ঢাকা, শুক্রবার, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২৭ জিলহজ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বকুল হত্যার ২৫ বছর, বিচার চান সহপাঠীরা

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২২
বকুল হত্যার ২৫ বছর, বিচার চান সহপাঠীরা ...

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: ১৯৯৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) একটি কটেজে হত্যা করা হয় চবির ৩১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী গণিত বিভাগের ছাত্র আমিনুল হক বকুলকে। ২৫ বছর আগের এ ঘটনার বিচার চান বকুলের সহপাঠীরা।

সোমবার (২৯ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টায় চবি সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে শহীদ বকুল স্মৃতি সংসদ।

এসময় উপস্থিত ছিলেন শহীদ বকুল সৃতি সংসদের সদস্য ও চবির হিসাববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী আরশাদ চৌধুরী, বোটানি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাপস কুমার ভৌমিক ও সদস্য আব্দুর রহিম।

 

শহীদ বকুল সৃতি সংসদের সভাপতি মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, শহীদ বকুল এই সবুজ ক্যাম্পাসে সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী প্রতিরোধ আন্দোলনে সাহসের প্রতীক। ১৯৯৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর বিকাল সাড়ে ৫টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রেল স্টেশনের পাশে একটি কটেজে ঘুমন্ত অবস্থায় চবির ৩১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী গণিত বিভাগের ছাত্র আমিনুল হক বকুলকে নৃশংসভাবে হত্যা করে সে সময় ক্যাম্পাসে বেপরোয়া হয়ে ওঠা জামায়াত-শিবিরের খুনিরা। এ খুনের মাধ্যমে তারা ওই সময় ক্যাম্পাসে শিবিরের একচ্ছত্র আধিপত্য ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা প্রতিরোধ আন্দোলন থামিয়ে দিতে চেয়েছিল।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও এভাবে দীর্ঘ সময় ধরে হত্যা, খুন এবং আতঙ্ক তৈরির মাধ্যমে পুরো ক্যাম্পাসকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল তারা। বকুল হত্যার মাধ্যমেও তারা এমন ভয় পুরো ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে দিয়ে তাদের আধিপত্য ধরে রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের এমন হিসাব উল্টে গেল সে সময়ে এ ক্যাম্পাসের কিছু সাহসী ও নিবেদিত প্রাণের দীপ্ত পদচারণায়। বকুলের বন্ধুরা সংগঠিত হলো ‘শহীদ বকুল স্মৃতি সংসদ’ গঠনের মাধ্যমে।  

দল-মত নির্বিশেষে একত্রিত হলো সবাই। সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী ছাত্র ঐক্য গড়ে উঠলো। তীব্র প্রতিবাদ আর প্রতিরোধ। দীর্ঘদিনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে অনাচারের বিরুদ্ধে সংগঠিত হলো ছাত্ররা। দিনে দিনে প্রবল হয়ে ওঠা এ প্রতিরোধ আন্দোলনে শরিক হতে লাগলো সাধারণ ছাত্র-শিক্ষক কর্মচারীসহ আপামর ছাত্র-জনতা। এমন প্রবল আন্দোলনে পিছু হটতে বাধ্য হয় প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী। তাদের দীর্ঘদিনের আধিপত্য খর্ব হলো আরও অনেক তাজা প্রাণের রক্তের বিনিময়ে।

এটা ছিল তখনকার চবি ক্যাম্পাসের মুক্তিযুদ্ধ। আর আমিনুল হক বকুল- সে মুক্তি সংগ্রামের অন্যতম আত্মত্যাগী প্রাণ, যার প্রাণের বিনিময়ে দাবানল জ্বলে উঠেছিল পুরো ক্যাম্পাসে। বকুলের বন্ধুদের প্রতিরোধ ও দীপ্ত শপথের মাধ্যমে বকুল হয়ে ওঠে সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী সে সময়ের এ প্রতিরোধ আন্দোলনের দূরন্ত সাহসের প্রতীক।

বকুলের নৃশংস হত্যার ২৫ বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে আগামী ৩ সেপ্টেম্বর। অথচ অত্যন্ত কষ্টের বিষয়, এ দীর্ঘ ২৫ বছরেও বকুল হত্যার বিচার হয়নি। বকুলের বৃদ্ধ বাবা-মা, চার ভাই ও দুই বোনের সংসারের সবাই এখনো প্রতীক্ষায় আছে নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দেখবে বলে। দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হলেও এমন নির্মম, পৈশাচিক ও আলোচিত হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, রাষ্ট্রীয় প্রশাসন তথা পুরো সমাজের জন্য অত্যন্ত লজ্জার। সর্বোপরি, বিচারহীনতার এমন সংস্কৃতি আইনের শাসনের পথে বড় অন্তরায় বলে আমরা মনে করি।

তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বুয়েট, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এরকম ছাত্র হত্যাকাণ্ডের দ্রুততম সময়ে বিচারের রায় হওয়ায় বকুলের পরিবার, স্বজন-বন্ধুরা নতুন করে আশান্বিত হয়েছে বকুল হত্যাকাণ্ডের বিচারের বিষয়ে। তাই আমরা এ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অবিলম্বে শহীদ আমিনুল হক বকুল হত্যার বিচার নিশ্চিত করার জোর দাবী জানাচ্ছি। একইসঙ্গে শহীদ আমিনুল হক বকুলের ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে ‘শহীদ বকুল স্মৃতি সংসদ’র আগামী ০২ ও ০৩ সেপ্টেম্বর দুই দিনব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিয়েছি আমরা।

০২ সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টায় চবির রেল স্টেশন মসজিদ মিলাদ মাহফিল। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় চবি জিরো পয়েন্ট থেকে মৌন মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি। ০৩ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টায় নগরের কাজীর দেউড়ীতে স্মরণসভা করবে শহীদ বকুল স্মৃতি সংসদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২২
এমএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।