ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ মে ২০২৪, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ক্লাসেও শিক্ষকেরা ছাত্রদের কাছ থেকে শিখেন: ড. পবিত্র সরকার 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০২২
ক্লাসেও শিক্ষকেরা ছাত্রদের কাছ থেকে শিখেন: ড. পবিত্র সরকার  ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: রবীন্দ্র ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. পবিত্র সরকার বলেছেন, ক্লাসঘরের মধ্যেও আমরা শিক্ষকেরা ছাত্রদের কাছ থেকে কিছু শিখি। অনেকে প্রশ্ন করে আমাদের শেখায় বা শিক্ষাকে নির্দিষ্ট ও মার্জিত করে।

অনেকে আমার অজ্ঞাত কোনও খবর বা তথ্য দিয়ে, অনেকে অন্য একটা দৃষ্টিভঙ্গি এনে। আমি তো আমার ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে এভাবে কত শিখেছি।
শুধু নিজের বিষয়ে নয়, অন্যান্য নানা বিষয়েও।  

রোববার (৩০ অক্টোবর) সকাল ১০টায় নগরের টাইগারপাসে নেভি কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয়  সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

সমাবর্তন বক্তার বক্তব্যে প্রফেসর ড. পবিত্র সরকার বলেন, ছাত্র আর শিক্ষক, এই দুটি শ্রেণি সম্পূর্ণ ভিন্ন ও বিপরীত সম্প্রদায় বলে আমি স্বীকার করি না। হ্যাঁ, সময় আর বয়স, শিক্ষাব্যবস্থায় অবস্থান, কাজ ও সামাজিক বা গোষ্ঠীগত পরিচয়ে কোনও একটা সময়ে কেউ ছাত্র বা ছাত্রী এবং ওই একই প্রতিবেশে ও পরিচয়ে কেউ শিক্ষক বা শিক্ষিকা। এ ধরনের ভূমিকা ও পরিচয় ভাগ করে দিলে সমাজের সুবিধে হয়। এই প্রাথমিক পরিচাগুলো আমাদের সম্পর্ক আর কর্তব্য নির্ধারণ করে দেয়। ছাত্র শিক্ষকের কাছে শিক্ষাগ্রহণ করে, শিক্ষক শিক্ষা দান করেন। এক পক্ষ হল গ্রহীতা, আর এক পক্ষ হল দাতা।

তিনি বলেন, যদি একটা নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে চলে যাই আমরা, তখন এই পরিচয়টা একেবারে মুছে যায় না, সে কথা সত্য। এক পক্ষের শ্রদ্ধাভক্তি আর আর এক পক্ষের স্নেহের নানা রকম প্রকাশে, আচরণে আর বাচনভঙ্গিতে সেটা প্রকাশিত হয়, প্রণাম, কদমবুচি, মাথায় হাত ইত্যাদি থেকে দূর থেকে অপরিচিত মানুষও বুঝতে পারে যে, একজন গুরু আর একজন শিষ্য।

পবিত্র সরকার বলেন, তিনটি সাধারণ ধারণা আছে মানুষের- দেশ, কাল, পাত্র। কোনও দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় সাধারণভাবে কাল ঠিক করে দেয় যে, পাত্ররা কে ছাত্র, কে শিক্ষক। সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুয়ের আলাদা ভূমিকা থাকে। ছাত্ররা ক্লাসঘরে শিক্ষকের কাছ থেকে জ্ঞান ও দক্ষতার শিক্ষা গ্রহণ করে। তাদের জানা ও বোঝার উৎস আরও আছে, একটা যেমন পাঠ্য বই, যা প্রতিষ্ঠান তাদের জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়। শিক্ষকেরা ছাত্রদের কাছে আরও বেশি বোধগম্য করে দেন, প্রয়োজনে দোভাষীর কাজ করেন। পাঠকে আরও বিশদ করে দেন শিক্ষকেরা এবং তার বিষয়কে ছাত্রের মস্তিষ্কের স্মৃতিকোষে সঞ্চয় করতে সাহায্য করেন। ছাত্র নিজের সহায়ক নানা বই পড়ে তার অধীত জ্ঞানের ভিত্তিকে পোক্ত করতে এগিয়ে যায়। পরে শিক্ষকেরা ছাত্র কতটা শিক্ষা পেল তার পরীক্ষা নেন এবং ছাত্রের সাফল্য বা ব্যর্থতাকে চিহ্নিত করেন।  

তিনি বলেন, আমি ভাষাবিজ্ঞানে সামান্য পড়াশোনা করেছি, আমি জানি যে শিশু যখন তার সাত মাসের শরীরে মায়ের পেটে অবস্থান করছে, সে তখনই মায়ের গলার স্বর অন্যদের গলার স্বর থেকে আলাদা করতে পারছে। সেটা হয়তো তার প্রথম শিক্ষা। জন্মের পর থেকে তার তুমুল শিক্ষা শুরু হয়ে যায়। এক হল সামাজিক শারীরিক শিক্ষা, মাকে সে সকলের থেকে আলাদা করে চেনে, সেই সঙ্গে অন্যদেরও আলাদা করে। তারপর আঠারো সপ্তাহ থেকে শুরু হয় তার ভাষা শিক্ষা, সে আর এক কঠিন সাধনা। কিন্তু কী আশ্চর্য ঘটনা-তিন সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সে অনর্গল বলতে শুরু করে সেই ভাষা, দশ বছরে তার ব্যাকরণ পুরো আয়ত্ত করে ফেলে। তারপর বাড়িতে শিখি, মা আমাদের প্রথম শিক্ষক। তখন চারপাশে প্রচুর শিক্ষক জুটে যায়, তাঁরা আমাদের স্কুলে কলেজে-বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজ-নির্দিষ্ট শিক্ষকদের কাছে পৌঁছে দেন। সেই শিক্ষকেরা আমাদের পরীক্ষার সমুদ্র পার করে দেন। তারপর এই সমাবর্তন আসে। সমাবর্তনের পর আবার আমরা পৃথিবীর খোলা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হয়ে যাই। এখানে পাঠ্যবই নেই, রেফারেন্স বই নেই, আছে এক বিশাল ক্লাসঘর, আর অজস্র পরীক্ষা। আমি আশা করব, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার মতো জীবনের সব পরীক্ষায় তোমরা সহজে পাস করে যাও, তোমাদের অভিভাবক আর শিক্ষকদের মুখ উজ্জ্বল করো। নিজের কাজে সাফল্য অর্জন করে সমাজকে সমৃদ্ধ করো।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০২২ 
বিই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।