৭ জন। সর্বশেষ গত বুধবার চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড এলাকায় রেললাইন পার হওয়ার সময় ইঞ্জিনের সঙ্গে কাপড় আটকে মোস্তফা কামাল নামের এক যুবক নিহত হন। গত ৯ আগস্ট সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট এলাকায় রাত ৮টার দিকে রেললাইনে বসে গিটার বাজিয়ে গান করার সময় চট্টগ্রামমুখী কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় নিহত হন ওমর ফারুক নামের এক যুবক। একই দিন বেলা ১টার দিকে চট্টগ্রাম-নাজিরহাট রেললাইনের হাটহাজারীর আলীপুর এলাকায় তেলবাহী ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে মো. শাহাদাত নামের এক মাদ্রাসাছাত্রের মৃত্যু হয়।  

গত ২৯ জুলাই শুক্রবার চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে ট্রেনের ধাক্কায় পর্যটকবাহী মাইক্রোবাসের ১১ যাত্রী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন আরও পাঁচজন। তাদের মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাসফির ও আয়াত নামের দুইজনের মৃত্যু হয়। একই দিন পাহাড়তলী পুলিশ বিট রেলগেটে মহানগর প্রভাতী ট্রেনে কাটা পড়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়।

এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর নগরের খুলশী থানাধীন ঝাউতলা এলাকায় ঠিক ট্রেন আসার আগ মুহূর্তে সিগন্যাল অমান্য করে রেলক্রসিং পার হতে গিয়ে বাস সিএনজি ডেমু ট্রেনের ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনায় ট্রাফিক পুলিশ সদস্য মো. মনির হোসেন, প্রকৌশলী সৈয়দ বাহাউদ্দিন আহমেদ ও এসএইচসি পরীক্ষার্থী সাতরাজ শাহীন নিহত হন।

গত ৬ ডিসেম্বর নগরের কদমতলী রেল গেটে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা ১৪০ নাম্বার শাটল ট্রেনের সঙ্গে সিএনজি অটোরিকশার ধাক্কা লেগে সিএনজি অটোরিকশাটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। চালক আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান।

রেললাইনের দুই পাশে ১০ ফুট করে ২০ ফুট এলাকায় হরহামেশাই ১৪৪ ধারা জারি থাকে। বাংলাদেশ রেলওয়ে আইনানুযায়ী এ সীমানার ভেতর কাউকে পাওয়া গেলে তাকে আইনের ১০১ ধারায় গ্রেফতার করা যায়। এমনকি এই সীমানার ভেতরে গবাদিপশু চরলে আটক করে তা বিক্রি করে সেই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা দেওয়ার বিধানও রয়েছে। এ আইন প্রতিনিয়তই ভঙ্গ করছেন পথচারীরা। এতকিছুর পরেও কোনো আইনই তোয়াক্কা করছেন তারা। তাই প্রতিনিয়নতই ঘটছে এসব মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।

রেললাইনে সব সময় ১৪৪ ধারা জারি থাকে। অথচ রেল লাইনে বাজার, বস্তি, মানুষের  আড্ডা, চলাচল। ফলে প্রতিদিনই মানুষ ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যাচ্ছে৷ রেল লাইনে ১৪৪ ধারা জারি  সেটা বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালানো হোক এবং ১৪৪ ধারা প্রয়োগ করা হোক, নাহলে ১৪৪ ধারা বাতিল করে দেওয়া হোক। এভাবে ১৪৪ ধারাকে অপমানিত করার কোন মানে হয় না। নিরাপদ ট্রেন চলাচলের পরিবেশ তৈরি করা হোক।

পুস্তক বা নথিতেই আইন সীমাবদ্ধ থ‍াকা ও তার ন্যূনতম প্রয়োগও না থাকায় রেললাইনে বসে গল্প করা ও রেললাইন ধরে হেঁটে চলাচল করা খুব স্বাভাবিক চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রেলওয়ে পূ্র্বাঞ্চালের এক কর্মকর্তা জানায়, ১৮৬১ সালের ৫ নম্বর আইনের ১২ নম্বর ধারা মোতাবেক রেললাইনের দুপাশে ১০ ফুট করে এলাকার মধ্যে রেলের কর্মী ছাড়া সাধারণ মানুষ কিংবা গবাদিপশুর প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ওই এলাকায় সব সময়ই ১৪৪ ধারা জারি থাকে। ওই সীমানার ভেতর কাউকে পাওয়া গেলে আইনের ১০১ ধারায় যে কাউকে গ্রেফতার করা যায়। কিন্তু উল্টো ঝামেলায় পড়ার আশঙ্কাতেই রেলওয়ে পুলিশ এ আইনের প্রয়োগ করে না।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, রেল দুর্ঘটনা এড়াতে সচেতনতার বিকল্প নেই। রেললাইন পারাপারের সময় মোবাইলে কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে।  গাড়ি নিয়ে পার হওয়ার সময় সাবধানে ও নিয়ম মেনে পার হতে হবে।  

চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, জনগণকে সতর্ক করতে আমরা চেষ্টা করেই যাচ্ছি। জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সভা-সমাবেশ করছি। মসজিদ, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বস্তির লোনজনসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আমরা রেলওয়ের আইন ও শাস্তি সম্পর্কে অবহিত করছি। তাদের সচেতন করছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২২
বিই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।